statcounter

Showing posts with label নেই কাজ তো!. Show all posts
Showing posts with label নেই কাজ তো!. Show all posts

Monday, November 27, 2017

শীতকাল


কলকাতায় নাকি কালকে ১৫ ডিগ্রি ছিল ; শীতকাল এসে গেল।

শীতকাল মানে আলমারি থেকে বের হওয়া উলের সোয়েটার আর গরম মোজা; বাবার মাফলার আর মায়ের শাল। ট্রাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসা রোদে দেওয়া লাল মলাটের লেপ; কমলালেবু আর নতুন গুড়ের পিঠে; বড়দিনের কেক। শীতকাল মানে দুপুর বেলা খাবার পর ছাদে বসে রোদ পোহানো; পর পর মেলার  কাউন্ট ডাউন; পিকনিকের প্রস্তুতি। সকালবেলা কাঁপতে কাঁপতে লেপ ছেড়ে ওঠা; আবছা কুয়াশার মধ্যে চায়ের দোকানের ধোঁয়া মিলিয়ে যেতে দেখা। সন্ধ্যেবেলা হুডির ওপরে চাদর জড়িয়ে ল্যাব থেকে বেরনো; খালের ধারে দাঁড়িয়ে চা খাওয়া; খবরে দমদমে আজকে ১০ ডিগ্রি শুনে "ওরে বাবা তাহলে এখানে ত ৭" বলে একটা এক্সট্রা চাদর জড়িয়ে নেওয়া।

এটাই আমাদের শীতকাল; দিল্লীর স্মগ বা নিউ ইয়ার্ক; সুইডেনের বরফে ঢাকা চারপাশ ; প্যাঁচ কেটে  যাওয়া কল থেকে টপটপ করে পড়া অবিশ্রাম জলের ফোঁটাতে গজানো স্যাঁতস্যাঁতে শ্যাওলার মত গায়ে লেপ্টে থাকা ঠান্ডা আমাদের নয়। আমাদের আসল শীতকাল আসে এখানে; ময়দানের মাঠে রঙীন বেলুনের উড়ানে; পার্ক স্ট্রীটের রাস্তায়; চিড়িয়াখানার ভীড়ে; শীতকাল আসে সকালের কুয়াশা কাটিয়ে ঝকমকে রোদের হাত ধরে; সন্ধ্যের হলুদ আলোর মায়াবী বিষণ্ণতায়; রাতের নিঝুমতায়;  ফোনে মায়ের কথায়। শীতকাল আসে কোলকাতায় আর আমরা যারা পড়ে আছি বেশ কিছুটা দূরে ; পঁচিশ-ত্রিশ বছরের মায়া কাটিয়ে উঠছি প্রতিনিয়ত; শুধু নতুন করে পুরোনো মায়াতে জড়াবো বলে; লেপের গরম ওমের  ভালবাসা নিয়ে শীতকাল আসে আমাদের বুকের মধ্যে।





  .



Friday, June 2, 2017

আ পার্ট অফ মি


সময় থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে কেটে যায় ঘন্টা- দিন-সপ্তাহ-মাস-বছর। জমতে থাকে টুকরো টুকরো হাসি কান্না রাগ অভিমান সাফল্য ব্যর্থতার মুহূর্তগুলো। ফোর্থ ফেজ এর কমন ল্যাবে সারাদিনের হৈচৈ,টিস্যু কালচার- ডার্করুম -কনফোকালের বুকিং এর তাড়াহুড়ো; তার মধ্যে দিনে তিন বার ক্যান্টীনের চা আর খাবার; না আসা অথবা উল্টো আসা রেজাল্ট, ছাদের সিঁড়িতে আড্ডা; শনিবারের বিকেল মোমো খেতে যাওয়া আর মাঝে মাঝে মূর্তিমান ঝঞ্ঝাটের মত জার্নাল ক্লাব আর ডেটা প্রেসেন্টেশন। আর অনেকে মিলে হঠাৎ করে বেড়াতে চলে যাওয়া দার্জিলিং-কালিম্পং, গোপালপুর বা নেতারহাট কিংবা অল গার্লস' ট্যুরে মন্দারমণি বা তালসারি--- সব জমা হয় স্মৃতির খাতায়।
কাজের কথা আস্তে আস্তে শিফট হয়ে যায় মনের কথায় ; বিজ্ঞান থেকে সাহিত্য-সিনেমা ঘুরে ব্যাক্তিগত পরিসরে। তৈরী হয় একটা আনপ্যারালাল বন্ধুতের।  
সাত বছর থাকলে চেনা হয়ে যায় বারান্দার রেলিং, বুড়ো কুকুর আর তার ছেলেপিলের সঙ্গে।  জানা হয়ে যায় পলাশ- কৃ্ষ্ণচূড়ার ফুলের আনাগোনার সময়, শালের গাছের পাতা ঝরার পরে ন্তুন পাতা আসার দিনক্ষণ।

এসবের মধ্যে আস্তে আস্তে টপকে যায় একটা একটা মাইলস্টোন; পেপার- পাঁচ হাজার- থিসিস- ডিফেন্স। বদলে যায় ফোর্থ ফেজ এর মুখগুলো; আগে যারা পাশে বসতো তারা এখন হাজার মাইল দূরে--- স্কাইপ আর হোয়াটস্ -আপে।

সাত বছর--- সময়টা নেহাত কম নয়। যা কিছু নতুন শিখলাম- জানলাম--- সব কিছুর মধ্যে নিজেকে চিনতে শিখলাম; সাহা ইন্সটিট্যুট এ না এলে এগুলো এভাবে নিশ্চয় বুঝতাম না।
সব  বন্ধুরা চলে গেছে-- অন্য শহরে - অন্য অন্য দেশে; এবার আমার ও যাবার পালা--- নুতন করে শুরু করার সময়।

সাত বছর --সময়টা আসলে বেশ কম। চোখের পলকে কেটে যাওয়া----ভালো-মন্দ মেশানো সহজ- কঠিন মুহূর্তগুচ্ছ। 

ল্যাব থেকে যতই দূরে চলে যাই না কেন; মনের ভিতরে জ্ব্ল জ্ব্লে হয়ে থাকবে এই সময়টা আর স্মৃতিগুলো।
No matter how far I go, you will always be in my heart-----you will always be a part of me.

+









Friday, January 6, 2017

ডায়রি

লাল রঙের ডায়রি ছিল। আর ডায়রি লেখার অভ্যাস ছিল। রোজ নয়, মাঝে মাঝে। খুব অস্থির লাগছে, চিন্তাগুলো কিছুতেই বাগ মানছে না, এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে, তখন খাতা কলম  নিয়ে বসা ছাড়া গতি ছিল না।
একটা একটা করে শব্দ জুড়ে যখন একটা লাইন তৈরী হবে, লাইনের পর লাইন জুড়ে প্যারাগ্রাফ, তার বিষয়বস্ত ু  যতই অকিঞ্চিতকর হোক না কেন, প্রসেসটার মধ্যে মনকে শান্ত করে দেবার অসামান্য ক্ষমতা আছে। সেটা আরো বুঝলাম যখন অসুখ হয়ে  আগের বছর একদম গৃহবন্দী দশা হল। ডাইরি  থেকে ব্লগে উত্তীর্ণ হলাম। ডাইরি  হচ্ছে একদম নিজস্ব, যা নিজেকেও বলতে ভয় পাচ্ছি, তা লিখে রাখা যায়। আর এদিকে ব্লগ হচ্ছে ঠিক তার উলটো।যা ভাবছি সব কিছু উজাড় করে প্রকাশ করাই এর উদ্দেশ্য।  কিছু লিখলে তারপরেই পেজ ভিঊ এর গুনতি শুরু। কিন্তু আমরা কি সব কিছু যা ভাবছি তা বলে উঠতে পারি? কোনটা বলব আর কোনটা রেখে দেব মনের ভেতরে এই দোলাচলই কি কেটে যায়না অনেকটা সময়।
 আমি লিখছিনা বেশ কয়েকদিন হল। এমন নয় যে তার আগে আমি দীর্ঘ সময় লিখেছি, কিন্তু যেটুকু সময় ব্লগ লিখেছি সেটা রেগুলার ছিল। আমি লিখছি না কারণ এখন আমার মাথায় আর কিছু আসছে না। তার মানে কি যে আমার জীবনে ঘটনার অভাব ঘটেছে? তা কিন্তু নয়। বরং আমার ব্লগের সমস্ত লেখা হয়েছে যখন, তখন বাহ্যিক ভাবে  আমার সারাদিন বাড়িতে শুয়ে থাকে ছাড়া কোন কাজ ছিলনা।  যদিও আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। ব্যস্ত ছিলাম নিজের রাগ, দুঃখ আর ভয় থেকে পালাতে, সাইটোটক্সিক ওষুধের রিয়্যাকশন থেকে নিজেকে আলাদা করতে। আর তখন সেই পালানোর এক মাত্র মাধ্যম ছিল এই ব্লগ। যা মনে এল তাই লিখলাম, জাস্ট লিখে গেলাম---- আর আমার মধ্যের চলতে থাকা অবিরাম অশান্ততাগুলো আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেতে লাগল।
আজকে আমার সত্যি কিছু লেখার নেই।
বছরের সাথে সাথে আমিও বদলে যাচ্ছি, আমার চারপাশটাও বদলে যাচ্ছে, আমার চাওয়া পাওয়াগুলো ও ন্তুন হয়ে যাচ্ছে। তা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। শুধু এই শব্দ সাজানোর আনন্দটার স্বাদ যেন বদলে না যায়, এই কামনাই করি।

