statcounter

Monday, July 18, 2016

দয়াময়ীর গল্প

ঠিক রোজকার মত বড় ঘড়িতে তিনটে বাজলো, উঠে বসলেন দয়াময়ী। ঘুম আজকাল এমনিতেই আসেনা। তাও শুয়ে থাকলে একটু বিশ্রাম হয়, আর সারা রাত জেগে বসে থাকাটা ভাল দেখায় না। পাশে অঘোরে ঘুমচ্ছে লীলা, তাতো ঘুমুবেই, সারাদিন কম পরিশ্রম তো করে না।

দরজা খুলে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলেন দয়াময়ী। বারান্দার পাশ দিয়ে খিড়কি দোর, তার নীচে ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে পুকুরে। অন্ধকারে স্থির হয়ে আছে জল। ঘাটের কাছে শ্যাওলা পড়েছে। কিছুক্ষন জলের দিকে চেয়ে বসে রইলেন তার পর ডুব দিলেন জলে।

ঠান্ডা জল, শান্ত। কি শান্তি। সারাদিনের মধ্যে এই সময়টারই অপেক্ষায় থাকেন তিনি। সাঁতার ভালোই জানেন। ছোটবেলায় গঙ্গায় কেটেছেন। দুতিন বার ডুব দেবার পরে জলের নীচে আবছা মতন কি যেন দ্যাখা গেল। বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে জলের নীচের দিকে যেতে লাগলেন দয়াময়ী। কি যেন আছে পড়ে। না না একি দেখছেন । লীলা তো বিছানায় শুয়ে ছিল, এই মাত্র দেখে এসেছেন। এ কে লীলার মত। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল দয়াময়ীর, তাড়াতাড়ি উঠে এসে হুড়মুড়িয়ে ঘরের দিকে ছুটলেন তিনি। কি দেখবেন জানেন না, ভগবান যা দেখলাম যেন সত্যি না হয়। ঘরে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেখেন বিছানায় অঘোরে ঘুমোচ্ছে লীলা। না ঘুমিয়ে মাথাটা গেছে। কি দেখতে কি দেখি। নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজের উপরেই রাগ ধরে যায়।

সকাল হয়েছে। প্রতিদিনের মতোই স্কুলে দৌড়ালো লীলা। রিক্সা করে স্টেশন, তার পর ট্রেন। প্রায় ১ ঘন্টার রা্স্তা। স্কুলে দিনে ৫ টা ক্লাস, তারপর পরীক্ষার প্রশ্ন বানাও, খাতা দেখ, হাজার কাজ। বাড়ির কাজ সকালে বিনু মাসিই দেখে, তাই রক্ষা।  

সন্ধ্যেবেলা। আবার এসেছে দাড়িওলা ছেলেটা নাম সুজন। চা খেয়ে লীলার সঙ্গে বসে গল্প করছে। দেখে গা জ্বলে যায় দয়াময়ীর।  সুজন না কুজন। এই রোগাপানা চাল চুলোহীন ছেলেটার সাথে লীলার কিসের এতো ভাব ভেবে পাননা। না আছে টাকা ,না আছে রূপ, না বাপ মায়ের খোঁজ। ভাবলে মাথা ঝন ঝন করে তার। তিনি যতদিন আছেন বিয়েটা কোনো ক্রমে আটকে আছে, চলে গেলে ওই বুড়ী ধাড়ী মেয়ে এর গলায় মালা দেবে নিশ্চয়। এই সব ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরের দিকে চলে যায় দয়াময়ী। ছেলেটার সামনে আসে না, দেখলে আবার কথা বলতে হবে-- তার ভয়ে। রাতের খাবার খেয়ে সুজন চলে যায়। লীলা ঘুমুতে আসে বিছানায়। সাবধানের মার নেই,  দরজাটা ভাল করে বন্ধ হল কিনা দেখে আসেন দয়াময়ী। আবার একটা নির্ঘুম রাত, মাঝ রাতে নিশির ডাকের মতন পুকুরে চান। 

