statcounter

Friday, July 29, 2016

ঢোলু

আজ থেকে ঠিক একমাস আগে প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে চেপে ঢোলু এলেন। সাথে তেনার মর্মরহর্ম এবং মাস পাঁচেকের খাবার দাবার (ন্তুন জায়গায় যাচ্ছি, কি সাপ ব্যাং খেতে দেবে কি দরকার রিস্ক নিয়ে !)
দেবদত্ত বলে গেল সকালে বিকেলে চারটে করে লাল- হ্লুদ-সবুজ গুলি দেবে, আর মাঝে মাঝে জল চেঞ্জ। গুলির সংখ্যা এখন ছয়। এক মাস ধরে ঢোলুকে পর্যবেক্ষন করে যা যা বুঝলাম এই বেলা লিখে রাখছিঃ
১) প্রচন্ড কুঁড়ে---সারাক্ষ্ণ কি করে জলের নীচে গিয়ে ঘুমোয় কে জানে।
২) খাবার খেতে খুব নাটক করে। শুরুতে খেতে দিলেই টপাটপ খেয়ে ফেলত, এখন তাকে সাধ্যসাধনা করেও খাওয়ানো যায় না। খাবারগুলো কে পুরো খায়ও না, ছিবড়ে করে নিচে ফেলে রাখে।
৩) বু বু করে মুখ থেকে হাওয়া বের করে আর উপরে এসে জল খায়।
৪) খুব ভিতু। বাড়ীতে কেউ না থাকলে মরে যাবার অ্যক্টীং করে পড়ে থাকে।
৫) শব্দরসিক--- ওর কাছে বসে সবাই আড্ডা দিক বা গান চালাক বা নিদেন পক্ষে ঝগড়া ক্রুক--- ঢোলু নেচে কুঁদে একশা।
৬) ঘোরতর নার্সিসিস্ট, নিজেকে দেখতে ব্যস্ত। টোকিয়ো ( ঢোলুর খাবার) যদি জারের সাইডে ভাসে তবে তার দিকে যেতে যেতে যেইনা নিজের মুখখানির প্রতিবিম্ব দেখতে পেল অম্নি খাবার ছেড়ে লাফিয়ে নিজেকে দেখতে শুরু করে দেবে। তার পর ফিন নাড়িয়ে, বাদামী- নীলচে ল্যাজ খানি বাঁকিয়ে নানা রকম করে নিজের রূপদর্শন করবে অক্লান্ত ভাবে।
৭) পড়াশুনায় কোনো মন নেই। একদিন একটা পেন দিয়েছিলাম। দৌড়ে এসে (পরুন সাঁতরে) মারল এক ঢু । পরের দিন আবার পেন দিতে নো পাত্তা। পেনটা জল থেকে তোলার সময় ওর গায়ে একটু লেগেছিল (ইচ্ছে করে নয়রে), তার পর থেকে পেন দেখলে হয় মরার অ্যক্টীং অথবা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। আজকে একটা পেপার দিয়েছিলাম, চেয়েও দেখলনা।



পুওর ছবি---ভাগ্যিস ঢোলু দেখতে পাচ্ছে না। পারলে কক্ষনো এগুলো আপলোড করতে দিতনা।
ঢোলুর একা একা অসুবিধা হচ্ছে। কিন্ত ু ফাইটার ফিস কি আরেকটা মাছের সঙ্গে থাকতে পারে??? মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।


Tuesday, July 26, 2016

গত সপ্তাহে


জীবনের আল্টিমেট উদ্দেশ্য হল  বি হ্যাপি, বি কন্টেন্ট। এবার সবার খুশি থাকার হাজার কারণ হতে পারে। কেউ সাজুগুজু করে খুশি, কেউ আবার পাহাড়ে উঠে। কেউ দুপুরে ঘুমিয়ে, অথবা আপিসে প্রোমোশন পেয়ে, কেউ আপিস কেটে বেড়াতে গিয়ে। তবে ভাল ভাল খেয়ে মোর ওর লেস সবাই খুশি হয় ( অন্তত আমার আসেপাশে যারা আছে তারা তো হয়)। এর জন্য ভালো ভালো রান্না করে বাড়ীতে বসে খাওয়া যায়  আবার নাচতে নাচতে রেস্ট্যোর‍্যান্টে গিয়েও কাজটা সমাধা করা যায়।  প্রথমটা খুবই পরিশ্রম সাধ্য (আর আমি আর কই রান্না করি)। তাই দ্বিতীয়টাই বাছা হল। 