Tuesday, August 16, 2016

টু রিড সেকশন


হুড়মুড় করে হ্যারি পটারের ৮ ন ং টা শেষ করে যখন হাঁপ ছাড়ছি, দেখলাম বুক শেলফের মধ্যে থেকে না পড়া বইগুলো আমার দিকে কটমট করে চেয়ে আছে। একে অন্যকে ঠেলাঠেলি করে বলছে এই যে এসে গেছে, তিড়ি ং বিড়িং করে কিনে সাজিয়ে রাখুনি। এই কথাটা শুনে যেই বুক সেলফে ধুলো ঝাড়ার নাটক করে কান পেতেছি, শুনি একদম কোণে সাজিয়ে রাখা ডরিস লেসিং এর বইটা তার পাশের মুরাকামিকে বলছে, "আরে ছোঃ--- খালি কিনলেই তো হয় না, পড়ার যোগ্যতা লাগে।" আর মুরাকামি ব্যাটা পুরো অকৃতজ্ঞের মতন সায় দিচ্ছে। স্পষ্ট শুনলাম পাশ থেকে ডালরিম্পেলের বইদুটো বিশ্রী ভাবে খ্যা খ্যা করে হাসছে।

ভেবেছিলাম দুটো সিনেমা দেখে শুয়ে থাকব। কিন্তু এইসব বাজে মন্তব্যে  হঠাৎ  করে রাগ হয়ে গেল।
চেঁচিয়ে বললাম, "আরে পড়ব না নাকি...না হয় বছর তিনেক আগে কিনেছি--- এখনো ঠিক সু্যোগ করে উঠতে পারিনি। আর পড়ছিনা তাতো নয়। এই আদিচিকে জিজ্ঞেস করে দেখ-- কিনে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে ফেলেছিলাম কিনা।"

আদিচি বেচারা ভালোমানুষের মতন আমাকে একটু সাপোর্ট করতে যাবে-- অমনি আর কে নারায়ণ বলে উঠল "সঙ্গে সঙ্গে মোটেও নয়-- ৬ মাস পরে। আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না।"

অমনি  বাকি  না পড়া বইরা চোখ পাকিয়ে নাক কুঁচকে আমাকে ধমকাতে শুরু করে দিল।
সব চেয়ে বেশি চেঁচালো এম অ্যান্ড বিগ হুম,  স্যালভেশন অফ আ সেন্ট আর রবীন্দ্র উপন্যাস সমগ্র । তাদেরকে তোল্লাই দিতে লাগল হেমিংওয়ের ফেয়ারওয়েল টু দ্য আর্ম আর কেন কেসির বইটা। এই দুটো বই কিছুটা পড়ে রেখে দিয়েছিলাম বলে ওদের খুব রাগ কিনা।

হঠাৎ করে বুক শেলফের মধ্যে একটা বিপ্লব শুরু হয়ে গেল। না পড়া বইরা পড়ে ফেলা বইদের কাছ থেকে পিটিশনে সাইন জোগাড় করতে লাগল।

নানা রকমের স্লোগান উঠল--- 

১) বছরের পর বছর ধরে বই কিনে না পড়ে রাখা চলবে না।

২) বইয়ের "রেড" লিষ্টে ঢোকার অধিকার মানতে হবে।

৩) বইয়ের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি।

একদম নতুন আসা বইগুলো দেখলাম ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে, কেন ফলেটের বই ওদের বলছে--- "আগে আমরা ;বুঝেছিস।"

সব কান্ড দেখে আমার মাথা ঘুরছিল। আর বইদের দাবী কিছু ভুলও  নয়--তাই একটু গিল্ট ও ফিল হচ্ছিল। তখন এই হইচইয়ের মধ্যে শুনতে পেলাম লীলা মজুমদার রচনাবলী আমাকে বলছে, "যেগুলো আগে কিনেছ সেগুলো পড়ে ফেল না বাছা। ওদের কি সারাক্ষণ শেলফের মধ্যে থাকতে ভাল লাগে। তুমি পড়ছো এই ছুতোতে কি সুন্দর ওরা একটু ঘুরে বেড়িয়ে আসে।" 

এই চেঁচামেচিতে ভয় পেয়ে হঠাৎ করে উইন্ড আপ বার্ড ক্রনিকল কেঁদে ফেল্ল। আর বলে উঠল "পার্পল হিবিস্কাস ল্যাবে বেড়াতে গেছিল...আমার ও ল্যাব দেখতে ইচ্ছে করছে।" 

তখন আমি বইদের বল্লাম "ঠিক আছে বাবা----- এই মুরাকামিকে বের করলাম, আস্তে আস্তে তোমাদেরও নিয়ে যাব ল্যাবে। আর রাগ করতে হবে না।" পাকদন্ডী আর ম্যানস সার্চ ফর মিনিং আমার হয়ে বাকিদের কাছে খুব ক্যাম্পেন করতে শুরু করল। রবীন্দ্র উপন্যাস সমগ্রও ওদের কে সাপোর্ট করল। এতে বেশির ভাগ বই শান্ত হয়ে গেল। 

যদি ও  ডিসগ্রেস মুখ বেঁকিয়ে বলল-- "আই ডোণ্ট বিলিভ হার।" কেন কেসিও তাতে সায় দিল।
তবে বাকি বইরা হাসি মুখে মুরাকামিকে টা টা ক রল। এখন সে আমার সঙ্গে বিছানায় বসে আছে।

ভাবছি এবার সত্যিই " টু রিড" লিষ্টের বইগুলোকে পড়ে ফেলতে হবে। আর ওদের রাগানো যাবে না।




আমার রিড আর টু রিডের অনেকখানি



আপনাদের "টু রিডের লিষ্ট" কত বড় ?? বয়সে বা সাইজে!
বই  কিনে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে ফেলেন নাকি আমার মত রেখে দেন ??


