statcounter

Tuesday, May 31, 2016

মাসিমা ব্যস্ত আছি

মাঝে মাঝে ই এটা বলতে ইচ্ছে করে। 

বাসে উঠলাম, জানলার ধারের দুর্লভ সিট ও পেলাম।এখন কাজ  কি কম---- জানলা দিয়ে রোজকার সেম রাস্তাঘাট দ্যাখা, হোর্ডিং পড়া--- বিজ্ঞাপনে নায়ক নায়িকার মুখের ছবি , গয়নার অ্যাডে চাকতির সাইজের হারের ডিজাইন দেখে রাখা--- তা ছাড়া ফুচকার দোকান, রোল কর্নার আরো বিভিন্ন খাবারের দোকান--- তাতে লোকের ভীড় এসব ও দর্শনীয়। এইসব করতে করতে বোর হয়ে গেলে ব্যাগের মধ্যে গল্পের বই আছে, সেটা পড়া যায়। তাতে ও খুশি না হলে, বাসের অন্যানরা কি বলছে, কার নিন্দা করছে--- গরমেন্টের নাকি সিপিয়েমের ৩৪ বছরের, নাকি নিজের বসের কিংবা বসের বৌয়ের, তা শোনো। মাঝে মাঝে ফোনে ঝগড়া করে কেউ কেউ, সেটা তো ভীষণ ইন্টারেস্টিং।  আর এই সব কিছুতে যদি মন না থাকে---- মাথা প্রচন্ড ভার কিংবা ভীষণ হাল্কা তাই কিছুই ঢুকবেনা কন্ডিশন তখন জানলা দিয়ে ব্ল্যাঙ্কলি বাইরে চেয়ে থাকো, দিব্যি আরাম।

কিন্ত ু সবার কি সব সুখ সহ্য হয় !! পাশে এসে বসলেন মধ্যবয়স্কা এক মাসিমা। মাত্র মিনিট পাঁচেক আগে এক জনের বাজারের থলি থেকে জ্যান্ত হাঁস বেড়িয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল, বাস সুদ্দ হৈ হৈ, হাঁসের মালকিন স্মার্ট মহিলা--হাঁসকে পাকড়াও করে এমন ভাবে ব্যাগে পুড়লেন তাতে বোঝা গেল রীতিমত এক্সপিরিয়েন্সয়ালা। বানিয়ে বলছি না, সত্যি নিজের চোখে দেখা কান্ড। এই সব দেখে মন ভাল হয়ে যেতে হ্যারি পটার খানা ব্যাগ থেকে বের করেছি, অমনি পাশে মাসিমার আসন গ্রহন। আগে সহযাত্রী লেখায় বলেছি আমার গোবেচারা মুখের প্রস অ্যান্ড কনস। এবার ও সেরকম কিছু হল হয়ত।

মাসিমা একা ছিলেন না, আরেক মাসিমা ছিল। তার সঙ্গে উচ্চস্বরে বাক্যলাপ চালিয়ে যখন বোরড হয়ে গেলেন আমার দিকে নজর পড়লো মাসিমার।

কোথায় নামবে??  বললাম। সেটাই হল কাল।
আমি ও তো ওখানে নামবো। সম্ভাব্য প্রতিবেশীর সঙ্গে বাসে আলাপ হয়ে উদ্ভাষিত মুখ।
কোথায় থাকো?? তাও বলতে হল। এবার মিলল না। মাসিমা একটু দূরে থাকেন কিন্ত ু আমার বাড়ির   পাশে মরনিং ওয়াক করেন---সুগার আছে কিনা।
চাকরি কর বুঝি। বই পড়তে ভালবাস... আমার বৌমা ও সারাদিন বই পড়ে।  খুব ভাল অভ্যাস। ----বলতে থাকলেন মাসিমা।

হ্যারি পটার হাতে ধরাই রইল, বই এর দিকে তাকিয়ে রইলাম, মাসিমা কিন্ত ু  কোনো হিন্ট নিলেন না।
বাস ও ছুটছে, মাসিমার মোনোলগও।

মনে মনে বহুবার বললাম --- মাসিমা ব্যস্ত আছি।
মুখে বলতে পারলাম না। কবে পারব কে জানে!!!

THEN---- about time

When you tossed and turned in the bed till the wee hours of the night,
and eventually felt dizzy in the morning

When your morning greeting is the boss's email -
-major revision of a paper you are totally hopeless about

When your hospital visit is coming closer so fast that you feel like travelling on a comet

When you are shit scared of everything around you
and call someone who refuses to come by today

When at that moment of desperation you want to go back to lab
but cannot because you  are not fit enough to travel alone

WHAT DO YOU DO!!!!

what do one do ????







Sunday, May 29, 2016

নরওয়ের জঙ্গলে

হেঁটে যাচ্ছিল মিমসা। পিঠে রাকস্যাক, পায়ে স্নিকার। জীন্স টা গোড়ালির কাছে ছিঁড়ে গেছে , টী শার্টে খাবারের দাগ। ছোট ছোট চুল, অবিন্যস্ত,  যাতে চোখের উপর এসে না পরে তার জন্য বান্ডানা বাঁধা। বড্ড রোদ, তাই চোখে সানগ্লাস। হাতে ঘড়ি। হেঁটে যাচ্ছিল মিমসা, পেছন দিকে না তাকিয়ে। ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে, পাথরের উপর দিয়ে, মাঝে মাঝে হয়ে আছে ঘাস, সেগুলো কে মাড়িয়ে। অন্যমনস্ক, কিন্ত ু স্থির লক্ষ্যে।

তরু দেখছিল।  তরুর হাতে ধরা  " অন্ধ উইলোর নীচে ঘুমন্ত রাজকন্যে"। মিমসার দেওয়া জন্মদিনের উপহার নং ১ আর দ্বিতীয় উপহার এই চলে যাওয়াটা- ভাবছিল তরু। চলে যাওয়াটার মধ্যে একটা সংকল্প ছিল, আর না ফেরার, দৃঢ সংকল্প -- মিমসার প্রত্যেকবার চলে যাবার মধ্যে যেটা থাকে। তবু আজকের যাওয়া কেমন অন্যরকম---প্রতিবারের মতই ভাবলো তরু।

বিকেলে অটোয় বাড়ি ফিরতে ফিরতে বৃষ্টি চলে এল। ছাতা নেই কারোর কাছেই---মিমসা বৃষ্টি ভালবাসে। ঝম ঝম শব্দ, ঠান্ডা হাওয়া, ভেজা রাস্তা ঘাট, জমা জল, উলটে পড়ে থাকা টব এর মধ্যে বেঁকে যাওয়া ছোট ফুলগাছ, সোঁদা হাওয়া উড়তে থাকা তুলতে ভুলে যাওয়া ভেজা শাড়ি, ফুটপাথের দোকানের জল জমা প্ল্যাস্টিকের ছাদ; যেটা থেকে বৃষ্টি থেমে  যাবার পরও বৃষ্টি পড়ে--- মিমসা এই সবকিছু ভালবাসে।

নিশ্চয় খুব দূরে যায়নি----বৃষ্টিতে একলা ভিজতে ভিজতে ভাবল তরু।

মোজা দুটো ফেলে গেছে, দু রঙের মোজা। বড্ড তাড়ায় ছিল। স্টেশন পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেল, হাতে বইটা দিয়ে হেঁটে চলে গেল-- ট্রেনে ওঠার কথা মনে হয় মনে পড়েনি।
ডিনার খেতে খেতে ভাবছিল তরু। সামনে খাতার স্তূপ, জমা দিতে হবে দেখে।

"প্রথম সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল?"
"নদী তীরে।"

নাম না জানা এক নদীর পাড়ে বসে ছিল দুজনে। ছোট নদী, দূরে কোথাও বড় নদীতে মিশেছে। মাছ -টাছ নেই, হালকা ঘোলা মতন জল, গাছের ছায়া পড়ে সবজেটে। নদীর ওপারে ধানের জমি, চাষ হচ্ছে। সাইকেল করে মেয়েরা স্কুল যাচ্ছে। পাখি ডাকছে - টি টি করে। ফেরীওলা চলে গেল। মিমসার তেষ্টা পেতে লাগল। জল খুঁজতে বাস গুমটি। নদীটা হারিয়ে গেল।

নদী হারায় নাকি!!! কত দিন ধরে এক রাস্তায় চলছে---রাস্তা পালটে নিচ্ছে ইচ্ছে মত।
মানুষ ই হারায়---নদীকে, মাঝে মাঝে নিজেকে।
মিমসা তাই ভাবে। অন্তত তরুর তাই মনে হয়।