এদিকে আবার "সিক্রেট লাইফ অফ পেটস" রিলিজ করে হল থেকে চলে যাবে যাবে করছে; এটা দেখব বলে মাস চারেক ধরে ওত পেতে আছি। হাতে সময় খুব বেশী নেই, দুদিন বাদে অপরেশন হয়ে জানিনা কতদিন শুয়ে থাকতে হবে। সব মিলিয়ে একটা জ্রুরী অবস্থা। বুক মাই শো দেখে শো টাইম কনফার্ম করে খাবার দোকান খোঁজা হল। আর ঝটাপট প্ল্যান হয়ে গেল- -- দুপুরে বোম্বে ব্রাসারিতে লাঞ্চ, তার পর সিনেমা দেখে মলে ঘোরাঘুরি এবং বাড়ী ফিরে আসা।

পার্ক সার্কাস এর মুখে যে বিশাল মল হয়েছে, যাতে এতদিনে আমি বাদে কলকাতার সমস্ত লোক গিয়ে ঘুরে দেখে কেনাকাটি করে খেয়ে দেয়ে ফিরে এসেছে, সেখানে যেতে হল। এর আগে বহুবার সামনে থেকে বাস বা ট্যাক্সি করে হুস করে চলে গেছি , , কিন্তু ভেতরে ঢোকার দরকার পরেনি কোনোদিন। এবার এই সিনেমার কল্যাণে সেটা হল।

পাঁচ তলায় খাবারের দোকান। বেশ সুন্দর ছবি দিয়ে সাজানো। হলুদ রঙের কাঠের প্যানেল করা বড় বড় কাচের জানলা। ছবি ছাড়া দোকান সাজাতে ব্যবহ্ৃত হয়েছে পুরনো কাপ প্লেট হাতা খুন্তি থালা বাটি গ্লাস হামান দিস্তে নারকোল কুড়ানী ই্ত্যাদি।  ন্তুন দোকানে একটু পুরোনো ছাপ আনার চেষ্টাটা  দেখে মন ভালো হয়ে গেল।

খাবার দুরকম- বাফেট পাওয়া যায়, আবার আ-লা-কারতে ও। আমরা বাফেট নিলাম। একে বলা হয় ক্যান্টীন স্টাইল, কেন একটু পরে বোঝা গেল।
কাচের গ্লাসে এল স্যুপ--দেখতে দুধ দেওয়া চা এর মতন। তার সঙ্গে টা এল তন্দুরী চিকেন, পেঁয়াজ দেওয়া পনীর (পনীরকে টুকরে) , কারিপাতা দেওয়া মাছ ভাজা, চিকেন কাটলেট, বড়াপাও, মুড়ি-চানাচুর আর পেঁয়াজী। এর সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ, লেবু আর ধনে পাতার চাটনি। টা গুলো সব স্টীলের প্লেটে --এই হল গিয়ে ক্যান্টীন স্টাইল।



পনির আর তন্দুরী চিকেনটা অসামান্য ছিল--আমরা দুবার করে নিলাম। 

এই সব খেতে খেতে মেনকোর্স এসে গেল। ডাল, মাটন কিমা, গার্লিক নান , প্রন কারি,  বোম্বে স্টাইল   চিকেন বিরিয়ানি। এত ভাল মাটন কিমা আমি কখনো খাইনি, মুখে দিতেই গলে গেল যেন। বিরিয়ানি খেতে মশলা দেওয়া চিকেন ভাতের মতো, আমার ভালো লেগেছে। 
এখানের বাফেটের বিশেষত্ব হল খাবার আগে থেকে রান্না করে সাজিয়ে রাখা থাকে না, সব টেবিলে এসে দিয়ে যাচ্ছিল। আমার মত কুঁড়ের জন্য আইডিয়াল।






এরপর এল আইসক্রীম আর চকোলেট পুডিং। আর তিন রকম লজেন্স। খাবার শেষ করে বিল মিটিয়ে আমরা সিনেমা দেখতে ছুটলাম।



