statcounter

Showing posts with label সত্যি- মিথ্যে. Show all posts
Showing posts with label সত্যি- মিথ্যে. Show all posts

Friday, May 20, 2016

গেট

দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ। মাঠের পাশে রাস্তা, রাস্তার ধারে পাইনের সারি। উল্টোদিকে অনেক দূরে
ইউক্যালিপটাসের বন। হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ।

মাঠের শেষে একটা বড় দীঘি, তার পাশে জলের ট্যাঙ্ক।

কালচে নীল আকাশ।

আর মাঠে একটা গেট। বেশ শক্তপোক্ত লোহার গেট, তুঁতে রঙের।

গেট কিসের? মাঠে ঢোকার নিশ্চয়।

ওহো মাঠে পাঁচিল দেওয়া!!!

নাতো পাঁচিল তো নেই। তাহলে গেট কিসের

এই প্রশ্নটা আমরা একজন আরেকজন কে করছিলাম।

unfinished construction হবে---বলল একজন। আমাদের সাধারণ যুক্তিতে তাই হয়।

কিন্ত ু উত্তর জানা ছিল না। 

দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠের মধ্যে একটা গেট কেন----- প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল।

গেটটা দিক্ নির্দেশ করছিল অন্য কোথাকারমাঠের মধ্যে দিয়ে কিন্ত ু আবার মধ্যে দিয়ে নয়।

"কিরে গেটটা দিয়ে ঢুকবি নাকি?"--- অ আ কে জিজ্ঞেস করছিল।

"ঢুকবো!! যদি ফিরতে না পারি!!" ---মনে মনে বলছিল দুজনে; অন্যরা শুনতে পারছিল না।

ইউক্যালিপটাসের বন থেকে হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ আসছিল।

রাত বাড়ছিল, পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছিল চারদিক।

কোথাও কেও নেই, মনে হচ্ছে পুরো ভ্যালিতে শুধু আমরা ছজন দাঁড়িয়ে আছি--- মোমের মতন গলে 
যাচ্ছে রাস্তা ঘাট--- ঝিম ধরে আছে চারদিকে, শুধু অনেক দূরে হোটেল এর আলো জ্ব্লছে।

এ পৃথিবীর শেষ  স্টেশনে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম, সামনে মাঠ, পাঁচিলহীন---তাতে  একটা  তুঁতে রঙের গেট, একটা অন্য পৃথিবীতে যাবার রাস্তা।

All image courtesy :Shounak 



সকালে মাঠের একদিকের ছবি




                                                         ইউক্যালিপটাসের বন



                                                                    
                                                             নেতারহাট ভ্যালি   
                                               

তুঁতে রঙের গেটের ছবি নেই।


                                                                     
                                                                   অন্য গেট


Thursday, May 12, 2016

মেয়েটা

আমরা সমুদ্রের জলে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছিল। পায়ের নীচ থেকে বালি সরে যাচ্ছিল বার বার। আমরা ছাড়া পুরো বীচ এ আর কে ও নেই। খালি একটা ছোট মেয়ে, যে জলের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল।

অগুন্তি ঢেউ, জলের উথাল-পাতাল। আমরা বার বার পড়ছিলাম, জল চলে যাচ্ছিল আমাদের উপর দিয়ে। মেয়েটা এসে আমাদের হাত ধরল। 
"দিদি দিদি এভাবে দাঁড়াও---এভাবে বালিতে পা ঢুকিয়ে, নইলে পড়ে যাবে"। ----"আমার উপরে পড়লে তো"।

ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছিল। আমরাও পড়ছিলাম, একে অন্যের হাত ধরে, হেসে গড়িয়ে, ঢেউ এর ধাক্কায়।
মেয়েটা ও। ওর উস্কো-খুস্কো কোনোদিনও তেল না লাগানো চুল, রঙ ওঠা জামা।
"এই তুই স্কুল এ যাস?"
"যাই তো, আজকে ছুটি। দ্যাখো একটা বড় ঢেউ-- ও দিদি ঠিক করে দাঁড়াও; আমার উপরে আর পড়োনা এবার "।

মেয়েটার চুলের পাশে বালি চিকচিক করছিল, সারাক্ষণ হাসছে, দাঁতের মধ্যে বালি। আমাদের হাত  ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। সমুদ্রজলে। চেনা অচেনা নেই, "এই দিদিটা একদম পারছে না, খালি পড়ে যাচ্ছে,"। হেসে যাচ্ছিল, সংক্রামক হাসিটা ছড়িয়ে দিচ্ছিল নোনতা বাতাসে।

"কোথায় থাকিস?"
"ওই তো--- কোন এক দিকে হাত তুলে দেখাল"।
"বাড়িতে কে আছে?"- "আছে আছে বাবা মা আছে; ঢেউ আসছে দ্যাখো "।