ছাতিমের গন্ধ আসছে। এই ভরা বৃষ্টিতে ছাতিমের গন্ধ !!! তরুর মাথার মধ্যে মিমসা। হাঁটছে---মাথা দুলিয়ে হাসছে--- জানলার উপরে বসে আছে---- হাতে পেনসিল, মগ্ন হয়ে দেখছে ফাঁকা ক্যানভাসের দিকে।

তরুর ছবি আঁকছিল একটা-- পোর্ট্রেট, পেনসিল স্কেচ। অসমাপ্ত পড়ে আছে সেটা।
হাসপাতালে লম্বা ওয়েটিং গুলোতে ছবি আঁকতো বসে। পেনসিলে। বাড়িতে রঙিন--- উজ্বল লাল, সবুজ, হলুদ।

উফফ। এসব  ভাবছি কেন? নিজেকে বকে দিল তরু। জন্মদিনের রাত।

বাড়ির পাশে একটা সিনেমা হল-----চিত্রা। তাতে যত রাজ্যের বাজে সিনেমা চলে। মিমসা সবকটা দেখতে যেত। সিনেমা দেখতে নয়, যারা গেছে তাদের দেখতে। তরু গেল আজকে। 

দাদা দুটো টিকিট দিন।

সিনেমা শুরু হল। রাতের সিনেমা, ভীড় ভালই, অনেকেই ঘুমুতে আসে এই হলে--- যাদের কোথাও থাকার জায়গা নেই---বৃষ্টি হলে ভীড় আরো বাড়ে।

তরু চারদিক দেখছিল।

মিমসা এল। পাশে বসল। সিনেমার মাঝখানে উঠে গেল। পর্দায় তখন খুব জোরে বৃষ্টি নেমেছে , নায়ক নায়িকা দৌড়াচ্ছে।

হল থেকে বেড়িয়ে মিমসা হেঁটে যাচ্ছিল। ১২ টা বেজে গেছে, তরুর জন্মদিন এই বছরের মতন শেষ। হেঁটে যাচ্ছিল মিমসা, পেছন দিকে না তাকিয়ে, অন্যমনস্ক ভাবে, কিন্ত ু স্থির লক্ষ্যে।








Friday, May 27, 2016

বৃষ্টি

সমুদ্রের ধারে শুয়ে ছিল সে। ভোরের সমুদ্র। চারদিকে ফাঁকা। ভোরের আলো ফোটার পরের আর সূর্য্য ওঠার আগের নরম ধূসর নীলচে আলোয় ভরে আছে চারপাশ। ঢেউ উঠছে, তীরের দিকে আসছে--- ভেঙ্গে পড়ছে তীরে। ঢেউ এর মাথায় সাদা ফেনা। ছড়িয়ে যাচ্ছে জলের মধ্যে। হাওয়া দিচ্ছে খুব জোরে, হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ আর  ঢেউ এর শব্দ মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। হটাৎ বৃষ্টি এল খুব জোরে--একদম আচমকা বৃষ্টি। হাওয়া দমক বাড়লো।হাওয়ায় ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে সব কিছু---  তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে --বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি--ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছে তীরে-- সফেন সমুদ্রতীর--- সে শুয়ে আছে তীরে-- কিন্ত ু বৃষ্টির ফোঁটা তার গায়ে পড়ছে না। খুব ইচ্ছে করছে ভিজে যেতে, বৃষ্টির গন্ধ আসছে--- লোনা বাতাসের সঙ্গে মেশা মিষ্টি জলের অদ্ভ ুত  একটা অপার্থিব গন্ধ ---- ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে--- সমুদ্র জলে মিশে যাচ্ছে--- সে শুয়ে আছে---  বৃষ্টি কে ডাকছে---  বৃষ্টি আসছে না কাছে---ভিজিয়ে দিচ্ছে না।


ব্যাথাটা আবার শুরু হল। সাত ঘন্টা থাকে ওসুধের এফেক্ট, তারপর ঢেউ এর মতন ফিরে আসে ব্যাথাটা। হাঁটু থেকে কোমর-- স্পাইনাল কর্ড  বেয়ে উঠতে থাকে-- মাথায়। উত্তাল ঢেউ ---- বিরামহীন ভাবে তৈরী হচ্ছে---সমুদ্রতীরে ভেঙ্গে পড়ছে তীব্র আক্রোশে। মাথার মধ্যে ভেঙ্গে পড়ছে --- বার বার ফিরে আসছে-- ছড়িয়ে যাচ্ছে রন্ধ্রে- রন্ধ্রে। কিছুক্ষণ পরে আর তরঙ্গটা অনুভূত হয় না, খালি তীরে ভেঙ্গে পড়াটা বুঝতে পারে। জ্বর চলে আসছে-- কুল কুল করে--- যেন পাহাড়ী নদীতে বাণ এল---
কিন্ত ু  বৃষ্টি এলনা। বরং আগুন জ্ব্লে উঠল শরীরে ---বেজে উঠল কারখানার ঘন্টি--- নোটিশ এসেছে প্রোডাকশন বাড়াতে হবে অনেক গুণ---সময় নেই হাতে ----- আজ রাতেই নামতে হবে কাজে। চুল্লীতে জ্ব্লে উঠল আগুন---ট্রলীতে যেতে লাগল সব মালপত্র--- সবাই ছুটছে, চেঁচাছে--- ঘরঘর শব্দে মেশিন শুরু করল কাজ। অস্থিমজ্জার মধ্যে দৌড়াচ্ছে মলিকুলগুলো--- তাদের আজকে ওভার টাইম---- বাইরে যুদ্ধ শুরু হয়েছে--- অনেক অস্ত্র দরকার--- হেরে যাবার হুকুম নেই যতই কষ্ট হোক না কেন। ওর্করা মার্চ করছে ---- তাদের পায়ে শব্দে কাঁপছে মাটি---কিন্ত ু জীয়ন অঙ্গুরীয় এখনো সুরক্ষিত আছে---- আগুন জ্ব্লছে---অস্ত্র তৈরী হচ্ছে---কোনো ভয় নেই--- যুদ্ধের শেষে বৃষ্টি  নামবে--- শুধু  সময়ের অপেক্ষা।

জ্বর আসছে যে--- মাথায় হাত দিয়ে কে বলল।
ওষুধ খেয়ে নে।
আরেকটু দেখি, যদি নিজে থেকে কমে।
তাহলে রেস্ট কর--ঘুমিয়ে নে।

চোখ বুজলে যদি ঘুম আসে---- ঘুমিয়ে নিলে যদি বৃষ্টি নামে।
সমুদ্রতীরে শুয়ে আছে সে, নীলচে সমুদ্রতীর। একটা বড় পোকার মতন লাগছে নিজেকে। চারপায়ে পড়ে আছে, এলোমেলো ভাবে ---মাথাটা বড়--হাত পা সরু-সরু, ভাঙ্গা ভাঙ্গা, অশক্ত। মাথাটা কে বয়ে নেবার জোর নেই। মাটিটা নিচের দিকে টানছে---চোখ বুজলে তলিয়ে যাচ্ছে নীচের দিকে--- আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে মাটি---চোরাবালির মত ----ডুবে যাচ্ছে অতলে।

ঘুমুতে পারব না---- নিজেকে অন্যরকম লাগছে। 

গ্রেগর সামসার সমস্যাটা এত দিনে বুঝতে পারছিল। বন্ধ চোখেই কীট হয়ে যাওয়াটা এত কঠিন, খোলা চোখে  কিরকম ভাবতে পারছিল না। আজকাল ভাবনাগুলো বড্ড আবছা মত--- ছায়া ছায়া- আলো আঁধারী।

ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছে-- বিরামহীন---থার্মোমিটারের পারা চড়ছে -----ওষুধ খেয়ে নাও সোনা --- অনেকক্ষণ হল--- নিজে থেকে কমবে না আর। 

বৃষ্টি এসে গেছে। ঝমঝম করে পড়ছে। ভিজে যাচ্ছে সে। বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি, আকাশ কালো করে নেমেছে---- আগুন নেভানো বড় ভালো বৃষ্টি।











মিসেস সিম্পসন

জায়গাটার নাম বলা যাবে না। এটুকু বলছি কলকাতা থেকে বেশি দূরে নয়, ট্রেনে চড়ে মাত্র ঘণ্টা খানেক, আর জায়গার নামটা উ দিয়ে শুরু।

পুরনো পাড়া, গায়ে গায়ে বাড়ি, লোকজন মিশুকে। আর মিসেস সিম্পসনকে সবাই ভালবাসে।ভালবাসবেই না কেন, সারাজীবন বড়দিনে ভালো ভালো কেক বানিয়ে পাড়ার বাচ্চাদের খাইয়েছেন যে। ছেলে মেয়ে নেই, বছর আটেক আগে মিস্টার সিম্পসন ও মারা গেছেন। তিন তলার ছোট্ট ফ্ল্যাটে  মিসেস সিম্পসন একাই থাকেন। তিন কূ্লে আর কেউ আছে বলে পাড়ার কেউ দেখেনি তবে সিম্পসন বলে গোয়ায় নাকি তাঁর বোন-ভাই সবাই আছে।