Thursday, August 4, 2016

ইভিনিং ওয়াক

ভোরবেলা উঠে মর্নিং ওয়াক যেতাম , আজ্ঞে হ্যাঁ, এই শর্মাই। তবে  বয়স তখন নিতান্তই কম, ক্লাস সিক্সের অ্যানুয়াল পরীক্ষার পরে ছুটিতে  পাড়ার কয়েকটা বন্ধু মিলে। দিন দশেক পরেই বুঝতে পারলাম এ আমার কাপ অফ টী নয়। কষ্ট করে সাত সকালে উঠার চেয়ে ঘুমুলে বরং কাজ দেবে, বন্ধ হয়ে গেল মর্নিং ওয়াক। এর পরে মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে আবার চেষ্টা করেছিলাম, সেম রেজাল্ট।

কাট টু খড়্গপুর।সেখানে যেটা হত তাকে নাইট ওয়াক বললেই ঠিক হয়। ডিনারের পরে ২.২ তে হাঁটতে বেরোনোর মজাই আলাদা ছিল। তখনো একা একা ঘুরে বেড়োনোর মানসিকতা তৈরী হয়নি, তবে কেউ না কেউ জুটেই যেত। বসের নিন্দা আর জীবনের ততকালীন কঠিনতম সমস্যাগুলোর সমাধান সুত্র খুঁজতে খুঁজতে রাত বেড়ে যেত, রাস্তা শেষ হয়ে হোস্টেলে পৌছে যেতাম । স্বাভাবিক ভাবেই কথা শেষ হত না, পরের হাঁটার জন্য তুলে রাখা হত।

একা একা হাঁটতে শুরু করলাম হোস্টেল থেকে ফিরে এসে। সন্ধ্যেবেলায় সল্টলেকের রাস্তায় হেঁটে বেড়ানোর মত ভাল স্ট্রেস বাস্টার আর কিছু ছিল না। খুব মন খারাপের সময় মনে হয় চার দেওয়াল আরো অসহ্য লাগে। দোকানের নিয়ন আলোর উলটো দিকে অন্ধকার বাড়ীগুলোর সামনের ফুটপাতের  উপরে শুয়ে থাকা কুকুরের পাশ কাটিয়ে, রাস্তার মোড়ে ত্রিফলা আলো আর ট্র্যাডিশনাল স্ট্রীট ল্যাম্পের নীচের আধো আলো- আধো অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে একা একা গন্তব্যহীন ভাবে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা।  যে এরকম করেনি সে বুঝবেনা। ছুটির দিনগুলোতে এরকম করতাম। মাঝে মাঝে হাঁটার শেষে পুলের পাশের মাঠে বসে থাকতাম।

নতুন বাড়ীতে এসেও মাঝে মাঝে এরকম করেছি। বাড়ী থেকে বাসরাস্তা, আবার ফিরে আসা।  ইদানীং শরীর খারাপ হয়ে সব বন্ধ হয়ে গেছিল। আজকে প্রায় পাঁচ মাস পরে পুরোনো সিলেবাস রিভাইজ করে  একগাদা পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল, তাই লিখে ফেললাম।

আপনারা কি করেন--- একা একা হাঁটতে যান নাকি দলবল নিয়ে?
মর্নিং নাকি ইভিনিং??
নাকি এসবের বালাই নেই! আড্ডা হয়ে যাক।






Friday, July 29, 2016

ঢোলু

আজ থেকে ঠিক একমাস আগে প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে চেপে ঢোলু এলেন। সাথে তেনার মর্মরহর্ম এবং মাস পাঁচেকের খাবার দাবার (ন্তুন জায়গায় যাচ্ছি, কি সাপ ব্যাং খেতে দেবে কি দরকার রিস্ক নিয়ে !)
দেবদত্ত বলে গেল সকালে বিকেলে চারটে করে লাল- হ্লুদ-সবুজ গুলি দেবে, আর মাঝে মাঝে জল চেঞ্জ। গুলির সংখ্যা এখন ছয়। এক মাস ধরে ঢোলুকে পর্যবেক্ষন করে যা যা বুঝলাম এই বেলা লিখে রাখছিঃ
১) প্রচন্ড কুঁড়ে---সারাক্ষ্ণ কি করে জলের নীচে গিয়ে ঘুমোয় কে জানে।
২) খাবার খেতে খুব নাটক করে। শুরুতে খেতে দিলেই টপাটপ খেয়ে ফেলত, এখন তাকে সাধ্যসাধনা করেও খাওয়ানো যায় না। খাবারগুলো কে পুরো খায়ও না, ছিবড়ে করে নিচে ফেলে রাখে।
৩) বু বু করে মুখ থেকে হাওয়া বের করে আর উপরে এসে জল খায়।
৪) খুব ভিতু। বাড়ীতে কেউ না থাকলে মরে যাবার অ্যক্টীং করে পড়ে থাকে।
৫) শব্দরসিক--- ওর কাছে বসে সবাই আড্ডা দিক বা গান চালাক বা নিদেন পক্ষে ঝগড়া ক্রুক--- ঢোলু নেচে কুঁদে একশা।
৬) ঘোরতর নার্সিসিস্ট, নিজেকে দেখতে ব্যস্ত। টোকিয়ো ( ঢোলুর খাবার) যদি জারের সাইডে ভাসে তবে তার দিকে যেতে যেতে যেইনা নিজের মুখখানির প্রতিবিম্ব দেখতে পেল অম্নি খাবার ছেড়ে লাফিয়ে নিজেকে দেখতে শুরু করে দেবে। তার পর ফিন নাড়িয়ে, বাদামী- নীলচে ল্যাজ খানি বাঁকিয়ে নানা রকম করে নিজের রূপদর্শন করবে অক্লান্ত ভাবে।
৭) পড়াশুনায় কোনো মন নেই। একদিন একটা পেন দিয়েছিলাম। দৌড়ে এসে (পরুন সাঁতরে) মারল এক ঢু । পরের দিন আবার পেন দিতে নো পাত্তা। পেনটা জল থেকে তোলার সময় ওর গায়ে একটু লেগেছিল (ইচ্ছে করে নয়রে), তার পর থেকে পেন দেখলে হয় মরার অ্যক্টীং অথবা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। আজকে একটা পেপার দিয়েছিলাম, চেয়েও দেখলনা।



পুওর ছবি---ভাগ্যিস ঢোলু দেখতে পাচ্ছে না। পারলে কক্ষনো এগুলো আপলোড করতে দিতনা।
ঢোলুর একা একা অসুবিধা হচ্ছে। কিন্ত ু ফাইটার ফিস কি আরেকটা মাছের সঙ্গে থাকতে পারে??? মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।


Saturday, July 9, 2016

দুচ্ছাই

কিছুই ভাল লাগেনা আজকাল। সামনে অনন্ত সময় খোলা মাঠের মতন ছড়িয়ে আছে। ফেলে নষ্ট হচ্ছে। সেই দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস পড়ছে বড়বড়। মাথার মধ্যে কিল বিল করছে হাজার চিন্তা। যাদের অনেকের শেপ ফর্ম ও অজানা, তাও ভীড় করে আসছে, জলের মধ্যে থেকে ঘাই মেরে উঠছে। কমসে কম চারমাস হলে গেল আরো মিনিমাম তিন মাস। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙি ভাঙি করছে এবার।

আমার পোঁতা জবা গাছ দুটোই মরে গেছে। শুধু নয়নতারার গাছটা এখন রোজ ফুল দিচ্ছে; তার কমিট্মেন্ট প্রশংসনীয়।

ন্তুন বাড়ীতে এসে মা সারাক্ষণ কমপ্লেন করে যে আগের বাড়ীর সব ভাল ছিল, এখানে সব খারাপ। সব খারাপ আমার মনে হয় না, তবে আগের বাড়ী থেকে বৃষ্টি যে অনেক ভাল দেখা যেত সেটা নিয়ে আর কোন সন্দেহ নেই। গত ২ সপ্তাহ ধরে আমার নিজের মনকে  নানা রকম মিথ্যা কথা শোনানোর পর আজকে সেটা মেনেই নিলাম।
পশ্চিম আকাশ কালো করে থরে থরে মেঘ জমা হত। তারপর আসত যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। মাঠের মধ্যে গাছগুলো হাওয়ায় দুলতো। জানলা থেকে দেখতাম। বৃষ্টিতে গাছগুলো সব চান করে নিত,পাতার রঙ ঝকঝকে সবুজ। ঘাস আর ন্তুন নুতন আগাছা, তারাও ফিটফাট হয়ে যেত। যখন ঝড় আসত বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। হু হু করে হাওয়াতে বাস স্ট্যান্ডের দিকে গাছগুলো এদিক-ওদিক দুলত। ওরকম আরাম আর শান্তি যেন আর কোথাও নেই। খুব বৃষ্টির পরে বহুকাল রং না হওয়া কোয়াটার্সের বাড়ী গুলোর গায়ে কালো কালো ছোপ ফুটে উঠত। এই নতুন জায়গায় সব সুন্দর সুন্দর ন্তুন রং হওয়া বাড়ী, বৃষ্টিতে তাদের কিছু হয় না; তারা কোনো গল্প বলে না।