সিক্রেট লাইফ অফ পেটসঃ

ম্যাক্স হচ্ছে একটা জ্যাক রাসেল টেরিয়ার, যে থাকে কেটির সঙ্গে। ম্যাক্সের জীবন ভালোই কাটছিল যতদিন না কেটি নিয়ে এল ডিউককে।  দুটো মিলে হারিয়ে যাওয়া, না- পোষা জন্তুদের সিক্রেট সঙ্ঘঠনের হাতে পরা, ম্যাক্সের বন্ধুদের তাকে খুঁজতে বেরোনো, গল্পের শেষে সবার বাড়ী ফিরে আসা এই নিয়ে দেড় ঘণ্টার জমজমাটী মজা।


বইপত্রঃ

শপিং মলে চারদিকে খালি সেল সেল আর সেল। এই সব দেখে দিগবিদিক শূন্য হয়ে আমরা বেসমেন্টে নেমে গেলাম আর চারটে বই কিনে ফেললাম।
১) নবনীতা দেবসেন - গল্পসমগ্র ১
২) বানী বসু- মৈত্রেয় জাতক
৩) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথা
৪) সুপার থার্টি

আজকে আবিস্কার করলাম গল্পসমগ্র১ এর লাস্ট চারটে পাতায় কোনো প্রিন্ট নেই।


কলকাতা  স্কাইলাইন


সংগ অফ ইন্ডিয়া ঃ Song of India (a.k.a. Dracaena reflexa)ঃ

ঢোলুর পরে এটি আমার নতুন সঙ্গী, গিফটে পেয়েছি। নীল রঙের বো বাঁধা ঝুড়িতে চেপে তিনি এসেছেন, এখন আমার জানলায় বসে থাকেন। বৃষ্টিতে আস্তে আস্তে পাতা নড়ান আর খুশি থাকেন।












Monday, July 18, 2016

দয়াময়ীর গল্প

ঠিক রোজকার মত বড় ঘড়িতে তিনটে বাজলো, উঠে বসলেন দয়াময়ী। ঘুম আজকাল এমনিতেই আসেনা। তাও শুয়ে থাকলে একটু বিশ্রাম হয়, আর সারা রাত জেগে বসে থাকাটা ভাল দেখায় না। পাশে অঘোরে ঘুমচ্ছে লীলা, তাতো ঘুমুবেই, সারাদিন কম পরিশ্রম তো করে না।

দরজা খুলে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলেন দয়াময়ী। বারান্দার পাশ দিয়ে খিড়কি দোর, তার নীচে ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে পুকুরে। অন্ধকারে স্থির হয়ে আছে জল। ঘাটের কাছে শ্যাওলা পড়েছে। কিছুক্ষন জলের দিকে চেয়ে বসে রইলেন তার পর ডুব দিলেন জলে।

ঠান্ডা জল, শান্ত। কি শান্তি। সারাদিনের মধ্যে এই সময়টারই অপেক্ষায় থাকেন তিনি। সাঁতার ভালোই জানেন। ছোটবেলায় গঙ্গায় কেটেছেন। দুতিন বার ডুব দেবার পরে জলের নীচে আবছা মতন কি যেন দ্যাখা গেল। বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে জলের নীচের দিকে যেতে লাগলেন দয়াময়ী। কি যেন আছে পড়ে। না না একি দেখছেন । লীলা তো বিছানায় শুয়ে ছিল, এই মাত্র দেখে এসেছেন। এ কে লীলার মত। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল দয়াময়ীর, তাড়াতাড়ি উঠে এসে হুড়মুড়িয়ে ঘরের দিকে ছুটলেন তিনি। কি দেখবেন জানেন না, ভগবান যা দেখলাম যেন সত্যি না হয়। ঘরে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেখেন বিছানায় অঘোরে ঘুমোচ্ছে লীলা। না ঘুমিয়ে মাথাটা গেছে। কি দেখতে কি দেখি। নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজের উপরেই রাগ ধরে যায়।

সকাল হয়েছে। প্রতিদিনের মতোই স্কুলে দৌড়ালো লীলা। রিক্সা করে স্টেশন, তার পর ট্রেন। প্রায় ১ ঘন্টার রা্স্তা। স্কুলে দিনে ৫ টা ক্লাস, তারপর পরীক্ষার প্রশ্ন বানাও, খাতা দেখ, হাজার কাজ। বাড়ির কাজ সকালে বিনু মাসিই দেখে, তাই রক্ষা।  

