(বিশেষ ঘোষনাঃ সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে মিল পাঠকের কল্পনাপ্রসূত।)
কণামান্দা সকাল বেলা উঠে হালুম হালুম করে ঘুরে বেড়ায়। এদিক ওদিক দ্যাখে, কে কে উঠল !
কচিমান্দা এখনো উঠল শুয়ে আছে--- সারা রাত জেগে তাঈমান্দার সঙ্গে গল্প করবে--- সকালে উঠবে কি করে!
বাবামান্দা সেই সাত সকালে উঠে গেছে--- রোজকার মতো অ্যালার্ম বাজিয়ে কণামান্দার ভোরবেলার সুখনিদ্রা বরবাদ করেছে। বাবামান্দা কে রোজের মতন বকবে কণামান্দা। বাবামান্দা পাত্তা ও দেবে না, তার এখন অফিস গাড়ি ধরবার তাড়া।
রোজ অফিস যাবার কি দরকার--- আগেই বলেছিলাম জঙ্গলটা শিফট কোরোনা। দিব্যি হেঁটে অফিস যেতে।
উফফ এককথা রোজ বোলোনা বাঘ গিন্নী। খেতে দাও।
কি খাবে-- কালকে তো হরিণ আনোনি। শেয়ালের মাংস খাও।
হ্যাঁ তাই দাও। গাড়ি বেরিয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি দাও।
বাবামান্দা বেড়িয়ে যেতেই কণামান্দার নজর পড়বে কচিমান্দার উপরে।
ওরে ওঠ ওঠ। সবাই ইস্কুলে চলে গেল। শিকার শিখতে চলে গেল। তুই সারা রাত জেগে গল্প করিস, সকালে উঠিস না। তোর কি হবে জীবনে। শুয়ে থাকলে ঠাকুরমান্দা তোকে দেখবে নাকি বিদ্যা বুদ্ধি সাহস দেবে।
চুপ করো তো। ঘুমুতে দাও।
হ্যাঁ। ঘুমিয়ে থাক!
বাধ্য হয়ে কচিমান্দা উঠে ইস্কুলে যায়। এখন কণামান্দা ঘুরে বেড়াবে, জেঠিমান্দার সঙ্গে গল্প করবে, খাবে, ঘুমুবে।
আর শালুক পাতায় মোড়া শামুকের আচার খেতে খেতে বিজনেস প্ল্যান বানাবে, এটা তাদের ফেভারিট পাস টাইম।
রিসেন্ট বিজনেস প্ল্যানঃ পারফুমের ব্যাবসা। নতুন সার্ভেতে দেখা গেছে বাঘেরা আর নিজেদের ঘেমো গন্ধ পছন্দ করছে না। এখন ফিউশন গন্ধের ট্রেন্ড। জুঁই- ভুঁইচাঁপা আর কচি পাঁঠার গন্ধ মিশিয়ে একটা নতুন পারফুমের খোঁজ পাওয়া গেছ; কোনো এক গ্রাম্য বাঘ সেটা বানিয়েছে কিন্ত ু পুঁজি নেই--- এই পেটেন্টটা কিনে নিয়ে ব্যাবসা শুরু করার ইচ্ছে দুজনের।
সন্ধেবেলা বাবামান্দা অফিস থেকে ফিরলে হালুম হালুম করে অফিসের গল্প শুনবে কণামান্দা। বাবামান্দা কাজ করে ব্যাঘ্র ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টে। এখন বাঘরা আর খোলা আকাশের নীচে থাকে না, সরকারী বাঘেদের কোয়াটার্স আছে-- সেই দপ্তরে।
তারপর দুজনে মিলে "বনের খবর" নিউজ চ্যানেল খুলে নিউজ দেখবে। এরপরই শুরু হবে তাদের প্রিয় সিরিয়াল---- "জঙগলে মানুষ, অসহায় বাঘ।" কি ভাবে একটা বাঘ সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাঘদের মনুষ্য আগ্রাসন এবং নতুন সভ্যতার কবল থেকে রক্ষা করল তাই নিয়ে জমজমাটি গল্প।
এরপর আছে আরো সিরিয়াল---" গোয়েন্দা বাঘ এবং পাজি শেয়াল"---নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে
কি নিয়ে গল্প।
এই সব শেষ হতে না হতেই কচিমান্দা ইস্কুল - টিউশন সেরে বাড়ী ফিরে আসবে। আজকাল আবার নতুন নাটক হয়েছে--- টিউশন নিতে হচ্ছে লেভেল ২ পাস করার জন্য। তবে যা কম্পিটিশনের বাজার, ভালো করে পাস করতে না পারলে চাকরি জুটবে না , তখন বেকার ব্যাঘ্র যোজনায় নাম লেখাতে হবে।