এই বিরক্তিকর সময়ে এক মাত্র ভাল জিনিস হল ঢোলু বাবু। সারাদিন ঘুমিয়ে এখন রাতের বেলা খেলা করে বেড়াচ্ছে। বোলের ধার ঘেসে গোল গোল করে ঘুরে আর মুখ থেকে বু বু করে বাতাস বের করে কি আনন্দ তা ঢোলুই জানে। আর ভালবাসে শব্দ। আমাদের বকবকানি বা ইউটিউবের গান, যেকোনো রকম আওয়াজেই সে খুশী।

আমি সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান করছি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজও সেই ঘ্যান ঘ্যান
কমাতে পারছে না। শপিং থেরাপী ( দুটো বই কিনলাম) ও না। আগে এরকম অবস্থা হলে হেয়ার স্পা করাতাম; এখন সেই উপায়ও নেই । তাই ব্লগ লিখে দুঃখ কমানোর চেষ্টা করছি। 

আপনারা ঘ্যান ঘ্যান কমাতে কি করেন ??

আমাকে দু চারটে সাজেশন দিন ( ভাল ভাল খাওয়া বাদ দিয়ে); সেগুলো দেখব ট্রাই করে।




Thursday, July 7, 2016

সময়

দুদিন বসে ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ পড়ে শেষ করতে পারলাম। ১১৩ পাতার ট্রাভেলগ। জার্মানী, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, পোল্যান্ড আর রাশিয়া ঘুরে লেখা।  লেখক যখন গেছেন এই দেশগুলোতে তখন ইউরোপ জুড়ে চলছে রাজনৈতিক পালাবদল। হয়েছে সমাজতন্ত্রের পতন, বার্লিন ওয়াল ভেঙ্গে দুই জার্মানী মিলেছে, রুমানিয়াতে সেসেস্কু উৎখাত, পোল্যান্ডে এসেছে নুতন সরকার, আর সোভিয়েত ইউনিয়ন  হয়ে গেছে ভেঙ্গে টুকরো  টুকরো। সেই নিয়েই লেখা ভ্রমণকাহিনী।  অনেকদিন পরে টানা একটা বই পড়ে শেষ হল। অভাবটা সময়ের ছিলনা; ছিল ধৈর্যের। এই বইটার শুরুর দিকে পড়ছি কিন্তু বুঝছিনা দশা হয়েছিল। ট্রাভেলগ কিছু জটিল ব্যাপার নয়; তাও হচ্ছিল। বার বার ফিরে যেতে হচ্ছিল আগের পাতায়। মনোযোগের অভাব এবং স্মৃতিশক্তির দোষ। শেষে বইয়ের ৮০ পাতায় পৌঁছে মাথার মধ্যে যেন এলো জ্বলে উঠল। এতক্ষ্ণ যা যা পড়ছিলাম তা তো বটেই , তিন বছর আগে পড়া কেন ফলেটের " দ্য সেন্চুরী ট্রিলজী " (এর বই এর কন্টেন্টের সঙ্গে মিল আছে) সেগুলোও মনে পড়তে শুরু হল। তখন বুঝলাম সমস্যা আসলে মনোযোগের নয়, সময়ের। একটা বই পড়ে তার আত্তীকরণ হবার জন্য মিনিমাম একটা টাইম দিতে হয়,  এতোক্ষ্ণ কাউন্টডাউন চলছিল, ৮০ পাতায় পৌঁছে ঘন্টা বেজেছে। ইঞ্জিন গরম হয়েছে; যা যা ইনফরমেশন জমা হয়েছিল তাদের প্রসেসিং হয়ে গেছে, বাকি নতুন ইনফোদের ওয়েটিং টাইম কম, তারা হুড়মুড় করে প্রসেস হচ্ছে।

জীবনের বাকি জিনিসগুলোও এরকমই। পরীক্ষার প্রস্তুতি থেকে রান্নাবাটি শেখা, ল্যাবের প্রজেক্ট, থেকে নতুন সম্পর্ক এরকম আরো পাঁচশ হাজারখানা বিষয় সব কিছুই একটা মিনিমাম সময় দাবী করে। তার আগে তারা মোটেই ওয়ার্কিং কন্ডিশনে রিচ করেনা। বিশেষত সদ্যোজাত অবস্থায় রাতারাতি কাজ করা সম্পর্ককে আমি সাঙ্ঘাতিক সন্দেহের চোখে দেখি। আমার সিনিকাল মনে এই ভাবনাই আসে যে নিশ্চয় কিছু ইনফরমেশন মিস হচ্ছে, পুরো ছবিটা স্পষ্ট নয় তাই এতো ফ্ল-লেস দেখাচ্ছে। 

এই সময় জিনিসটাই খুব মজার। এই গুচ্ছ গুচ্ছ প্যাকেট ভরতি ছিল-- আবার পরের মুহূর্তেই প্যাকেট ফাঁকা। সেই ভরতি আর ফাঁকার মাঝের ফোকরে যেটুকু জমা থাকে সেটাকে ইউস করে নেওয়াটাই আসল চ্যালেঞ্জ। যে যত বেশি করতে পারবে তার তত লাভ। তবে আমার মত লেট লতিফদের কথা আলাদা---তাদের কাছে সময়ের দাম এত বেশি যে কিপটের মতন আস্তে আস্তে খরচ করতে গিয়ে শেষে দেখা যায় প্যাকেট শূন্য, হাতে পেন্সিল।

তবে যেরকম উধাও হয়ে যাওয়াটা সময়ের ধর্ম, সেরকম ফাঁক ভরানোটাও তারই কাজ। যেসব পরিবর্তন অযোগ্য অবস্থা দেখে এখন মুখ বেঁকিয়ে, ঠোট ফুলিয়ে বলছি ভালো না, বিচ্ছিরি, সময়ের কাজ হচ্ছে তাকে চলনসই করে দেওয়া। সইয়ে নেওয়া। ভুলিয়ে দেওয়া।আর সেগুলো সর্বদা সময় সাপেক্ষ।

তাই দুনিয়া লেটুরা এক হন। আস্তে আস্তে কাজ করা নিয়ে লজ্জা পাবেন। রেসটা তো কচ্ছপবাবুই জিতেছিলেন। আর সময় খুব দামী; তাই দৌড়াতে গিয়ে ফেলে ছড়িয়ে নষ্ট করবেন না। আরামে থাকবেন, মনে রাখবেন সময়ের শেয়ার মার্কেটে ইনফ্ল্যেশন নেই।








Saturday, July 2, 2016

দুদিন

দিন ১)

সকাল পাঁচটায় কোনো অ্যালার্ম ছাড়া ঘুম ভেঙ্গে গেলে কি কি হয়।

জল খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়াটাই বেস্ট পসিবল অপশন।

কিন্তু বারান্দায় গিয়ে দেখলাম সুয্যিবাবু আকাশে উঠে বসে আছেন। সাত সকালে তার মেজাজ প্রসন্ন। ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে , যেন মরনিং ওয়াক এ বেরিয়েছে বাতাস মশাই। গাছেদেরও মুড খুব ভাল, পাতা নেড়ে নেড়ে বলছে একে অন্যকে সেটা। গাছেরা তো আর আমার মত নয়। রোজই তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায় সুয্যিবাবুর অ্যালার্মে। সুপুরি গাছে আলো পড়ে অর্ধেক পাতায় সোনালী রঙ ধরেছে, তাতে তার খুশীর সীমা নেই। সাদা মেঘগুলো আস্তে আস্তে অফিসে যাচ্ছে, সক্কাল সক্কাল নো ট্র্যাফিক জ্যাম।