সন্ধ্যেবেলা। আবার এসেছে দাড়িওলা ছেলেটা নাম সুজন। চা খেয়ে লীলার সঙ্গে বসে গল্প করছে। দেখে গা জ্বলে যায় দয়াময়ীর।  সুজন না কুজন। এই রোগাপানা চাল চুলোহীন ছেলেটার সাথে লীলার কিসের এতো ভাব ভেবে পাননা। না আছে টাকা ,না আছে রূপ, না বাপ মায়ের খোঁজ। ভাবলে মাথা ঝন ঝন করে তার। তিনি যতদিন আছেন বিয়েটা কোনো ক্রমে আটকে আছে, চলে গেলে ওই বুড়ী ধাড়ী মেয়ে এর গলায় মালা দেবে নিশ্চয়। এই সব ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরের দিকে চলে যায় দয়াময়ী। ছেলেটার সামনে আসে না, দেখলে আবার কথা বলতে হবে-- তার ভয়ে। রাতের খাবার খেয়ে সুজন চলে যায়। লীলা ঘুমুতে আসে বিছানায়। সাবধানের মার নেই,  দরজাটা ভাল করে বন্ধ হল কিনা দেখে আসেন দয়াময়ী। আবার একটা নির্ঘুম রাত, মাঝ রাতে নিশির ডাকের মতন পুকুরে চান। 

আবার সকাল হয়।
লীলা স্কুলে যায়।
দয়াময়ী সারাদিন বাড়ীতে ঘুরে বেড়ান। বিনুর মায়ের কাজের তদারকি করেন। বারান্দা থেকে ছাদ, ছাদ থেকে আবার রান্নাঘর, সব দিক দেখাশোনা করতে তো হয়। ঝাড়পোঁছ, জিনিসপত্র গোছানো বিনুর মায়ের কাজ। সে এদিকে খুব ফাঁকিবাজ আর তার উপরে বুড়ী। আগে দয়াময়ীর কথা শুনত, আজকাল কানে কালা হয়েছে কিনা কে জানে; কোন একটা কাজ বললে করেনা। লীলাও হয়েছে তেমনি। পুরনো বাড়ি,  এদিক ওদিকে রঙ চটেছে, সিঁড়ির কোণে ঝুল জমেছে অন্ধকার করে, রেলিং এ মরচে পড়েছে, লীলা সারাদিন ব্যস্ত, সময় নেই এদিকে তাকানোর। দেখে দেখে দীর্ঘশ্বাস পড়ে দয়াময়ীর।

 -------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

কদিন ধরে লীলা জিনিসপ্ত্র গোচ্ছাছে। বাড়ি নাকি বিক্রি হয়ে গেছে। তা ভাল, এই পুরোনো বাড়ী, দেখাশোনা করা মুসকিল। তবে কি একবারও দয়াময়ীকে জিজ্ঞেস করতে পারত লীলা, বড় অবাধ্য হয়েছে যবে থেকে ওই ছেলের চক্করে পড়েছে।  
যাবার দিন কতগুলো লোক এসে সব জিনিসপ্ত্র টানা টানি করে ট্রাকে তুলল। বিনুর মা চোখের জল মুছছে। দয়াময়ী দাঁড়িয়ে  দাঁড়িয়ে  দেখলেন। লীলা গাড়ীতে উঠে বসল। পাশে বসলেন দয়াময়ী। গাড়ী ছেড়ে দিল, শ্বশুরের ভিটে ছেড়ে চল্লিশ বছর পড়ে দয়াময়ী চললেন মেয়ের কেনা নতুন ফ্ল্যাটে।

 -------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

নতুন ফ্ল্যাটই ভাল। স্কুলের কাছে, আর ধারে কাছে পুকুর টুকুর নেই। ঐ বাড়ীতে আর ভালো লাগত না লীলার। বাবা চলে যাবার পর থেকেই  মায়ের অসুখ বেড়ে গেছিল। লীলা নাকি কাকে বিয়ে করে চলে যাচ্ছে এই ভাবনায় ঘুমোতে পারত না। তার সাথে খিড়কি পুকুরে রোজ রাতে চান করতে যাওয়া। সেটাই কাল হল। আজ দয়াময়ীর জন্মদিন। পায়েসর বাটি তাঁর ছবির সামনে রাখতে রাখতে ভাবে লীলা।  ফুলের মালা, ধুপ আর পায়েসের সুগন্ধ মিলেমিশে যায়।  দয়াময়ীর ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি, লীলা পায়েস বানায় জব্বর; হাতের তার একদম ঠাকুমার মতন। 