তবে একা থাকতে কিছু এসে যায় না সিম্পসনের। তিনি থাকেন নিজের মনের খুশীতে। রোজ সকাল সকাল উঠে মর্নিং ওয়াক করেন। বিকেলে সেজে গুজে, গোলাপী ছাতা দুলিয়ে বাজার গিয়ে মাছ- সবজি কিনে আনেন। প্রতি রোববার গঙ্গার ধারে হাওয়া খেতে যান, গিয়ে বুড়ীর চুল (Candy floss) কিনে খান। আর রাতের বেলা কম্পুটার খুলে কোল্ডপ্লের (Coldplay) গান শোনেন। হ্যাঁ কোল্ডপ্লে---- উইল চ্যাম্পিয়ান, মানে যে লোকটা ড্রাম বাজায় তাকে মনে মনে খুব পছন্দ তাঁর।

মিসেস সিম্পসনের দুটো হবি, 
১) বাইনোকুলার দিয়ে লোকের বাড়িতে কি হচ্ছে দেখা।
২) টিকটিকি পোষা এবং তাদের দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করানো।  সিম্পসন কথা বলতে পারেন ওদের সঙ্গে, বুঝতেও পারেন ওদের কথা।
দুটো পোষা টিকটিকি আছে তাঁর --- সাদা এবং কালো। যেমন নাম তেমনি রঙ। তারা খুব কাজেরও।   লোকের বাড়িতে গিয়ে দেওয়ালে স্থির হয়ে বসে থেকে দেখে সবাই কি করছে , কি বলছে , আর সিম্পসনকে রিপোর্ট করে। 
তবে মিসেস সিম্পসন এর এই সুপার পাওয়ারের কথা অবশ্যই পাড়ার কেউ জানে না, জানতো শুধু সিম্পসনের মা আর বর, তারা এখন বহুদিন মরে হেজে গেছে।

মিস্টার সিম্পসন বেঁচে থাকাকালীন বেশী গোয়েন্দাগিরি করা যেত না, তখন ব্যস্ততাও ছিল, বুড়ো রাগ ও করত। এখন বুড়ী বয়সে একা একা থেকে বোরড লাগে মিসেস সিম্পসনের, তাই পুরোদমে চালাচ্ছেন টিকটিকি বিজনেস।

৩ নং বাড়িতে মোটা মহিলা আজকে লাউ চিংড়ী রেঁধেছে। তা খেয়ে তার বর খুব খুশি। কিন্ত ু শুধু সিম্পসন জানে রাঁধার পর পুরোটা মাটিতে পড়ে গেছল, মুটকি সেটাকেই তুলে বর কে খাওয়াচ্ছে। এই খবর এনেছে সাদা। দুধ ভাত খেতে খেতে খুব হাসছে  মিসেস সিম্পসন।

কালোর খবর আরো জব্বর। ৮ নং এ শুঁটকো স্কুল মাষ্টারের শাশুড়ি এসেছে গতকাল। বাইনোকুলার দিয়ে সেটা দেখেই কালোকে ওবাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। মা আসাতে শুঁটকোর বউ খুব খুশি, রান্না সব মা ই করছে। চাটগাঁয়ের রান্না, শুঁটকী মাছ, কচুর শাক আর হেন তেন কত কিছু। শুঁটকী মাছের গন্ধে পাড়া সুদ্দু ম ম করছিল সকালে। মাষ্টার বাড়ি ফিরে এসে রান্না দেখে প্রায় অজ্ঞান, এসব খায় না সে। কচু খেলে তার গলা চুলকোয় নাকি। এই নিয়ে ধুন্ধমার লেগেছে ৮ নং এ। আরেকটু হলে বউ বাপের বাড়ি যাচ্ছিল। এখন রাতে মাষ্টার শিবুর দোকানের রুটি আলু খাচ্ছে, ফ্রিজে পায়েস আছে রাখা কিন্ত ু বউ শুঁটকো কে সেটা দিচ্ছে না।

এইসব করে ভালই দিন কাটছিল মিসেস সিম্পসনের। আগেই বলেছি পাড়াটা ভাল, সামান্য হিংসা- হিংসি আছে, তবে যেটুকু  না থাকলে পাঁচটা মানুষ এক জায়গায় আছে বোঝা যেত না। ৯ নং নতুন পরদা লাগালে, ১৬ নং ও লাগাল। ২১ নং নতুন গাড়ি কিনতে সবাই মুখ বেঁকিয়ে বলল ঘুষের পয়সায়, তবে গাড়ি কেনার মিষ্টি খেতে কেউ আপত্তি করেনি।

তবে জীবনে কোনো সুখই চিরস্থায়ী নয়----গুণিজনরা বলে গেছেন, লীলা দিদা ও তাই বলতেন। তাঁর কথা সত্যি করার জন্যই এক আপদ উপস্থিত হল পাড়ায়--- নোটিশ এল পাড়া খালি করার।
এই পাশাপাশি যে পাঁচটা বাড়ি তাদের নাকি কোন কাগজপত্র নেই, তাই বাড়ি ফাঁকা করে দিতে হবে। এই পুরনো বাড়ি ভেঙ্গে নাকি নতুন মল উঠবে। কাগজপত্র ছিল কিনা সত্যি কেউ জানে না, সবার তিন পুরুষ ধরে বাস, বাড়ির ভাড়া তুলে কলকাতার ঠিকানায় পাঠানো হত আগে, লাষ্ট পঁচিশ বছর আগে সেই ঠিকানায় কেউ থাকে না। সবাই সুখে শান্তিতে ছিল এতদিন। এখন কর্পোরেশন নামক আপদ এসে হাজির। পাড়ায় হৈ চৈ পড়ে গেল, সবাই গিয়ে অফিসে পিটিশন দিয়ে এল। কিন্ত ু কোনো কাজ হল না, চার মাস সময় পাওয়া গেল, তার মধ্যে চলে যেতে হবে। সবার মন খারাপ, কান্নাকাটি, এমন কি আজকাল  মিসেস সিম্পসনকে গোলাপী ছাতা নিয়ে দেখা যায় না।

এরকম ভাবে এক মাস কেটে গেল। তারপর একদিন খুব উত্তেজনা। শিবুর দোকানে নাকি একটা হোঁৎকা মতন লোক আর তিনটে গুন্ডা  টাইপ এসে চা খেতে খেতে গল্প করছে, শিবু দোকানে ছিল না, শিবুর ছেলে শুনেছে। এই পাড়া খালি করানোর জন্য অনেক ঘুষ খেয়েছে কর্পোরেশন ওলারা। এখনো পাড়া ফাঁকা হয়নি বলে হোঁৎকার বস, তার নাম হেডুদা সে রাগারাগি করছে।

মিটিং বসে গেল, কিন্ত ু উপায় কিছু বেরল না। শুধু বুড়ো তালুকদার বলল কাগজ একটা আছে বলে মনে হচ্ছে মাঝে মাঝে,  মনে হচ্ছে  তার বাবার মুখে শুনে ছিল। সবাই তেড়িয়া হয়ে বলল এত দিন কেন বলেনি---- কাগজ কোথায়----দেখা গেল বুড়ো্র আর কিছু মনে নেই। মিটিং ভেঙ্গে গেল। বুড়োর মাথার দোষ ছিল, তার সঙ্গে ভুলে যাবার অসুখ, তাই কেউ বিশ্বাস করত না তাকে।

খালি মিসেস সিম্পসন অবিশ্বাস করল না। এই শিক্ষাটা তাঁর মার থেকে পাওয়া। 

ফ্ল্যাটে ফিরে মিসেস সিম্পসন ভাবতে বসলেন। কাগজ খুঁজতে হবে, পাঁচটা বাড়ি, চল্লিশটা ফ্ল্যাট। মুখের কথা নয়। কেমন কাগজ তাও জানেন না, টিকটিকিদের ভাল করে না বললে ওরা পারবে কেন। চিন্তায় পড়ে গেলেন মিসেস সিম্পসন। এদিকে সময় ও বেশী নেই। ভাবতে ভাবতে মাথা গরম হয়ে গেল। একটু ঠান্ডা হাওয়া লাগানো দরকার। দু হপ্তা  গঙ্গার ধারে যাননি, আজকে গেলেন। বাক্সে পুরে
টিকটিকিদের ও নিয়ে গেলেন। পাড়ে বসে থেকে দু খানা বুড়ীর চুল খেলেন। স্টীমারের ভোঁ শুনলেন, সূর্য্য ডুবে যাওয়া দেখলেন। টিকটিকিদের জন্য নকুলদানা কিনে যখন বাড়ি এলেন, মাথা পুরো ঠান্ডা, বুদ্ধি খুলেছে।