এই সব দেখে খুশী মনে আবার ঘুমিয়ে পড়া গেল।

পরে দুপুর বেলা দেখলাম কয়েকটা মেঘের আমার জানলার ঠিক সামনে ডিউটি পড়েছে। সাদা জামা পরে তারা গোল হয়ে গল্প করছে। আকাশের রং শরৎকালের মত নীল। সুয্যিমশায়ের আজকে কাজ করার মন নেই। তিনি আলতো চাদর জড়িয়ে ভাতঘুম দিচ্ছেন।

বিকেলবেলা কয়েকটা বাইরের মেঘ এসে ভীড় করল। তাদের আপ্যায়ন তো করতেই হবে। তাই সুয্যিবাবু বাড়ী যাবার আগে নিজের রূপচ্ছটা বিকীর্ণ করলেন। গোধূলির মায়াবী আলোতে ভরে উঠল চারদিক। আকাশের রং নীল থেকে গোলাপী, গোলাপী থেকে বেগুনী হল। শেষে চাঁদমামা এলেন অফিসে। তার হাতে চাবি দিয়ে সূর্যিবাবু  ঘুমুতে গেলেন। গাছেরা টা টা জানালো, আর নিজেরা ঘুমিয়ে পড়ল।

দিন ২)

সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার। ছাই রঙের মেঘেরা গম্ভীর ভাবে আসা যাওয়া করছে। আর মাঝে মাঝে ঝুপ ঝুপ করে জল ঝরিয়ে যাচ্ছে। সুয্যিবাবু ছুটিতে গেছেন। গাছেরা চান টান করে ঝকঝকে হয়ে অপেক্ষা করছে। আজকে সারাদিন তাদের রেনপার্টি।

দুপুরের দিকে কয়েকটা সাদা মেঘ হাওয়া খেতে বেরোল। চারপাশে আবছা আলো। সে আজকে হলুদ জামা কাচতে দিয়েছে। বাতাস ঠান্ডা ঠান্ডা। অবশেষে বর্ষা আসবে আসবে করছে।


আমিঃ
বিছানায় শুয়ে শুয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ পড়ছি দুদিন ধরে।
ইউরোপ জুড়ে সমাজবাদের পালা বদলের ইতিহাস। জার্মানী, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া আর রাশিয়া ঘুরে লেখা।
















Thursday, June 23, 2016

নাইট আউল এবং সাঁতারকান্ড

রাত জেগে থাকার আসল কারণ হচ্ছে ডেডলাইন। কিছুটা নিজের (সময়ের কাজ সময় থাকতে কি আর ভদ্রলোকে করে) আর বাকিটা ওষুধ দিতে না-জানা এবং জানা ডাক্তারবাবুদের ( স্ত্রী- পুরুষ লিঙ্গ ব্যবহার বাঞ্চনীয় নয়)।

কিন্ত রাত জেগে কাজ কতটা হচ্ছে বলা মুশকিল তবে মাথা কদিন ফাঁকা যাবার পরে ব্লগের আইডিয়া এল--সেটাই বা কম কি।  আর  এক সং্কট মুহূর্তে লাফিয়ে ঝাপিয়ে ১০ টা পোস্ট লিখে, রাজ্যশুদ্দু লোক কে মেসেজে, হোয়াটস অ্যাপে, ফেসবুকে দেখো আমি কেমন লিখতে জানি বলে বড়াই করেছি। এখন ১ মাস না যেতেই আইডিয়া নেই , ব্লগ বন্ধ বললে নিজের কাছেই নিজেই হাসির পাত্র হতে হয়।

তাই আইডিয়া আসাটাই সেলেব্রেশনের কারণ।

যাই হোক, ব্যাপার হল রাতজাগা নিয়ে। কিছু লোক রাতে জাগে আর দিনে ঘুমোয়। স্কুল- কলেজে আমি এই দলে পড়তাম না - যেই পড়াশুনা শেষ হল, অম্নি আমার রাত জাগা শুরু হল। এতে আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছিলনা, হচ্ছিল বাড়ির লোকের এবং হিতৈষী প্রতিবেশীর। মায়ের নাকি ঘুম হচ্ছে না, যদিও দুজনের ঘর আলাদা। মাঝে মধ্যে উলটো দিকের বাড়ির পন্দার ও মায়ের সমস্যা হচ্ছিল (পন্দার আসল নাম সামান্য আলাদা, তবে আমার সুরক্ষার খাতিরে এই নামটি ব্যবহার করা হচ্ছে। নামকরণকারীঃ সদ্য কথা বলতে শেখা আমার কাকাতুতো ভাই) , যদিও পন্দার ফ্ল্যাট আমার ঘর থেকে প্রায় ১৫ ফিট দূরে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে পন্দার মায়ের অসুবিধাটা আসলে কৌতুহলজাত---"রাত জেগে ল্যাপটপে কি করা হয় " গোত্রের। আমার মায়েরটা দুশ্চিন্তা করার মাতৃসুলভ অভ্যাস এবং দায়িত্ব পালন ছিল। তবে সবার অসুবিধা অগ্রাহ্য করে আমি রাতে জেগে থাকা এবং তার ফলে দেরীতে ল্যাব যাওয়া বজায় রাখছিলাম।
রাত জাগার সপক্ষে যুক্তি ছিল যাদের মুনসাইন হয় তারা নাকি "নাইট আউল"--আর নিজের জন্মের মাস তারিখ তো আমার হাতে ছিলনা। তাই দোষটা আর যারই হোক না কেন--আমার অন্তত নয়।

এভাবে ভালোই চলছিল--কিন্তু এসে গেল পি এইচ ডি র সাঙ্ঘাতিক থার্ড ইয়ার----আর দ্যাখা গেল প্রজেক্ট কিছুই দাঁড়ায়নি। তখন ল্যাবের অলিখিত প্রোটোকল মেনে সাঁতার শিখতে ভর্তি হয়ে গেলাম। সকাল ৮ টায়  ৩০ মিনিটের ক্লাস। স্কুলে থাকতে দুবার ভর্তি হয়ে সুইমার হতে পারিনি (নিজের সুইমার বন্ধ ু কে জলে প্রায় ডুবিয়ে দিচ্ছিলাম) ---এবার সব সুদেআসলে পুষিয়ে নেবো--এরকম একটা মারকাটারি মনোভাব নিয়ে সকাল সকাল উঠে পুল যাওয়া শুরু হল। সাঁতার ভালই হচ্ছিল, ১৫ মিনিট দেরিতে পৌঁছাছিলাম তবে বড় পুলে প্রোমোশন হয়েছিল। ফাঁকিবাজ বলে পরিচিতিও হয়েছিল , তার মানে নোটিশড হচ্ছিলাম। আড্ডাও ভালো চলছিল---  অ দিদি ছিল আর একটা চারবছর বয়সি বন্ধু হয়েছিল। ল্যাব থেকে অ এবং ন দিদিও  সাঁতার যেত--তারফলে কাজের মধ্যে ফাঁকা সময়গুলো রোজ কে কি ভুল করল, কতটা পারল, গভীরে গেল নাকি হাঁটুজলে হাবুডুবু খেল, পা নড়ল নাকি হাত, ডুবে গেল কিনা এই আড্ডা চলত সারাক্ষন। আর হত ইউটিউব দেখে প্রাইভেট টিউশন নেওয়া। এই সাঁতারের চক্করে রাতজাগা মাথায় উঠে গেল। বাড়ী ফিরে বেলা ১০.৩০ এর মধ্যে ল্যাব যাওয়া শুরু হল এবং কপিবুকের মতন এক্সপেরিমেন্টরা রেজাল্ট দিতে শুরু করল। শেষে বস ডেকে ঘোষনা করলেন রাত জাগে শুধু চোর, আর ভুতেরা (কপিরাইট- বসের বাড়ীর লোকের)---আমার যে সাঁতারকালীন উন্নতি ঘটেছে তাতে উনি বেজায় খুশী।