লীলা স্কুলে বেরোয়। বাইরে থেকে তালা দিয়ে যায়। দয়াময়ী মনে মনে বলেন দুগগা দুগগা।






Saturday, July 9, 2016

দুচ্ছাই

কিছুই ভাল লাগেনা আজকাল। সামনে অনন্ত সময় খোলা মাঠের মতন ছড়িয়ে আছে। ফেলে নষ্ট হচ্ছে। সেই দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস পড়ছে বড়বড়। মাথার মধ্যে কিল বিল করছে হাজার চিন্তা। যাদের অনেকের শেপ ফর্ম ও অজানা, তাও ভীড় করে আসছে, জলের মধ্যে থেকে ঘাই মেরে উঠছে। কমসে কম চারমাস হলে গেল আরো মিনিমাম তিন মাস। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙি ভাঙি করছে এবার।

আমার পোঁতা জবা গাছ দুটোই মরে গেছে। শুধু নয়নতারার গাছটা এখন রোজ ফুল দিচ্ছে; তার কমিট্মেন্ট প্রশংসনীয়।

ন্তুন বাড়ীতে এসে মা সারাক্ষণ কমপ্লেন করে যে আগের বাড়ীর সব ভাল ছিল, এখানে সব খারাপ। সব খারাপ আমার মনে হয় না, তবে আগের বাড়ী থেকে বৃষ্টি যে অনেক ভাল দেখা যেত সেটা নিয়ে আর কোন সন্দেহ নেই। গত ২ সপ্তাহ ধরে আমার নিজের মনকে  নানা রকম মিথ্যা কথা শোনানোর পর আজকে সেটা মেনেই নিলাম।
পশ্চিম আকাশ কালো করে থরে থরে মেঘ জমা হত। তারপর আসত যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। মাঠের মধ্যে গাছগুলো হাওয়ায় দুলতো। জানলা থেকে দেখতাম। বৃষ্টিতে গাছগুলো সব চান করে নিত,পাতার রঙ ঝকঝকে সবুজ। ঘাস আর ন্তুন নুতন আগাছা, তারাও ফিটফাট হয়ে যেত। যখন ঝড় আসত বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। হু হু করে হাওয়াতে বাস স্ট্যান্ডের দিকে গাছগুলো এদিক-ওদিক দুলত। ওরকম আরাম আর শান্তি যেন আর কোথাও নেই। খুব বৃষ্টির পরে বহুকাল রং না হওয়া কোয়াটার্সের বাড়ী গুলোর গায়ে কালো কালো ছোপ ফুটে উঠত। এই নতুন জায়গায় সব সুন্দর সুন্দর ন্তুন রং হওয়া বাড়ী, বৃষ্টিতে তাদের কিছু হয় না; তারা কোনো গল্প বলে না।

এই বিরক্তিকর সময়ে এক মাত্র ভাল জিনিস হল ঢোলু বাবু। সারাদিন ঘুমিয়ে এখন রাতের বেলা খেলা করে বেড়াচ্ছে। বোলের ধার ঘেসে গোল গোল করে ঘুরে আর মুখ থেকে বু বু করে বাতাস বের করে কি আনন্দ তা ঢোলুই জানে। আর ভালবাসে শব্দ। আমাদের বকবকানি বা ইউটিউবের গান, যেকোনো রকম আওয়াজেই সে খুশী।

আমি সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান করছি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজও সেই ঘ্যান ঘ্যান
কমাতে পারছে না। শপিং থেরাপী ( দুটো বই কিনলাম) ও না। আগে এরকম অবস্থা হলে হেয়ার স্পা করাতাম; এখন সেই উপায়ও নেই । তাই ব্লগ লিখে দুঃখ কমানোর চেষ্টা করছি। 

আপনারা ঘ্যান ঘ্যান কমাতে কি করেন ??