আবার সকাল হয়।
লীলা স্কুলে যায়।
দয়াময়ী সারাদিন বাড়ীতে ঘুরে বেড়ান। বিনুর মায়ের কাজের তদারকি করেন। বারান্দা থেকে ছাদ, ছাদ থেকে আবার রান্নাঘর, সব দিক দেখাশোনা করতে তো হয়। ঝাড়পোঁছ, জিনিসপত্র গোছানো বিনুর মায়ের কাজ। সে এদিকে খুব ফাঁকিবাজ আর তার উপরে বুড়ী। আগে দয়াময়ীর কথা শুনত, আজকাল কানে কালা হয়েছে কিনা কে জানে; কোন একটা কাজ বললে করেনা। লীলাও হয়েছে তেমনি। পুরনো বাড়ি,  এদিক ওদিকে রঙ চটেছে, সিঁড়ির কোণে ঝুল জমেছে অন্ধকার করে, রেলিং এ মরচে পড়েছে, লীলা সারাদিন ব্যস্ত, সময় নেই এদিকে তাকানোর। দেখে দেখে দীর্ঘশ্বাস পড়ে দয়াময়ীর।

 -------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

কদিন ধরে লীলা জিনিসপ্ত্র গোচ্ছাছে। বাড়ি নাকি বিক্রি হয়ে গেছে। তা ভাল, এই পুরোনো বাড়ী, দেখাশোনা করা মুসকিল। তবে কি একবারও দয়াময়ীকে জিজ্ঞেস করতে পারত লীলা, বড় অবাধ্য হয়েছে যবে থেকে ওই ছেলের চক্করে পড়েছে।  
যাবার দিন কতগুলো লোক এসে সব জিনিসপ্ত্র টানা টানি করে ট্রাকে তুলল। বিনুর মা চোখের জল মুছছে। দয়াময়ী দাঁড়িয়ে  দাঁড়িয়ে  দেখলেন। লীলা গাড়ীতে উঠে বসল। পাশে বসলেন দয়াময়ী। গাড়ী ছেড়ে দিল, শ্বশুরের ভিটে ছেড়ে চল্লিশ বছর পড়ে দয়াময়ী চললেন মেয়ের কেনা নতুন ফ্ল্যাটে।

 -------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

নতুন ফ্ল্যাটই ভাল। স্কুলের কাছে, আর ধারে কাছে পুকুর টুকুর নেই। ঐ বাড়ীতে আর ভালো লাগত না লীলার। বাবা চলে যাবার পর থেকেই  মায়ের অসুখ বেড়ে গেছিল। লীলা নাকি কাকে বিয়ে করে চলে যাচ্ছে এই ভাবনায় ঘুমোতে পারত না। তার সাথে খিড়কি পুকুরে রোজ রাতে চান করতে যাওয়া। সেটাই কাল হল। আজ দয়াময়ীর জন্মদিন। পায়েসর বাটি তাঁর ছবির সামনে রাখতে রাখতে ভাবে লীলা।  ফুলের মালা, ধুপ আর পায়েসের সুগন্ধ মিলেমিশে যায়।  দয়াময়ীর ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি, লীলা পায়েস বানায় জব্বর; হাতের তার একদম ঠাকুমার মতন। 

লীলা স্কুলে বেরোয়। বাইরে থেকে তালা দিয়ে যায়। দয়াময়ী মনে মনে বলেন দুগগা দুগগা।






9 comments:

  1. Bhoot e dugga dugga bolche...ta bhalo.;)

    ReplyDelete
    Replies
    1. Hallucinating bhut. R bhujte parche na kichu.

      Delete
  2. দয়াময়ীর গল্প খুব ভালো লাগল, প্রিয়াঙ্কা।

    ReplyDelete
  3. দারুণ লাগল পড়ে,পুরো thriller

    ReplyDelete
    Replies
    1. 😎😎😎. 😘😘😘.kemon Achis ??

      Delete
    2. 😎😎😎. 😘😘😘.kemon Achis ??

      Delete