ঠিক তার ১৫ দিনের মাথায় ইনফেকশন হতে হাত ফুলে সাঁতার যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল সেবারের মতন। এই অসুখ খুব ভুগিয়েছিল, মাস খানেক ল্যাব কামাই হয়েছিল--তবে তা অন্যগল্প। 

আমি আবার আগের রুটিনে ফেরত চলে গেলাম--- ভুত আর চোরের সাথে রাত জাগতে থাকলাম।

বি দ্রঃ পোষ্টটা রাতে লেখা শুরু হয়েছিল, কিন্ত ু ডেডলাইন চক্করে  লেট হয়ে গেল।

সবাই ভালো থাকবেন, দিন কিংবা রাত যখন জেগে থাকতে ভালো লাগে সেটাই করবেন---পন্দার মায়ের অসুবিধার তোয়াক্কা করবেন না (নিজের মায়েরটা করতে পারেন )।







Sunday, June 19, 2016

সান ডে ব্ল ু স এবং চকোলাট

কোনো কোনো দিন এরকম হয়। জীবনে সব না কাটাতে পারা ছুটির দুঃখ ঝপাঝপ মনে পরে যায়। কে কবে পেন্সিল নিয়েছিল, ফেরত দেয়নি; ক্লাস ফাইভে কে জিভ ভেঙ্গিয়ে ছিল; কোন বিয়েবাড়ীতে   সম্পর্কে সুতো এতই জট পাকানো যে আগামাথা হারিয়ে গেছে, সেরকম কেউ বলেছিল এম্মা মেয়ে দেখতে তেমন সুন্দর হয়নি,তাই না; এইসব অকিঞ্চিতকর কথা যেগুলো মনের মধ্যে ডুবে ছিল , সারাশব্দহীন ভাবে, তারা হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে উপরে ভেসে উঠে ইলিবিলি কাটতে শুরু করে দেয়।

তখন বাকি দুঃখগুলোও জেগে ওঠে। যে ঘটনাগুলো এখনো ঘটেনি সেরকম দুঃখ-ভয়-রাগরাও লাফাতে শুরু করে দেয়। "পজিটিভ জিনিসগুলো দেখো" এই জাতীয় কোনো প্রয়োজনীয় সদুপদেশ কাজে আসেনা।

তখন হাও মাও করে চেঁচানো ছাড়া মুক্তি নেই।




চকোলাটঃ

http://www.imdb.com/title/tt0241303/




Storyteller: Once upon a time, there was a quiet little village in the French countryside, whose people believed in Tranquilité - Tranquility.

Storyteller: If you lived in this village, you understood what was expected of you. You knew your place in the scheme of things. And if you happened to forget, someone would help remind you.

Storyteller: In this village, if you saw something you weren't supposed to see, you learned to look the other way. If perchance your hopes had been disappointed, you learned never to ask for more. So, through good times and bad, famine and feast, the villagers held fast to their traditions. Until, one winter day, a sly wind blew in from the North...
সেই উত্তরে বাতাসের পথ ধরে গ্রামে এলেন জুলিয়া বিনচ (অনস্ক্রীন নাম ভিয়েন), সাথে ৬ বছরের মেয়ে আনুক। খুলে বসলেন একটা চকোলেটের দোকান, আর আস্তে আস্তে বদলে গেল গ্রামের লোকদের জীবন।

ভাল গল্প---- রুপকথার  মত "যার  শেষ ভাল , তার সব ভাল " দিয়ে শেষ।
না দেখলে একটা "ফিল গুড" মুভী মিস।






Thursday, June 16, 2016

চা- কফি- ইত্যাদি

সারাক্ষণ মনটা চা চা করত। ল্যাব থেকে তিনবেলা ক্যান্টিনে চা খেতে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। সকাল ১১ টা, দুপুর ৩ টে আর বিকেল ৬টা । এই সবগুলোতে  সব সময় পার্টিসিপেট করা যেত না, কারণ কাজের সময় সবার আলাদা আলাদা। ক্যান্টিনে চা এর টাইম ও বাঁধা, তাদের আরো রান্না-বান্না আছে। বাকি সময় চা খেতে হলে কিয়স্ক ভরসা। লেবু চা, লিকার বা নেস কফি। তার সঙ্গে কিয়স্কের ছেলেটার (যার নাম সোম)  বকবকানি ফ্রি।
" কাজ করে কি হবে, সেই তো সাত বছর লাগবে।" ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর যখন ল্যাবে এত কাজ পড়েছে যে বেরনোর উপায় নেই, তখন ল্যাবেই আসত চা কিয়স্ক থেকে। তবে সেটা সহজ ব্যাপার নয়-- ফোনে অর্ডার দাও , তারপর অপেক্ষা কর--- এবং শেষে "নেহাত  ক দিদির ল্যাব তাই দিয়ে গেলাম, নইলে আমি খুব বিজি।"  


ক দিদি ক্যান্টিনে হামলা করেছে


ক্যান্টিনে চা এবং টা


                                           কিয়স্কে আমরা---তখনো ছোটো ছিলাম (২০১০)


শনিবার ২টোর পরে ক্যান্টিন -কিয়স্ক দুটোই বন্ধ। তখন হয় পাশের ভি ই সি সি তে যাও অথবা খালপাড়। খালপাড়ে গেলে অবশ্য জিলিপি আর সিঙ্গারা খাওয়া যেত। অথবা রাস্তার মোমো বা ঝালমুড়ি। আর যখন বেরনোর একদম ইচ্ছে নেই কিন্তু চা না খেলে বাঁচব না, তখন ইলেকট্রিক কেটলি আর টী ব্যাগ ভরসা।



                                                            ল্যাবের ইলেকট্রিক কেটলি

কিন্তু জীবনে কোনো সুখই চিরস্থায়ী নয়,এই কথাকে সত্যি প্রমান করে কেটলি ভেঙ্গে গেল একদিন আর কিয়স্কও উঠে গেল। তখন চা এর জন্য টাইম বেঁধে গেল। সেই টাইমের বাবু হয়ে চলছিল। বসের মুখে হাসিও ধরছিল না, কিয়স্ক উঠে গিয়ে নাকি আমাদের আড্ডা কমেছে, কাজের সময় বেড়েছে।

এরকম মাস খানেক চলার পরে এল সুখবর। ভি ই সি সি তে CCD র স্টল খুলছে। গদি আঁটা চেয়ারওলা, এ সি লাগানো,  ৬০ টাকা কফি তে ২০ টাকা ট্যাক্স বসানো CCD নয়।  একটা কাঠের বাক্সের মধ্যে টেবিল পেতে কফি বানানোর মেশিন রাখা। মেশিনের মাথায় গোল ট্রান্সপ্যারেণ্ট জার বসানো। জারের মধ্যে CCD লেখা প্যাকেট খুলে কফিবীন ঢেলে মেশিনের সুইচ টিপে কফি বানিয়ে CCD লেখা কাগজের কাপে করে দিচ্ছে-- ১০ টাকায় ছোট কাপ, ২০ টাকায় বড়।
শুধু তাই নয়, স্যুপও আর আসাম টীও বানিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে আরো কুকিস আর মসলা মুড়ি, কেক হেনতেন। কদিনের মধ্যে ফ্রিজের আমদানী হল, দই, লস্যি ইত্যাদি রাখা শুরু হয়ে গেল। এই স্টল সকাল থেকে বিকেলে ৬.৩০ অব্দি খোলা, মাঝে খালি ৩০ মিনিটের লাঞ্চ ব্রেক। আমরা হাতে চাঁদ পেলাম আবার। দুপুর ৩টেয় ক্যান্টীন কে ডিচ করে CCD যাওয়া নিয়ম হয়ে গেল। দল বেঁধে OC ল্যাব কফি ট্রিপ--বসও ইনক্ল ু ডেড ।