আমাকে দু চারটে সাজেশন দিন ( ভাল ভাল খাওয়া বাদ দিয়ে); সেগুলো দেখব ট্রাই করে।




Thursday, July 7, 2016

সময়

দুদিন বসে ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ পড়ে শেষ করতে পারলাম। ১১৩ পাতার ট্রাভেলগ। জার্মানী, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, পোল্যান্ড আর রাশিয়া ঘুরে লেখা।  লেখক যখন গেছেন এই দেশগুলোতে তখন ইউরোপ জুড়ে চলছে রাজনৈতিক পালাবদল। হয়েছে সমাজতন্ত্রের পতন, বার্লিন ওয়াল ভেঙ্গে দুই জার্মানী মিলেছে, রুমানিয়াতে সেসেস্কু উৎখাত, পোল্যান্ডে এসেছে নুতন সরকার, আর সোভিয়েত ইউনিয়ন  হয়ে গেছে ভেঙ্গে টুকরো  টুকরো। সেই নিয়েই লেখা ভ্রমণকাহিনী।  অনেকদিন পরে টানা একটা বই পড়ে শেষ হল। অভাবটা সময়ের ছিলনা; ছিল ধৈর্যের। এই বইটার শুরুর দিকে পড়ছি কিন্তু বুঝছিনা দশা হয়েছিল। ট্রাভেলগ কিছু জটিল ব্যাপার নয়; তাও হচ্ছিল। বার বার ফিরে যেতে হচ্ছিল আগের পাতায়। মনোযোগের অভাব এবং স্মৃতিশক্তির দোষ। শেষে বইয়ের ৮০ পাতায় পৌঁছে মাথার মধ্যে যেন এলো জ্বলে উঠল। এতক্ষ্ণ যা যা পড়ছিলাম তা তো বটেই , তিন বছর আগে পড়া কেন ফলেটের " দ্য সেন্চুরী ট্রিলজী " (এর বই এর কন্টেন্টের সঙ্গে মিল আছে) সেগুলোও মনে পড়তে শুরু হল। তখন বুঝলাম সমস্যা আসলে মনোযোগের নয়, সময়ের। একটা বই পড়ে তার আত্তীকরণ হবার জন্য মিনিমাম একটা টাইম দিতে হয়,  এতোক্ষ্ণ কাউন্টডাউন চলছিল, ৮০ পাতায় পৌঁছে ঘন্টা বেজেছে। ইঞ্জিন গরম হয়েছে; যা যা ইনফরমেশন জমা হয়েছিল তাদের প্রসেসিং হয়ে গেছে, বাকি নতুন ইনফোদের ওয়েটিং টাইম কম, তারা হুড়মুড় করে প্রসেস হচ্ছে।

জীবনের বাকি জিনিসগুলোও এরকমই। পরীক্ষার প্রস্তুতি থেকে রান্নাবাটি শেখা, ল্যাবের প্রজেক্ট, থেকে নতুন সম্পর্ক এরকম আরো পাঁচশ হাজারখানা বিষয় সব কিছুই একটা মিনিমাম সময় দাবী করে। তার আগে তারা মোটেই ওয়ার্কিং কন্ডিশনে রিচ করেনা। বিশেষত সদ্যোজাত অবস্থায় রাতারাতি কাজ করা সম্পর্ককে আমি সাঙ্ঘাতিক সন্দেহের চোখে দেখি। আমার সিনিকাল মনে এই ভাবনাই আসে যে নিশ্চয় কিছু ইনফরমেশন মিস হচ্ছে, পুরো ছবিটা স্পষ্ট নয় তাই এতো ফ্ল-লেস দেখাচ্ছে। 

এই সময় জিনিসটাই খুব মজার। এই গুচ্ছ গুচ্ছ প্যাকেট ভরতি ছিল-- আবার পরের মুহূর্তেই প্যাকেট ফাঁকা। সেই ভরতি আর ফাঁকার মাঝের ফোকরে যেটুকু জমা থাকে সেটাকে ইউস করে নেওয়াটাই আসল চ্যালেঞ্জ। যে যত বেশি করতে পারবে তার তত লাভ। তবে আমার মত লেট লতিফদের কথা আলাদা---তাদের কাছে সময়ের দাম এত বেশি যে কিপটের মতন আস্তে আস্তে খরচ করতে গিয়ে শেষে দেখা যায় প্যাকেট শূন্য, হাতে পেন্সিল।