পরের দিন মিসেস সিম্পসন গেলেন কর্পোরেশন অফিসে। হাতে ব্যাগ, তাতে সাদা আর কালো। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সাদা- কালো কে রেখে চলে এলেন। আবার পরদিন গেলেন--- কোনো খবর আছে কিনা জানতে। দু তিন দিনে সাদা- কালো বাকি টিকটিকিদের সঙ্গে বন্ধুত্ত করে ফেলেছে, নকুল দানা খেতে সবাই ভালবাসে কিনা। রোজ রোজ মিসেস সিম্পসন গিয়ে নকুলদানা জোগাড় দিতেন। টিকটিকিরা সারাদিন অফিসের দেওয়ালে বসে লোকে্দের উপরে নজর রাখত, রাতে মিটিং এ সাদা- কালো কে সব জানাত। ১ সপ্তাহ কাটল। তারপর সাদা- কালো খবর আনল---- হেডুদা আর কেও নয়, বুড়ো তালুকদারের ভাইপো। সে  এখন  বিরাট প্রোমোটার,  কাগজের কথা জানতো আর এটাও জানতো যে অন্য কেউ জানে না এ ব্যাপারে। বুড়ো তালুকদার ভাইপোকে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না, সেই জন্য রাগ আছে, লোভ তো আছে ষোলআনা। হেডু যার কিনা আসল নাম অমরেন্দ্রনাথ তালুকদার সে রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে এটা ও বলেছে, বাড়ির কাগজ এর গায়ে কল্কা কাটা, এর লাষ্ট পেজ এ হেডুর নিজের হাতে বক আঁকা। সেই কাগজ টা পেলে এক্ষুনি পুড়িয়ে ফেলে আর যত বুড়ো- বুড়ির দল যারা আজন্ম ওখানে আছে তাদের পাড়া ছাড়া করে। নিজের কাকা হয়ে এমন শত্রতা -- এই শুনে অফিসের সবাই আহা রে আহা রে করেছে। হেডু ওদের বিরিয়ানি খাওয়া কিনা।

যাই হোক মিসেস সিম্পসনের সমস্যা মিটে গেল। সাদা- কালো বাড়ি এসে রাতের বেলা তালুকদারের বাড়ি গেল। কাগজ খুঁজতে অবশ্য আরো দিন তিনেক লাগল।

মিসেস সিম্পসন মিটিং ডাকলেন। বাড়ির কাগজ দেখানো হল। কাগজে পরিস্কার লেখা ছিল বাড়ির ওয়ারিশ মারা যাবার পনেরো বছর পর থেকে এই ফ্ল্যাটের অধিবাসীরাই মালিক হবে, তবে বিক্রি করতে পারবে না। পাড়ায়  মিসেস সিম্পসন আর বুড়ো তালুকদারের নামে ধন্য ধন্য পড়ে গেল।
৯, ১৬ আর ২১ নং মিলে সবাইকে শিবুর দোকানের চা আর জিলিপি খাওয়াল। কর্পোরেশন অফিসে গিয়ে কাগজ দেখিয়ে নোটিশ ক্যানসেল করানো হল। হেডু এসে ছিল, খুব ঘামছিল, পরে নাকি প্রেসার বেড়ে গিয়ে ডাক্তার খানায় গেছে। এই খবর ও শিবুর ছেলে দিয়েছে।

এখন মিসেস সিম্পসনের জীবন আবার আগের মতন হয়ে গেছে। সকালে মর্নিং ওয়াক, বিকেলে বাজার, রোববার গঙ্গার ঘাটে বুড়ীর চুল খাওয়া। খালি এখন মাঝে মাঝে ৮ আর ৩০ নং থেকে  
সিম্পসনকে কেক বানিয়ে পাঠায়, চা খেতে ডাকে। আর মিসেস সিম্পসন আজকাল কোল্ডপ্লের (Coldplay) সঙ্গে কোডালিন (Kodaline) এর গান শোনেন।














Tuesday, May 24, 2016

গরম ভাত আর মধুচন্দ্রিমার গল্প

ভোর হয়েছে। চারদিক শান্ত, শীতল বাতাস বইছে। একটা পাখি ডাকছে মিষ্টি সুরে। চারপাশে একটা হাল্কা আলো, স্বপ্নিল হয়ে আছে যেন। জানলার পরদা উড়ল, আর প্রথম রবিকিরণ এসে পড়ল বেহুলার চোখে। লক্ষীন্দরের নজর এড়ায়নি দৃশ্যটা। ভোরবেলাগুলো ভারি সুন্দর। প্রথম সূর্যের ছটায় যখন বেহুলার ঘুমন্ত চোখের পাতাটা একটু কুচঁকে ওঠে, নরম আলোতে ওকে আর মোহময় দেখায়।
সাতদিন ধরে  দেখছে এটা, সাতদিন আগেই তাদের বিয়ে হল কিনা।

কিন্ত ু আজকের দিনটা সামান্য বিরক্ত হয়ে আছে  লক্ষীন্দর। আজকে তাদের মরিশাস বেড়াতে যাবার টিকেট এক্সপায়ার হয়ে যাবে। অনেক খুঁজে খুঁজে ভাল ডীল জোগাড় হয়েছিল, ডেট রিল্যাক্সেশন ও ছিল, কিন্ত ু আজকে পর্যন্ত। বাট মনে হয় যাওয়া ক্যানসেল করতে হবে। যত নষ্টের গোড়া হচ্ছে ঐ মনসা বুড়ী।

সাত দিন হয়ে গেছে বিয়ের। মনসা বুড়ী এখন রিচুয়ালিস্টিক স্নেক বাইট দিতে আসেনি। তাই রাতে বাড়ি ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকা যাচ্ছে না। বুড়ী খবর পাঠিয়েছে  পেট খারাপ হয়ে নাকি হসপিটাল এ ভরতি হতে হয়েছিল, এখন একটু সুস্থ না হয়ে অফিস এ আসতে পারছে না। পেট খারাপ তো হবারই কথা। বেহুলা-লক্ষীন্দরের রিসেপশন পার্টি তে এসে অতো চীজ আর চিকেন খেলে পেট খারাপ না হয়ে যাবে কোথায়। আর ড্রিংকস্ এর কথা নাই বললাম। বয়স তো কম নয় বুড়ীর--- নয় নয় করে হাজার দেড়েক। এসব ভেবে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল লক্ষীন্দরের।

বাবার উপরে ও রাগ হচ্ছিল। এতদিন হয়ে গেছে, এখন ও প্রত্যেক জন্মে সেম রিচুয়াল পালন করার কি দরকার। আগে হলে হয়ত বাবা রাজি হয়ে যেত কিন্ত ু যবে থেকে মনসার সঙ্গে স্নেক অ্যান্টিভেনম এর নতুন ব্যবসা শুরু করেছে তবে থেকে দুজনের গলায় গলায় ভাব। আর মনসাকে চটাতে চায় না চাঁদ বণিক, প্রথম জন্মের শিক্ষা এখনো মনে আছে তাঁর। 

ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে লক্ষীন্দর চাঁদকে জিজ্ঞেস করল মনসার খবর। চাঁদ বণিক বুঝতে পারছে ছেলের রাগটা। কিন্ত ু তাঁর নিজের হাত পা বাধা। লাস্ট ইয়ার ১০৯ নং ব্রেকআপটার পর মনের সঙ্গে শরীরটাও ভেঙ্গে গেছে মনসার। চাঁদের কাছে এসে রীতিমত কান্নাকাটি করত তখন। বুড়ো বয়সে মনের উপরে ধাক্কাটা বেশি লাগে কিনা, চাঁদের নিজের এক্সপিরিএন্স তাই বলে। এর পর থেকেই তো 
ড্রিংকিং প্রব্লেমটা বেড়ে গেছে মনসার। এই অল্প বয়সি ছেলেরা কি বুঝবে, এদের প্রেমের কোন গভীরতা আছে নাকি। আর মনসার বয়সের সঙ্গে রাগ কমেনি একদমই, বরং বেশী সেনসিটিভ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন, বার বার তাড়া দিলে চটে গিয়ে আবার কি শাপ দেবে অথবা বিজনেস এ কোন শত্রতা করে দেবে। এই ভেবে আর লাস্ট তিন দিন মনসাকে আসার জন্য তাগাদা দেয়নি চাঁদ। শুধু শরীরের খোঁজ নিয়েছে।