                                                                কফি-আসাম চা- স্যুপ


কিছুদিন পর ভি ই সি সি কর্তৃপক্ষের মনে হল এই CCD এর জন্য তাঁদের সুরক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি হচ্ছে। দুটো ইন্সটিট্যুটের মাঝের কমন রাস্তার পাহারা জোরদার হয়ে গেল-- আই কার্ড না দেখিয়ে ঢোকা বন্ধ।
সেই সময় আই কার্ড  ভুলে গেলে বর্ডারে দাঁড়িয়ে কফি/চা য়ের অপেক্ষা ছাড়া গতি ছিলনা।
এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে--নাম লিখলেই আপাতত চলছে। জানিনা আবার কবে নিয়ম  বদলে যায়।


                                                               বর্ডার এরিয়া ( ছবি ১ )


                                                                   বর্ডার এরিয়া ( ছবি ২ )

আমাদের এই CCD প্রীতিতে সাহা ক্যান্টিনের লোকেরা শুরুতে বেজায় অভিমান করেছিল, সময়ের সাথে সাথে তার প্রশমন হয়েছে। আমরা আস্তে আস্তে একুল- ওকুল বজায় রাখতে শিখে গেলাম।

ভি ই সি সি তে CCD র  ফ্লারিশড বিজনেজ দেখে আমাদের ক্যান্টিনে একটা মেশিন বসে গেল। ভি ই সি সি র   ছেলেটি এসে নতুন লোককে কফি বানানোর ডেমনস্ট্রেশন দিয়ে গেল----- কিন্তু আমরা কফি খেয়ে মুখ বেঁকিয়ে বললাম-- হয়নি হয়নি ফেল। দুটো লোক বদল হল, তারপর একদিন বাক্স বন্দি হয়ে কফি মেশিন বাড়ী চলে গেল। এর কারণ অ্যানালিসিস করতে গিয়ে ভি ই সি সির ছেলেটির হাসিমুখ আর উদার হস্তে খুচরো দেবার ক্ষমতার জন্য ওকে অনেক বেশী নম্বর দেওয়া হয়েছিল।সাহা ক্যান্টিনের লোকটাকে কম নম্বরের কারণটা নিতান্তই শিশুসুলভ--- তাই এখানে আর বল্লাম না।

আমরা  ভি ই সি সি গিয়ে রোজকার মতন গুলতানি করতে লাগলাম। ছেলেটি আজকে ম্যাডাম ( বস যেদিন আমাদের ছেড়ে গিয়ে একা কফি খায়) এইমাত্র এসেছিলেন বলে আমাদের গসিপের জোগান দিতে থাকল।



                                                       OC ল্যাব ইন CCD ( ছবিতে  OC নেই )

  

Thursday, June 9, 2016

দেরী


শুক্রবারের দুপুর। ৩ টেয় বেরতে হবে, ৪ টেয় ট্রেন। খড়্গপুর থেকে কলকাতা। একদম বেরনোর মুখে ঝম ঝম করে বৃষ্টি। আমি আর বি হাঁ করে বসে ছিলাম বৃষ্টি থামার জন্য, তিনি নিজের খুশিতে পড়তে লাগলেন বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। আজকে আর বাড়ী যাওয়া হল না----- এই ঘ্যানঘ্যানটা যখন তুঙ্গে, বি বলল সাড়ে ৬ টায় ধৌলীতে চেষ্টা করে দেখি। বাড়ী ফেরাটা তখন এতটাই অ্যাট্রাক্টীভ, লাফিয়ে উঠলাম। ব্যাগ নিয়ে, দরজা আটকে, রিক্সা ধরে স্টেশন।  পৌঁছে জানা গেল ট্রেন লেট, দাঁড়িয়ে রইলাম ওভার ব্রিজের মাথায়--- আড়াই ঘন্টা। সাড়ে ৬ টার ট্রেন ঢুকলো সাড়ে ৮ টায়। আমরা চড়ে বসলাম। সাড়ে ১০ টায় হাওড়া, সেখানে থেকে দুজনে দুদিকে যাবো--- ব্যাগ নিয়ে আবার ছুট---আরো ১ ঘন্টা পরে বাড়ী। দুবাড়ীতে ততক্ষণে হাওমাও শুরু হয়ে গেছে --- কিন্ত ু আমাদের কোনো হেলদোল নেই-- দেরী হয়েছে তো কি, বাড়ীতে তো এসে গেছি।


ই দেরীটায় আমার কোনো হাত ছিল না। তার মানে এই নয় যে আমার সময়জ্ঞান তুখোড়, বরং উলটোটাই সর্বজনগ্রাহ্যভাবে সত্যি। সাহা ইন্সটিটুইট এ জয়েন করতে হবে, সকাল ১১ টায় রিপোরটিং। আমি যথারীতি লেট, বাস ট্রামের দেরী নয়, কারণ দুরত্বটা আমার বাড়ী থেকে ঢিল ছোঁড়া। ন ছোটোবেলার অভ্যাসবশত দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তায় আমার জন্য, ফলত দুজনেই লেট। ইন্সটিটুইট  এ সেই দিনটা বিশেষ দিন। গেট এর সিকউরিটি ও তাই কড়া, নাম মিলিয়ে নতুন স্ট ুডেন্টদের ঢোকাচ্ছে, সেই কাগজ ফেরত চলে গেছে ১১ বাজতেই। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম, ফোন করা হল, বেশ কিছুক্ষণ পরে কাগজ এল, অ্যাডমিশন পেলাম এস আই এন পি তে।

আমার এই দেরী নিয়ে তেমন লজ্জাবোধ কখনো করিনি।একটা পোস্ট পড়েছিলাম তাতে লেখা ছিল যারা দেরীতে আসে তারা আসলে নাকি খুব অপ্টিমিস্টিক--- এতো সহজে আশাবাদী হতে পেরে বরং আনন্দ হয়েছিল।

ত্রিশ বছর কাটিয়ে এটা রিয়ালাইজ করেছি যে মানুষের জীবনটা আসলে একটা প্যাটার্নে চলে, সেটা আবার প্রত্যেক মানুষের আলাদা আলাদা।
এই প্যাটার্নটা কখন মানুষটা নিজে বানায়, আবার কখন প্যাটার্নটাই মানুষটা কে বানায়-- ডিম মুরগীর সমস্যার মতন।

আমার প্যাটার্ন হচ্ছে দেরী হয়ে যাওয়া--- ইচ্ছেয় অথবা অনিচ্ছেয়।
স্কুল শেষ হতে বাড়ীর কাছে কলেজে ফর্ম না তুলে অনেক দূরে একটা কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। ২ মাস পরে কাছের কলেজে আসতে হল, তখন বায়োকেমিস্ট্রির সব চেয়ে দরকারি চ্যাপ্টার পড়ানো শেষ হয়ে গেছে--- আমার জাস্ট দেরী হয়ে গেল।

এম এস সির সময়; এরপরে পি এইচ ডি তে চেষ্টা করব কিনা এই ডিসিশনটা নিতে পারিনি, তাই কোনো পরীক্ষা মন দিয়ে দিইনি। এক বছর বাড়ীতে বসে পড়ে পরীক্ষা দিলাম---আই আই টি তে গিয়ে ফিরে ও আসলাম--- বাইরে থেকে দেখলে এতেও লেট করে ফেললাম।

২০১৪ তে যখন পেপার পাঠালাম তখন ভেবেছিলাম বছরের শেষের দিকে অ্যাক্সেপ্টেড হয়ে গেলে পরের বছর ফেলোশিপ থাকতে থাকতে থিসিস জমা দেব। ১০ মাসে তিনটে রিভিসনের পরে রিজেক্টেড পেপারটা যখন অন্য জার্নালে পাবলিস হলো তখন ফেলোশিপ শেষ--- কাজ অনেক বাকী।

এই লেট হবার ট্র্যাডিশন রাখতেই মনে হয়, জুন মাস চলে এল। যা যা করার ছিল কিছুই করা গেল না।