তবে যেরকম উধাও হয়ে যাওয়াটা সময়ের ধর্ম, সেরকম ফাঁক ভরানোটাও তারই কাজ। যেসব পরিবর্তন অযোগ্য অবস্থা দেখে এখন মুখ বেঁকিয়ে, ঠোট ফুলিয়ে বলছি ভালো না, বিচ্ছিরি, সময়ের কাজ হচ্ছে তাকে চলনসই করে দেওয়া। সইয়ে নেওয়া। ভুলিয়ে দেওয়া।আর সেগুলো সর্বদা সময় সাপেক্ষ।

তাই দুনিয়া লেটুরা এক হন। আস্তে আস্তে কাজ করা নিয়ে লজ্জা পাবেন। রেসটা তো কচ্ছপবাবুই জিতেছিলেন। আর সময় খুব দামী; তাই দৌড়াতে গিয়ে ফেলে ছড়িয়ে নষ্ট করবেন না। আরামে থাকবেন, মনে রাখবেন সময়ের শেয়ার মার্কেটে ইনফ্ল্যেশন নেই।








Saturday, July 2, 2016

দুদিন

দিন ১)

সকাল পাঁচটায় কোনো অ্যালার্ম ছাড়া ঘুম ভেঙ্গে গেলে কি কি হয়।

জল খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়াটাই বেস্ট পসিবল অপশন।

কিন্তু বারান্দায় গিয়ে দেখলাম সুয্যিবাবু আকাশে উঠে বসে আছেন। সাত সকালে তার মেজাজ প্রসন্ন। ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে , যেন মরনিং ওয়াক এ বেরিয়েছে বাতাস মশাই। গাছেদেরও মুড খুব ভাল, পাতা নেড়ে নেড়ে বলছে একে অন্যকে সেটা। গাছেরা তো আর আমার মত নয়। রোজই তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায় সুয্যিবাবুর অ্যালার্মে। সুপুরি গাছে আলো পড়ে অর্ধেক পাতায় সোনালী রঙ ধরেছে, তাতে তার খুশীর সীমা নেই। সাদা মেঘগুলো আস্তে আস্তে অফিসে যাচ্ছে, সক্কাল সক্কাল নো ট্র্যাফিক জ্যাম।

এই সব দেখে খুশী মনে আবার ঘুমিয়ে পড়া গেল।

পরে দুপুর বেলা দেখলাম কয়েকটা মেঘের আমার জানলার ঠিক সামনে ডিউটি পড়েছে। সাদা জামা পরে তারা গোল হয়ে গল্প করছে। আকাশের রং শরৎকালের মত নীল। সুয্যিমশায়ের আজকে কাজ করার মন নেই। তিনি আলতো চাদর জড়িয়ে ভাতঘুম দিচ্ছেন।

বিকেলবেলা কয়েকটা বাইরের মেঘ এসে ভীড় করল। তাদের আপ্যায়ন তো করতেই হবে। তাই সুয্যিবাবু বাড়ী যাবার আগে নিজের রূপচ্ছটা বিকীর্ণ করলেন। গোধূলির মায়াবী আলোতে ভরে উঠল চারদিক। আকাশের রং নীল থেকে গোলাপী, গোলাপী থেকে বেগুনী হল। শেষে চাঁদমামা এলেন অফিসে। তার হাতে চাবি দিয়ে সূর্যিবাবু  ঘুমুতে গেলেন। গাছেরা টা টা জানালো, আর নিজেরা ঘুমিয়ে পড়ল।

দিন ২)

সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার। ছাই রঙের মেঘেরা গম্ভীর ভাবে আসা যাওয়া করছে। আর মাঝে মাঝে ঝুপ ঝুপ করে জল ঝরিয়ে যাচ্ছে। সুয্যিবাবু ছুটিতে গেছেন। গাছেরা চান টান করে ঝকঝকে হয়ে অপেক্ষা করছে। আজকে সারাদিন তাদের রেনপার্টি।

দুপুরের দিকে কয়েকটা সাদা মেঘ হাওয়া খেতে বেরোল। চারপাশে আবছা আলো। সে আজকে হলুদ জামা কাচতে দিয়েছে। বাতাস ঠান্ডা ঠান্ডা। অবশেষে বর্ষা আসবে আসবে করছে।


আমিঃ
বিছানায় শুয়ে শুয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ পড়ছি দুদিন ধরে।
ইউরোপ জুড়ে সমাজবাদের পালা বদলের ইতিহাস। জার্মানী, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া আর রাশিয়া ঘুরে লেখা।