বছর দশেক বয়স। এখনো বড় হয়নি, জলের মধ্যে কোনোদিনও না দেখা দিদিদের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

ছেলেমানুষ, অবিশ্বাস শেখেনি, ভয়ও না। দিদিদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী বার ও সমুদ্রে আসছে,  
ওর কিসের ভয়। মানুষকে কিসের ভয়, অচেনা কয়েকটা দিদি-দাদা, তাদের কিসের ভয়।

২০১১ এর গোপালপুর। 

এখন মেয়েটা নিশ্চয় ১৫-১৬। সময় বদলে গেছে চোখের সামনে। এখন কলকাতার রাস্তায় রাত হলেই দিদিরাও খুব ভয় পায়। দিদিদের মায়েরাও।

এত দিন এ মেয়েটা বদলে গেছে, এখন সবাই ওর অচেনা। চোখের সামনে বদলে যাওয়া পৃথিবী আর সবাই।
এখন সমুদ্র এর ধারে থাকা মেয়েটার কথা ভেবে হীম হয়ে যায় ওর বাবা- মা এর বুক। ভয় শেখায়, দ্বিধা  শেখায়, অবিশ্বাস শেখায় --- অস্ত্র তুলে দেয় তূণীরে।

Image courtesy: পুরনো  নোকিয়া ফোন





Wednesday, May 11, 2016

পরবাস

এক বছর কেটে গেল। ঠিক এক বছর আগে এইদিন প্লেনটা দমদম এয়ারপোর্ট থেকে উড়েছিল। কলকাতা- মুম্বাই- ফ্রাঙ্কফুর্ট- আমেরিকা।যাওয়া সহজ ছিলনা, কিন্ত ুকলকাতায় থাকাটা একই রকম অসহজ ছিল। তাই  PDF এর অফার পেয়ে দুবার ভাবেনি স।

শহরটা সুন্দর, তবে গরমে ও তেমন গরম নয়। আর শীতকালে খুব শীত। বিশাল লেক এর পাশে শান্ত শহর। সকাল বেলা ল্যাব যাওয়া আর সন্ধ্যে হতেই এক কামরা ফ্ল্যাট এ ফেরা। রূটিন-রূটিন; কলকাতায় কোন রূটিন ছিল না।

এখানে যখন রাত্রি হয়, কলকাতায় সকাল। গরম-রোদ- অটোর ভীড়। বিশ্রী শহর।

তাও রোজ মনে পরে।  ঘুম থেকে উঠে কোথায় শুয়ে আছি সেটা ভাবতে হয়। কলকাতা স এর সঙ্গে সঙ্গে থাকে, সারাক্ষণ মনে পড়ায় নিজেকে।
  
সারা সপ্তাহ ল্যাবে  যেমন তেমন করে  কেটে যায়, উইকএন্ড গুলো আরও একলা মতন। স শুয়ে থাকে, ঘড়ির টিক টিক শোনে। সময় যেন ছুটিতে গেছে, ঘড়ির কাঁটা এগোয়না, এক ঘন্টাকে মনে হয় এক বছর। মাথায় মধ্যে কলকাতা ভীড় করে আসে, কফি হাউস ভীড় করে আসে।

লেকের ধার টা খুব সুন্দর, সবাই হাঁটে কিম্বা দৌড়ায় । অনেকে বসে থাকে, স ও বসে থাকে, গঙ্গার ঘাটে।

এখানে সব কিছুই খুব সাজানো- ভাল।কাজটাও ভাল, নতুন বন্ধ ুরা ও। হোম অ্যওয়ে ফ্রম হোম তৈরী করার আন্তরিক চেষ্টা। স এর হাসি পায়। বলতে পারে না, দরকার ও মনে করে না।  সাজানো বাড়িতে হাউস পার্টি হয়, স এর মাথার মধ্যে  দিয়ে ট্রাম যেতে থাকে, হাতিবাগান থেকে কফি হাউসএর দিকে।
 মাঝ রাতে শেষ হয় খাওয়া- দাওয়া, সবাই নিজের ফ্ল্যাট এ ফেরে। স ফেরে, আহিরিটোলার রাস্তা ধরে,  কুকুর শুয়ে থাকে ড্রেনের পাশে, পাশ কাটিয়ে স বাড়ি ফেরে।

কলকাতা ছেড়ে যাবার আজকে এক বছর, কিন্ত ু কলকাতা স কে ছাড়ে না।  একটা কখনো না- সারাতে পারা পুরোনো ঘ্যান-ঘ্যানে অ-সুখের মত সঙ্গে থাকে। 

Image courtesy: google