তবে আজকে একবার চেষ্টা করা যেতে পারে। এই ভেবে মনসাকে " কেমন আছ!" বলে একটা WhatsApp মেসেজ পাঠাল  চাঁদ বণিক। আধ ঘন্টা পরে মনসার ফোন।
"হ্যালো চাঁদ। আজকে ভাল আছি, আজকে রাতে তোমার বাড়ি যাবো। বেহুলা-লক্ষীন্দর কে বলে রেখো।"
" ঠিক আছে। ৭ টায় দিকে এস। এখানে ডিনার কোরো বরং। ভাল মাটন এনেছি আজকে।"
" খুব ভাল। সি ইয়উ অ্যাট সেভেন দেন।"

খুশী হয়ে চাঁদ বণিক লক্ষীন্দরকে খবরটা পাঠালেন।
বেহুলা তাড়াতাড়ি সুটকেস গোছাতে বসল। রাতে ফ্লাইটে আজকে তাহলে মরিশাস। তার আগে একটু পার্লার ও যেতে হবে।

সন্ধ্যে সাতটা। মনসা এলেন। সামান্য খাওয়া দাওয়া হল। তারপর মনসা ব্যাগ থেকে একটা স্নেক টীথ বের করে তাতে সামান্য বিষ ঢেলে নিয়ে লক্ষীন্দরের পায়ে একটু ফুটিয়ে দিলেন। বেহুলা কে সামান্য চোখের জল ফেলতে হল। বেহুলা ভেবেছিল একটু নাক টেনে কাজ চালিয়ে নেবে কিন্ত শাশুড়ি দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে চোখ থেকে দু ফোঁটা বের করতে হল। চাঁদ ও তৈরী ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে একটা অ্যান্টিভেনম ইঞ্জেকশন  দিলেন ছেলেকে, ১ ঘন্টা ঘুমিয়ে  নিয়ে লক্ষীন্দর ডিনার খেতে এল।

এর পর ওদের ফ্লাইট ধরতে ছুটতে হবে।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

নৌকোটা নোঙ্গর করে সুজন মাঝি বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। ৩০ বছরে সা জোয়ান, বাড়িতে বাবা মা ছোট দুটো ভাই- বোন আর ফুলেশ্বরী, সুজনের চারমাস আগে বিয়ে করা বৌ। রাস্তা বলে কিছু নেই, মাটির পথ, পাশে ঝোপঝাড়। টর্চের ব্যাটারীটা গেছে। অন্ধকারে সাবধানে পা ফেলছিল সুজন মাঝি। খুব ক্লান্ত লাগছে, খিদে ও পেয়েছে ভীষণ। আজকে ভাল মাছ পাওয়া গেছে, ভাই- বোন দুটো মাছ খেতে খুব ভালবাসে, মাসের মধ্যে দু-এক দিনই খেতে পায় কিনা। ফুলেশ্বরীর রান্নার হাতটা ভাল, আজকে রাতের খাওয়াটা ভাল হবে, ভেবে খুশি হচ্ছিল সুজন, অন্যমনস্ক ও হয়ত। হঠাৎ পায়ের মধ্যে একটা তীব্র সূচঁ ফোটানোর মতন  জ্বালা হল, মাথাটা ঘুরে উঠল, পায়ের পেশীতে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হল।
অন্ধকারে মা মনসার চেলার উপরে পা পড়েছে, বুঝতে পারছিল সুজন। আবার কিছু বুঝতে পারছিল ও না। হাতের ঝুড়িটা পরে গেল, টর্চটাও, ব্যথায় নীল হয়ে যাওয়া সুজনও পড়ে ছিল রাস্তায়। দূরে গ্রামের মধ্যে কেরোসিনের আলো --- বাবা- মা- ফুলেশ্বরীর মুখ---- সুজন চেঁচাতে চাইছিল --- যদি কেউ শুনতে পায়, হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেঁচে যাবে, যদি ১০ কিমি পথ যেতে যেতে প্রাণটা আটকে রাখতে পারে।


সুজনকে নিয়ে হাসপাতাল যাওয়া হচ্ছিল। পায়ে শক্ত করে কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, নৌকোর মধ্যে শুয়ে আছে সুজন, পাশে ফুলেশ্বরীর উৎকন্ঠ মুখ। ১০ কিমি রাস্তা।নৌকো থেকে নেমে ভ্যানে করে হাসপাতাল। সুজন স্বপ্ন দেখছিল--- হাঁড়িতে ভাত ফুটছে টগবগ করে, মাছ রান্নার গন্ধ আসছে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ফ্লাইট উড়ছিল। লেট নাইট ফ্লাইট। বেহুলা লক্ষীন্দর অঘোরে ঘুমাচ্ছে। কাল থেকে সমুদ্র সৈকতে ওদের মধুচন্দ্রিমা।














Sunday, May 22, 2016

আউটিং কিংবা মিস হওয়া ডেট

মিনার্ভা দেবী আয়নার সামনে বসে ছিলেন। অনেক দিন পর মনটা আজকে একটু উৎফুল্ল। আজকে তার বেড়াতে যাবার কথা। সেই ভল্ডেমর্ট মরে যাবার পর থেকে আস্তে আস্তে জীবনটা কেমন পানসে হয়ে গেছে। আজকাল হগঅয়ার্টসে কেউ তেমন পড়তেও আসে না। যারা আসে তারা পাশ টাশ করে মাগলদের ব্যাঙ্ক আর গুগল, ফেসবুক বলে কিসব আছে তাতে চাকরি করে।  ট্রাডিশনাল উইযার্ডদের বাজার খারাপ, বুড়োরা কোনমতে টিকিয়ে রেখেছে তাদের রাজ্যপাট। বাটার বিয়ার এর টেষ্টটাও আজকাল ভাল লাগে না মুখে। রোসমার্তার জামাই লোকটা ভাল নয়, বিয়ার এ নানা রকম কারচুপি করে, দামও বেশি নেয়।

যাই হক, আজকে মিনার্ভা দেবী খুব ব্যস্ত।আজকাল আর তার সাদা চুলে ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগে না। তাই হেয়ার ডাই করতে বসেছেন তিনি। ডীপ পার্পল তার প্রিয় রঙ। গত বছর থেকে চুল রঙ করার ম্যাজিকটা ভুলে গেছেন, এখন মাগলদের হেয়ার ডাই ভরসা। তবে মাগলগুলো বেশ মজার আছে, সুন্দর সুন্দর শেডের রঙ বানায়, ভালই লাগে। চান টান করে মিনার্ভা দেবী আয়নার সামনে বসে ভাল করে সাজলেন। চোখে কোহল, ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক, চুলটা ক্লিপ দিয়ে আটকে ছেড়ে রাখলেন। আকাশী রঙের ড্রেস এর সঙ্গে ম্যাচিং ছোট টুপি।

আহহ। এত সাজের ঘটা কেন তাই তো বলা হয় নি। মিনার্ভা দেবী ডেট এ যাচ্ছেন, তাও যার-তার সাথে নয়, তার হাই স্কুল সুইটহার্টের সঙ্গে। ইউসুফ আলি। হগঅয়ার্টস পাশ করার পর আর যোগাযোগ  ছিল না। ইউসুফ চাকরি নিল সিগারেট ফ্যাক্ট্ররিতে, কিছুদিন উইযার্ডদের তারপর বহুকাল মাগলদের জগতে ছিল। মিনার্ভা কেরিয়ার এর গল্প তো সবাই জানে। হগঅয়ার্টসে পড়ার সময় ইউসুফের জন্য পাগল ছিল প্রচুর মেয়ে, কিন্ত ুইউসুফ এর শুধু দেখতে পেত মিনার্ভাকে। সে কথা মনে পড়ে গালটা সামান্য লাল হল মিনার্ভা দেবীর।

তা এখন ইউসুফ রিটায়ার করেছে, লন্ডন এ একাই থাকে আজকাল। একদিন ডায়াগন অ্যালিতে দেখা হয়ে গেছিল দুই পুরোনো বন্ধ ুর, তারপর চিঠি চালাচালি----এরপর আজকের এই লাঞ্চডেট। বিগবেন এর সামনে দেখা করার কথা, বেলা ১১ টায়। মিনার্ভা দেবী সামান্য সুগন্ধি মাখলেন, হাতে পার্স নিলেন, পার্সের মধ্যে জাদুদন্ড টি ঢুকিয়ে রাখলেন। চারপাশ ভাল করে দেখে, জানলার কাঁচ বন্ধ করে অ্যাপারেট করলেন মিনার্ভা দেবী।---- " বিগবেন,লন্ডন"।----