তাই কণামান্দা কোনো রিস্ক না নিয়ে কচিমান্দা কে হালুম বুড়োর টিউশনে দিয়েছে।
হালুম বুড়ো, আসল নাম শ্রী শ্রী ব্যাঘ্র পন্ডিত জগামান্দা -- তালিম কাবুল আজাদ বিন তুঘলক।
কারিকুলাম ভিটেঃ
ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হেডমাস্টার ----- ঘেঁয়াও ঘেঁয়াও--- "জঙ্গল মে মঙ্গল, মেরে উড়িয়ে দেব কাঁথা কম্বল" গ্রন্থের রচয়িতা, প্রকাশক, বিক্রেতা।
বি ঘেঁয়াও, এম ঘেঁয়াও ঘেঁয়াও, এল এল বি হালুম , পি এইচ ডি ঘ্রীঈ ঘ্রীঈ-----
থেসিস টাইটেলঃ মনুষ্য আগ্রাসনে বিকৃত বাঘ সমাজের ইতিহাস এবং তার পুনর্লিখন
অন্যান্য বইঃ
নং ১ঃ "হাও নট টু ফীল প্রেশারাইশড বাই হিউম্যান টেকনোলজী অ্যাডভান্সমেন্ট "---(How not to feel pressurized by human technology and advancement)
নং ২ঃ " হাও টু কীপ ইনোসেন্ট কাবস্ অ্যাওয়ে ফ্রম হিউম্যান কন্সপিরেশি লাইক মোবাইল অ্যান্ড আই ফোন"---(How to keep your innocent cubs away from human conspiracy like mobile and i - phone)
নং ৩ঃ "কিপ ইয়র কাবস্ অ্যাওয়ে ফ্রম ফ্রোজেন ফুড--- গো ফ্রেশ, বি হেলদী" ---- ( Keep your cubs away from frozen food-- go fresh, go healthy)
এই সব বইয়ের বাঘা ভাশর্নের প্রচুর কাটতি বাজারে---- তবে "জঙ্গল মে মঙ্গল, মেরে উড়িয়ে দেব মানুষের কাঁথা কম্বল" এটাই বিখ্যাত করে রেখেছে হালুম বুড়োকে।
কচিমান্দা বাড়ি ফিরলেই কণামান্দার প্রশ্ন শুরু--- ইস্কুলে - টিউশনে কি কি হল--- কি শেখাল ---কে কটা পারল---- জলের ছাপ নিতে কদ্দুর শিখল--- টিউশনে পরীক্ষায় কে কত পেল-- এই সব উত্তর দিতে দিতে কচিমান্দা রেগে কাঁই, তার "ঘেঁয়ো গলায় বাঘা গানঃ কনটেম্পোরারি মুজিক" এর প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাচ্ছে। কণামান্দা এই নতুন গানটান একদম পছন্দ করে না--- তার পছন্দ বাঘা ক্ল্যাসিক, প্রয়াত ওস্তাদ ওয়াঁও ওয়াঁও বিলায়েতি মান্দার গান।
গান নিয়ে ঝগড়া যখন প্রায় শুরু শুরু তখন বাবামান্দা ইন্টারভেন করে ঝগড়া থামাবে।
গান নিয়ে ঝগড়া যখন প্রায় শুরু শুরু তখন বাবামান্দা ইন্টারভেন করে ঝগড়া থামাবে।
কণামান্দা রোজকার মতন গজগজ করবে-- " আমি তো ভালোর জন্যি বলি। পড়ার কথা বললেই যত রাগ। না শিখলে হবে কি করে...সবাই এগিয়ে যাচ্ছে। সারাদিন ঢ্যাং ঢ্যাং করে দমাদ্দম পিটছে-- এগুলো গান নাকি ---- হু হুউউ-- কোনো রুচি বোধ তৈরী হল না এ যুগের বাচ্ছাদের।"
গজগজ করতে করতে ডিনার খাবার সময় এসে যাবে-- তখন আবার " বাঘা নাচে ঢোলক গলায়" এই রিয়ালিটি শো সুরু । অম্নি কণামান্দা সব ভুলে শো দেখতে দেখতে ডিনার খাবে।
খেয়ে উঠে কচিমান্দা একটু হোম ওয়ার্ক করে নিয়ে তাঈমান্দার সঙ্গে গল্প করতে বসবে।
কণামান্দা আর বাবামান্দা ঘুমুতে যাবে।
কালকে আবার আরেকটা ব্যাঘ্রদিনের শুরু।
:D কি ভাল হত এটা।
ReplyDeleteDarun .. arekta gem from u ...
ReplyDelete