সামান্য বেশি সময় লাগল, তবে তেমন বেশি নয়। বিগবেনের সামনে আবির্ভূত হলেন মিনার্ভা দেবী। চারপাশটা ঠাহর করে নিতে গিয়ে একটু অবাক ও হলেন। লন্ডন আইটা দেখা যাচ্ছে না, নদীটাও কেমন কেমন ঠেকছে, বিগবেনের ও উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে। আসে পাশে সবার জামা কাপড় একটু আলাদা, ছেলেরা সার্ট প্যান্ট পড়েছে তবে মেয়েদের অনেকে কি রকম যেন সেলাই ছাড়া জামা পড়া। আর মোটামুটি সবার চুল কালো, দেখতে ও ঠিক ব্রিটিশদের মতন নয়। ছোট-ছোট টুক টুক (অটো) যাচ্ছে, লোকভর্তি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরো টুক টুক, তার চালকরা গল্প করছে--- মিনার্ভা দেবী শুনলেন, ভাষাটা বাংলা। বয়স যতই হক না কেন ভাষাজ্ঞানটা নষ্ট হয়নি, একবার শুনেই বুঝতে পেরেছেন । আর এটাও বুঝেছেন কি ভুল করেছেন। অ্যাপারেট করার সময় সামান্য মনযোগের গোলযোগে ওয়েস্ট বেংগলে এসে পড়েছেন। তবে ঘাবড়ালেন না মিনার্ভা দেবী, বরং ঠোঁটের কোনে একটা হাসি ফুটে উঠল তার। ইউসুফের লাঞ্চের নেমন্তনে হ্যাঁ বলার পর থেকে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল বেশি ইমপালসিভ আর ডেস্পারেট দেখাচ্ছে না তো নিজেকে। এখন ১১ টা বেজে গেছে, চাইলে অবশ্য ১ মিনিটে ফেরত যাওয়া যায়, তবে মিনার্ভা দেবীর ইচ্ছে করলনা। আজ থাক, পরে ইউসুফকে একটা সর‍্যি চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া যাবে, আর মিনার্ভার সঙ্গে না দেখা হয়ে ইউসুফের মনটা চঞ্চল হচ্ছে কিনা তার একটা পরীক্ষাও হয়ে যাবে আজকে।

ওয়েস্ট বেংগলের এই জায়গাটায় নাম লেক টাউন। বেঁটেবেনটার পাশ থেকে খাল চলে গেছে একটা।
আজকে ওয়েদারটা বেশ ভাল, মেঘ মেঘ, হাল্কা বৃষ্টি পড়ছে,  লন্ডন  লন্ডন  লাগছে। রাস্তার ধারে বড় বড় আর্ট ওয়ার্ক, তবে তাতে সবই হাসি হাসি মানুষের মুখ। নিশ্চয় এরা খুব গুণী মানুষ জন, মিনার্ভা দেবী ভাবছিলেন। প্রাতস্মরণীয় ব্যাক্তিদের ছবি ঝুলিয়ে রাখার চল হগঅয়ার্টসে আছে।

মিনার্ভা দেবী ঠিক করলেন কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে একাই লাঞ্চ করে বাড়ি ফিরবেন। এদিক ওদিক দেখলেন হেঁটে- হেঁটে, সিনেমা হল, সুইমিং পুল। একটা চাইনিস দোকানে ঢুকে চিকেন সুইট অ্যান্ড সাওয়ার সুপ আর তেরিয়াকি চিকেন খেলেন। সাথে ফ্রেশ লাইম সোডা।
এরপর বৃষ্টির সোঁদা হাওয়ায় মিনার্ভা দেবীর ঘুম ঘুম পেতে লাগল। মাথাটা একটু টিপ টিপ করছে, এর মধ্যে আবার অ্যাপারেট করতে গিয়ে যদি ভুলভাল হয়। তার চেয়ে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া ভাল। এই ভেবে মিনার্ভা দেবী রুপান্তরিত হলেন, ওই বিদ্যেটা তিনি শ্বাস নেবার মতন রপ্ত করেছিলেন কিনা, আর স্কুল এ এটাই শেখান এত বছর ধরে। রুপান্তরিত মিনার্ভা দেবী একটা টিনে চালের উপরে চড়ে বসলেন এবং সুখনিদ্রায় গেলেন।















Saturday, May 21, 2016

স্বপ্ন



স্বপ্ন ১)   সাইকেল এর চাকা ঘুরছে, চারটে চাকা। দু জোড়া প্যাডেলে দু জোড়া পা ওঠানামা করছে। ক্যাম্পাসের রাস্তায় হলুদ আলো। রাস্তার পাশে পরপর হোস্টেল, স্টাফ কোয়াটার্স, তারপর খেলার মাঠ, গেস্ট হাউস সরে সরে যাচ্ছে। সন্ধেবেলাটা বেশ ফাঁকা,  ইতিউতি দু একটা সাইকেল যাচ্ছে, আর আমরা দুজনে। কোথায় যাব জানা নেই, জাস্ট যাচ্ছি। মাঠের দিক থেকে খেলার শব্দ আসছে।ক্যাম্পাসের শেষে নাকি জঙগল আছে, তাতে যাওয়া যায়, কিংবা অন্য কোথাও। ম্যাটার করে না, বেরিয়ে পড়াটাই আসল। ল্যাব এর হাজার ঝামেলা থেকে হঠাৎ করে বিকেল বেলা পালিয়ে যাওয়াই আসল। 

ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে ফুচকা খেয়েছিলাম মনে আছে।
২০০৯ এর সন্ধে।

এই দিনটা পরে ফিরে এসেছে বার বার ---ঘুমের মধ্যে।


স্বপ্ন ২)   একটা সবুজ গ্রাউন্ড, তাতে নীল জলের দীঘি। স্বচ্ছ কাঁচের মত নীল জল, সাদা রংয়ের হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছুটা দূরে ঘোড়াদের থাকার জায়গা---সব কিছু একদম সিনেমার মতন।
গ্রাউন্ড এর শেষে বিশাল বিশাল গাছ। আর একটা সুন্দর একতলা বাড়ি, কাঁচের দরজা দেওয়া। 
আর বাড়ির মধ্যে একটা বিশাল লাইব্রেরী, ছাদ পর্যন্ত ঠাসা বই। জানলার পাশে জল।
চারপাশে অসীম শান্তি---স্বর্গ বুঝি একেই বলে।

খুব অস্থিরতার এক দিনে দেখেছিলাম এটা।



স্বপ্ন ৩)   ট্রেনে চেপে চলেছি। একা একা। কোথায় যাচ্ছি জানি না, ট্রেনে যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে  যাব। ঝাল মুড়ি খেলাম কিনে। ট্রেনটা একটা ফাঁকা প্রান্তর দিয়ে চলছিল। কোন গাছপালা নেই। শেষে একটা মাঠের মতন জায়গায় এসে থামল। সকাল হয়ে আছে, চারদিকে হলুদ আলোয় মাখামাখি, বুকের ভেতরটা খুশীতে ভরে উঠছে। কোন ব্যস্ততা নেই, হইচই নেই। ফাঁকা মাঠের মধ্যে থেকে ট্রেন বেড়িয়ে গেল---কু ঝিক ঝিক। দূরে শহর মতন দেখা যাচ্ছে, আমি আস্তে আস্তে সেদিকে গেলাম।

ক্লাস সেভেন এ দেখা।


“If you are happy in a dream, Ammu, does that count? Estha asked. "Does what count?" "The happiness does it count?". She knew exactly what he meant, her son with his spoiled puff. Because the truth is, that only what counts, counts....."If you eat fish in a dream, does it count?" Does it mean you've eaten fish?”-----------The God of Small Things

বৃষ্টিদিনগুলো বড্ড মন কেমন করা---স্বপ্নের মতন।




Friday, May 20, 2016

গেট

দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ। মাঠের পাশে রাস্তা, রাস্তার ধারে পাইনের সারি। উল্টোদিকে অনেক দূরে
ইউক্যালিপটাসের বন। হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ।

মাঠের শেষে একটা বড় দীঘি, তার পাশে জলের ট্যাঙ্ক।

কালচে নীল আকাশ।

আর মাঠে একটা গেট। বেশ শক্তপোক্ত লোহার গেট, তুঁতে রঙের।

গেট কিসের? মাঠে ঢোকার নিশ্চয়।

ওহো মাঠে পাঁচিল দেওয়া!!!

নাতো পাঁচিল তো নেই। তাহলে গেট কিসের

এই প্রশ্নটা আমরা একজন আরেকজন কে করছিলাম।

unfinished construction হবে---বলল একজন। আমাদের সাধারণ যুক্তিতে তাই হয়।

কিন্ত ু উত্তর জানা ছিল না। 

দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠের মধ্যে একটা গেট কেন----- প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল।

গেটটা দিক্ নির্দেশ করছিল অন্য কোথাকারমাঠের মধ্যে দিয়ে কিন্ত ু আবার মধ্যে দিয়ে নয়।

"কিরে গেটটা দিয়ে ঢুকবি নাকি?"--- অ আ কে জিজ্ঞেস করছিল।

"ঢুকবো!! যদি ফিরতে না পারি!!" ---মনে মনে বলছিল দুজনে; অন্যরা শুনতে পারছিল না।

ইউক্যালিপটাসের বন থেকে হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ আসছিল।

রাত বাড়ছিল, পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছিল চারদিক।

কোথাও কেও নেই, মনে হচ্ছে পুরো ভ্যালিতে শুধু আমরা ছজন দাঁড়িয়ে আছি--- মোমের মতন গলে 
যাচ্ছে রাস্তা ঘাট--- ঝিম ধরে আছে চারদিকে, শুধু অনেক দূরে হোটেল এর আলো জ্ব্লছে।

এ পৃথিবীর শেষ  স্টেশনে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম, সামনে মাঠ, পাঁচিলহীন---তাতে  একটা  তুঁতে রঙের গেট, একটা অন্য পৃথিবীতে যাবার রাস্তা।

All image courtesy :Shounak 



সকালে মাঠের একদিকের ছবি




                                                         ইউক্যালিপটাসের বন



                                                                    
                                                             নেতারহাট ভ্যালি   
                                               

তুঁতে রঙের গেটের ছবি নেই।


                                                                     
                                                                   অন্য গেট


Wednesday, May 18, 2016

ঘুড়ি

ঘুড়িটা উড়ছিল। লাল রঙের। ল্যাজটা লম্বা। কালো দাগ কাটা মতন। নারকোল গাছের পাশ দিয়ে উড়তে উড়তে, গুবলুদের বাড়ির ছাদের উপরে ---আরে আরে এক্ষুণি অ্যান্টেনায় লেগে যেত, জাস্ট বেঁচে গেল।

তাতাই জানলায় বসে ছিল। ঘুড়িটাকে খুব মন দিয়ে দেখছিল। সামনে বাংলা রচনা খাতা খোলা, পাতা গুলো ফরফর করে উড়ছিল। তাতাইয়ের রচনায় মন ছিল না।

সুপুরি গাছে দড়াম করে শব্দ হল। তাকিয়ে দেখে একটা বড় হলদে হয়ে যাওয়া পাতা পড়েছে।পাতায় নীচে হলুদ রঙের ঝাড়নের মতন লুকোনো ছিল এখন সেটা দেখা যাচ্ছে। তাতাই জানে ওটাকে সুপুরির ঝুরি বলে, পরে ওটা  আস্তে আস্তে হলুদ থেকে সবুজ হবে, তাতে সুপুরি ধরবে।

লাল ঘুড়িটা আবার গোত্তা খেল দূরে একটা গাছের মাথায়। আরেকটা হলুদ ঘুড়ি এসেছে, লাল ঘুড়ির পাশে পাশে উড়ছে। হলুদটা লালের চেয়ে একটু বড়ো।

মাঠের গায়ের সাদা বাড়িটার সামনে একটা সাইকেল রাখা। ও বাড়িতে ভুত আছে, কেও জানে না; শুধু তাতাই জানে। দিনের বেলা তাও ঠিক আছে, কিন্ত ু রাতে ওদিকে দেখলে গা ছমছম করে। যেদিন ঝড়ের সময় লোডশেডিং হয়েছিল, বিদ্যুৎ এর আলোয় সাদা বাড়িটা দেখে খুব ভয় করছিল।

হলুদ ঘুড়িটা লাল ঘুড়িকে তাড়া করেছে। তাড়া খেয়ে লাল ঘুড়ি তরতর করে উপরে উঠছে, পেছন পেছন হলুদ ঘুড়ি। এই ধরে ফেলল, না না লাল ঘুড়ি বাঁ দিকে ঘেষে হলুদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেড়িয়ে গেল।

রচনা খাতার পাতা উড়ছে---মাছের আত্মজীবনী, খালি নামটাই লেখা হয়েছে খাতায়।
চোখ আর মন দুটোই ঘুড়ির দিকে।

খুব হাওয়া দিতে শুরু হল। ঘুড়ি দুটোই এলোমেলো ভাবে উড়ছে এবার।
মাঠের শেষে আম বাগানের দিকে চলে যাচ্ছে দুটো। মনে হচ্ছে গাছে আটকে যাবে,  কিন্ত ু না, লাল  হলুদ কে তাড়া করল।  হলুদও চালাক কম নয়, বোঁ করে নীচ দিয়ে বেড়িয়ে গেল।

শিশি- বোতল ওলা যাচ্ছে---"শিশি- বোতল"। দূরে ঘন্টাঘরে চারটে বাজল।
মাঠে যাবার সময় হয়ে গেল।
রচনা পড়ে রইল--না লেখা।
তাতাই এর এখন মাঠে যাবার তাড়া, সবাই চলে আসবে।
নীল আকাশে লাল- হলুদ ঘুড়ি দুটো উড়ছে। দূর থেকে দূরে দিগন্তের দিকে।



Tuesday, May 17, 2016

যুদ্ধ-আলোচনা


"অ্যাটেনশন !"

"অ্যাটাক-----"

"মহারাজা একি আদেশ----এরা আমাদের নিজেদের লোক।"

"নিজেদের লোক!!! কে বলল--- কালকে খবর এসেছে এরা শএুপক্ষে যোগ দিয়েছে।"

"তাই নাকি মহারাজ।"

"হ্যাঁ  মন্ত্রী; কিছুদিন ধরেই সন্দেহ হচ্ছিল, দেখছিলাম উই এর ঢিপির দিকে কিসব গুজ গুজ চলছে, কালকে গুপ্তচর খবর এনেছে, সন্দেহ সঠিক।"

" কি হবে এবার তাহলে রাজা!!

"কি হবে!! যুদ্ধ হবে; যুদ্ধ। শএুর শেষ রাখব না।  উড়িয়ে দেব, জ্বালিয়ে দেব।"

" মহারাজা ভেবে দেখুন, ওদের যদি একটু বুঝিয়ে ঠিক রাস্তায় আনা যায়।"

" ভেবে দেখেছি মন্ত্রী। কালকে সারা রাত ধরে ভেবেছি। কিন্ত ু বুঝলাম তা সম্ভব নয়। ওরা নষ্ট হয়ে গেছে, irreversible mutation বলে একে। আর কিছু করার নেই----আর কোনো কম্প্রোমাইস নয়। "

"কিছুই কি করার নেই, এরা গেলে আপনার কি হবে!!"

" না না এক কথা বোলোনা বার বার--উই এর ঢিপি দিন দিন বাড়ছে, আস্তে আস্তে আমাকে গ্রাস করে নেবে বুঝতে পারছ না।যুদ্ধ ঘোষনা করলাম আমি আজকে। দয়া কোরো না ওদের, উই এর ঢিপিকে দয়া কোরো না।  "


--------------------------------

মহারাজ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

"বাহ বাহ; আমরা জিতছি  তো না কি ??

"হ্যাঁ।  কিন্ত ু।"

"কিসের  কিন্ত ু।"

"উই এর ঢিপির লোকবল অনেক। আর খুব জরুরি লোক আছে তাতে।"

"তাতে কি ??"

"এদের ছাড়া রাজ্য চালাবেন কিভাবে?"

"কেন নতুন লোক আসবে; নিয়ে আসব তাদের।"

"মহারাজ কষ্ট হচ্ছে না আপনার??"

"কষ্ট  তো হচ্ছে মন্ত্রী---- খুব কষ্ট ---কিন্ত ু  যুদ্ধ চলবে।"

" এ যুদ্ধের পর আপনার রাজপাট কিছুই থাকবে না মহারাজ। বুঝতে পারছেন তো।"

"রাজপাট নেই? তুমি আছো তো?"

"হ্যাঁ। আমি আর কোথায় যাব! আছি।"

 " তাহলেই হবে।"

" হবে? রাজত্ব না থাকলে হবে??  তখন আর কিসের রাজা কিসের মন্ত্রী।"

" চিন্তা নেই। রাজত্ব আবার হবে। আগে উই এর ঢিপি সমূলে বিনাশ হক।"

" এ  বড়ো কঠিন কাজ কিন্ত ু--- সব কিছু নতুন করে গড়া---"

" তাতো হবেই-- নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-- কঠিন তো হবেই মন্ত্রী। ও নিয়ে ভেবোনা। তৈরী হও।"

এখন আমার রক্তকণিকারাও জানে, তৈরী হবার মানে।


  











দুপুর

রান্নাঘরের তাক থেকে আচারের শিশিটা নামাতে গিয়ে আরেকটু হলেই মরা আরশোলাটার উপরে হাত পড়ছিল। দুচ্ছাই বলে খুব সাবধানে শিশিটা নামালাম। আচার মুখে পুরে শিশি তুলতে যাবো অমনি দেখি মোটা হুলো জানলায় বসে গম্ভীর মুখে চেয়ে আছে। 
"যা ভাগ!!" কে কার কথা শোনে, আর এমনিতে মোটা হুলো কাউকে পাত্তা দেয় না, বড়োদের ও না, আমাকে কে তো নয়ই
"কিরে আচার খাবি নাকি?"--শুনে এমন একটা মুখ বানাল তাতে মনে হল দেওয়াল এর সঙ্গে কথা বলছি। বড্ড অহংকার হুলোবাবুর।

মরুক গে --বরং ছাদে গিয়ে কাক তাড়ানো যাক। কাজ কি আর একটা। 
ওমা সবজে- হলুদ রঙের ওটা কি?? একেই বুঝি গিরগিটি বলে, লম্বা ল্যাজ, কেমন বেল গাছের ডাল ধরে দুলছে দ্যাখো, গলার কাছটা ধুকপুক করছে। তাড়াবো!! না থাকুক, ভালোই দেখতে। খাবার ঘরের দেয়ালে যে কালো ছোপ-ছোপ টিকটি্কিটা থাকে, তার চেয়ে ভালো মনে হচ্ছে।কালো ছোপ-ছোপ একদিন যদিও ডাইভ দিয়েছিল কালু মামার টাকে, তার জন্য ওকে একটু ভাল বলাই যায়। 

ওরে বাবা,  গিরগিটি দেখতে গিয়ে কত সময় বেরিয়ে যাচ্ছে। ছাদে যাই বরং।

পাশের বাড়ির গুলটি আবার কাঁদছে, মেয়েগুলো এত ছিচঁকাদুনে হয়। দুপুর বেলা কোথায় মজা করে ঘুরে বেড়াবে না খালি কান্না। আমার বাড়ির লোকগুলোও এক রকম, নাকে তেল দিয়ে ঘুমুবে দুপুরে, অবশ্য তা না হলে আচার খাওয়া নিয়ে হত হুলুস্থুলু।

ওমা কুলপিওলা এসেছে, কিন্ত ু টাকা কই!! একদিন গুলতি দিয়ে কুলপিওলার টাকে না মেরেছি, রোজ দুপুরে এসে চেচাঁমেচি, এদিকে জ্বর হওয়া থেকে ডাক্তারবাবু বলেছে ওসব খাওয়া বারণ। আর মা বলেছে  কথা শুনলে একটা ভাল গেম কিনে দেবে, সুকান্তের যেটা আছে। স্কুল খুললে ওটা নিয়ে যাবো, সুকান্তের  অহংকার বের হয়ে যাবে।

 ছাদে কাকেরা নেই আজকে। ইসস পেয়ারাগুলো কি বাজে খেতে। মাসি উঠে গেছে নাকি, কার পায়ের শব্দ রে বাবা। না না ঠিক আছে, কেও নেই। ঘু ঘু ডাকছে, ওদিকে পুকুরে এই বিকেল বেলা কারা চান করছে আবার।

পরের বছর আমি সাঁতার শিখব, পুকুরে নয়, পুল এ গিয়ে।

নাড়ুদের ছাদে একটা টিয়া পাখি এসে বসল। এখানে বসলে ধরতে পারতাম, খাঁচায় রাখতাম। যদি ও দিদা বলে পাখি খাঁচায় রাখলে ওদের দুঃখ হয়।
বিকেল হয়ে গেল যে, মাঠের দিক থেকে নাড়ুর গলা শোনা যাচ্ছে। সোমবার থেকে আমি ও মাঠে যাব।
বকগুলো ভি এর মতন করে বাড়ি ফিরছে। পুকুর ধারের গাছে ওদের বাসা। পেয়ারা গাছের কাকটা এখনো ফেরেনি। মাসি উঠে পড়েছে , ঠাকুর ঘরে ঠুং ঠাং শব্দ হচ্ছে।

ট্রেন যাচ্ছে। পরের ট্রেনে বাবা-মা অফিস থেকে ফিরবে, আজকে বিকেলে চাওমিন খাব।
নীচে যাই---নইলে এখুনি খোঁজ পড়বে।














Sunday, May 15, 2016

Letter to my little brother who turns 16 today

Dearest Arnab (see I am using your good name),

You are 16 today and you must know how happy and proud I am for you now.
Not because you have just passed your 10th board exam with flying colors, rather because you worked hard and have shown resilience. But this letter is not to remind you of that.

This letter will be a piece of lessons which Pinky has to share with you. She has learnt them in a hard way (some of which you know) in the 14 extra years she has inhabited  this planet.  

You are still a kid and part of the letter would obviously won't appeal much to you. Just remember to remember those lines, they may come handy at times.

1) Success is not measured by the marks you score in the examination. Marks are important and would be important till you are a student, but success is something much deeper and permanent than those. It is the ability to continue when you are beaten and broken. 
It is not easy but BELIEVE in yourself and keep believing during hard times. 

2) Trust the people who love you selflessly. It takes time to find them but they do exist. Learn to extend your hand first. Love the people who love you.

3) All our aspirations do not materialize. But that is okay. You may not get everything you want, or be everything your parents want you to be. That is okay too. Our goal changes, and that is called adaptation. Adaptation is not failure, it is key to a bigger achievement. 
This is not a negative thought, this is the practical lesson, which you will face sooner or later. 

Just remember, you are lucky to have a sharp mind, healthy body and lots of courage and resilience. Be thankful for that.
You are a HERO to me. I love you for what you are and I will keep on doing that, FOREVER.


 - Pinky


NOT A BIRTHDAY PICTURE:




Thursday, May 12, 2016

মেয়েটা

আমরা সমুদ্রের জলে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছিল। পায়ের নীচ থেকে বালি সরে যাচ্ছিল বার বার। আমরা ছাড়া পুরো বীচ এ আর কে ও নেই। খালি একটা ছোট মেয়ে, যে জলের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল।

অগুন্তি ঢেউ, জলের উথাল-পাতাল। আমরা বার বার পড়ছিলাম, জল চলে যাচ্ছিল আমাদের উপর দিয়ে। মেয়েটা এসে আমাদের হাত ধরল। 
"দিদি দিদি এভাবে দাঁড়াও---এভাবে বালিতে পা ঢুকিয়ে, নইলে পড়ে যাবে"। ----"আমার উপরে পড়লে তো"।

ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছিল। আমরাও পড়ছিলাম, একে অন্যের হাত ধরে, হেসে গড়িয়ে, ঢেউ এর ধাক্কায়।
মেয়েটা ও। ওর উস্কো-খুস্কো কোনোদিনও তেল না লাগানো চুল, রঙ ওঠা জামা।
"এই তুই স্কুল এ যাস?"
"যাই তো, আজকে ছুটি। দ্যাখো একটা বড় ঢেউ-- ও দিদি ঠিক করে দাঁড়াও; আমার উপরে আর পড়োনা এবার "।

মেয়েটার চুলের পাশে বালি চিকচিক করছিল, সারাক্ষণ হাসছে, দাঁতের মধ্যে বালি। আমাদের হাত  ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। সমুদ্রজলে। চেনা অচেনা নেই, "এই দিদিটা একদম পারছে না, খালি পড়ে যাচ্ছে,"। হেসে যাচ্ছিল, সংক্রামক হাসিটা ছড়িয়ে দিচ্ছিল নোনতা বাতাসে।

"কোথায় থাকিস?"
"ওই তো--- কোন এক দিকে হাত তুলে দেখাল"।
"বাড়িতে কে আছে?"- "আছে আছে বাবা মা আছে; ঢেউ আসছে দ্যাখো "।

বছর দশেক বয়স। এখনো বড় হয়নি, জলের মধ্যে কোনোদিনও না দেখা দিদিদের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

ছেলেমানুষ, অবিশ্বাস শেখেনি, ভয়ও না। দিদিদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী বার ও সমুদ্রে আসছে,  
ওর কিসের ভয়। মানুষকে কিসের ভয়, অচেনা কয়েকটা দিদি-দাদা, তাদের কিসের ভয়।

২০১১ এর গোপালপুর। 

এখন মেয়েটা নিশ্চয় ১৫-১৬। সময় বদলে গেছে চোখের সামনে। এখন কলকাতার রাস্তায় রাত হলেই দিদিরাও খুব ভয় পায়। দিদিদের মায়েরাও।

এত দিন এ মেয়েটা বদলে গেছে, এখন সবাই ওর অচেনা। চোখের সামনে বদলে যাওয়া পৃথিবী আর সবাই।
এখন সমুদ্র এর ধারে থাকা মেয়েটার কথা ভেবে হীম হয়ে যায় ওর বাবা- মা এর বুক। ভয় শেখায়, দ্বিধা  শেখায়, অবিশ্বাস শেখায় --- অস্ত্র তুলে দেয় তূণীরে।

Image courtesy: পুরনো  নোকিয়া ফোন