আনন্দ সংবাদঃ

পুরোটা পড়লেই বোঝা যাচ্ছে যতই লেটলতিফ হই না কেন--- কেঁদে-কঁকিয়ে, হাঁপাতে-হাঁপাতে শেষমেষ এন্ডপয়েণ্টটা টাচ করেই ফেলেছি। প্রত্যেকবার একই ঘটনা। তাই ওটাও আমার জীবনের অন্য একটা প্যাটার্ন। সেই ভরসায় বসে আছি--- বছরখানেক লেট হচ্ছি হয়ত, কিন্ত ু ডেস্টিনেশনে ঠিক পৌঁছে যাব 

যাই হোক না কেন গুণীজনেরা তো বলেই গেছেন ---" লাইফ টেকস টাইম"।

  

   


Tuesday, June 7, 2016

হোস্টেল - হোস্টেল

২০০৯ সালের জুলাই মাসে তিনটে ব্যাগ নিয়ে চল্লাম আই আই টি- খড়গপুর। পি- এইচ ডি অ্যাডমিশন নিতে। আনন্দ উত্তেজনা চরমে-- যতটা না আই আই টি তে  চান্স পাবার জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশী বাড়ী থেকে দূরে গিয়ে একা থাকার জন্য। তখনও তো জানিনা কি কি ওয়েট করে আছে--তবে সে কথায় পরে আসছি।

দিনটা ছিল মেঘলা। হাওড়া থেকে মেদিনীপুর লোকাল ধরে, তারপর রিক্সা করে দিব্যি পৌছে গেলাম। যে ল্যাবে জয়েন করব তারা ক্যাম্পাসের গেস্ট হাউস বুক করে দিয়েছিল, বাবা মা কে নিয়ে সেখানে উঠলাম। সুন্দর সাজানো সবুজ ক্যাম্পাস, হালকা বৃষ্টিতে মনোরম। ল্যাব দেখলাম--- সবার সঙ্গে আলাপ হল--- পরের দিন অ্যাডমিশন হয়ে গেল।  হোস্টেল দেখলাম, শেয়ার রুমে থাকতে হবে--- এত স্ট ুডেন্ট এসেছে নাকি স্থান সঙ্ক্ুলান হচ্ছে না। রুমমেট এর সঙ্গে আলাপ হল--- ওখানেরই এম টেক, এখন পি- এইচ ডি  করবে।

বাবা-মা টা টা করে কলকাতা ফেরত চলে গেল--- শুরু হল জীবনে প্রথম একা থাকা।

প্রথম একলা সকালে ওয়েলকাম করল পিঁপড়েরা--- আনপ্যাকড ব্যাগের উপরে এক গাদা ডিম পেড়ে রেখে।

তারপর ব্রেকফাস্ট--- সকালে সাড়ে আটটার মধ্যে ডিপার্টমেণ্ট যাওয়া--- কোর্স ওয়ার্ক করা--- দুপুরে  হোস্টেল এসে লাঞ্চ--- আবার ল্যাব--- রাতে ডিনার। কয়েক দিনের মধ্যে বোঝা গেল জীবনে সময় বড় কম। দৌড়োতে হবে। নইলে পিছিয়ে পড়তে হবে।

শুরুর তিন দিন মজায় কাটল। খেয়ে নে, ঘুমুতে যা বলার কেউ নেই--- দিব্যি ইচ্ছে মত রুমে ফিরছি, ঘুরছি, বেড়াচ্ছি, বাঁধন ছাড়া। উইকএন্ড এসে গেল-- প্রথম বাড়ী মিস করলাম সেদিন।

সেই উইকএন্ডে আলাপ হল বি এর সঙ্গে----
"কেমন লাগছে এখানে??"
"ভালই তো। বেশ সবুজ চারদিক" এই ছিল আমার উত্তর। পরের এক বছর এটা ছিল আমাদের  স্ট্যান্ডিং জোক।

কয়েক দিনেই বুঝে গেলাম একা একা থাকাটা কিছু সহজ নয়। রীতিমত ট্রেনিং লাগে। স্কুল কলেজে সব কিছু এত দিন দল বেঁধে করেছি,  একলা যে কিছুই করতে শিখিনি , এখন সেটা  রিয়ালাইজ করলাম। বাকিরা দিব্যি আছে, দরকার মত বাজার যাচ্ছে, খাচ্ছে, ল্যাব করছে---  আর আমি এমনই আতুপুতু যে একলা টেক মার্কেট যাবার কথা ভাবলে হাত পা সেঁদিয়ে যাচ্ছে পেটের মধ্যে। ভয়ে নয়, একা একা হেঁটে যাবার বোরডমে।

আস্তে আস্তে বন্ধ ু হল --- ল্যাবে, হোস্টেলে। একলা থাকাটা কমতে লাগল -- কিন্তু আসলে সেটা গোকুলে বাড়ছিল। পি- এইচ ডি যে একটা লোনলি এক্সপিরিয়েন্স, অহোরাত্র মাথায় চড়ে থাকা একটা ঘ্যান ঘ্যানে ব্যাথা-- সেটা বোঝার ম্যাচুরিটি আসেনি তখনো, কিন্তু অস্বস্তিটা জানান দিচ্ছিল।

 আই আই টি তে সবাই সাইকেল চালায়। আমি চালাতে জানিনা, ল্যাব থেকে কোথাও যাবার থাকলে স এর সাইকেলই ভরসা। ৬ মাস থাকার পর সাইকেল  শিখতে শুরু করলাম,  বহুবার পড়লাম, রাস্তার একদম বাঁ দিক দিয়ে যাওয়া নিরীহ পথচারীকে ধাক্কা মেরে ফেললাম , নিজে গোলচক্করে পড়ে গড়াগড়ি খেলাম--- কিন্ত ু শেষমেশ তৎকালীন বসের " এই বুড়ো বয়সে হবে না " এই  উৎসাহদানকে  দুয়ো দিয়ে সাইকেল চালানো  শিখে গেলাম। কদিন পরে বি ও এক পথের পথিক হল, তার পর প্রি ও --- ছ জোড়া ডানা গজালো আমাদের। সেই ডানায় ভর করে পরের ৬ মাস উড়ে বেড়িয়ে ছিলাম।
   
এক বছরে অনেক কিছু হয়েছিল। সব এখানে লেখার মত নয়।
বেশ কয়েকটা হওয়া এবং না হওয়া প্রেমের সাক্ষী হলাম। 
অনেক ঝগড়া আর মিলের ও সাক্ষী হয়েছিলাম---- কখনো তাতে অংশগ্রহনও করেছিলাম।
প্রতিযোগিতা ছিল আবার বন্ধুত্ত ছিল-- সব রকম মিলিয়ে জমজমাট ছিল হোস্টেল আর ল্যাব। দেখতে ভালোই লাগত। হোস্টেলে মেসে বসে লাঞ্চ ডিনারে সবার সঙ্গে আড্ডা দিতেও খুব ভাল লাগত।  

কিন্তু ভালো লাগত না অনেক কিছুই।
ল্যাবের কাজ ভালো লাগত না, ল্যাবমেটরা ভাল কিন্তু বসের সঙ্গে কিছুতেই বনছিলনা। টাইমের বাবুর মত সকালে উঠে ডিপার্টমেণ্ট যেতে কান্না পেত।

খালি ক্লাস করতে ভাল লাগত। বিকেলে ওল্ড বিল্ডিং এ গিয়ে স্পেশাল চা খেতে ভাল লাগত। শনিবার কলকাতা না ফিরলে বিকেলে হোস্টেলের পাপড়ি চাট খেতে ভাল লাগত। উইকএন্ডে খুব দেরী করে ঘুম থেকে উঠে বি এর ঘরে গিয়ে চা খেতাম, সারা দুপুর তিনজনে মিলে আড্ডা মারতাম। রাতে মেস বন্ধ থাকলে খেতে যেতাম হোস্টেলের বাইরে। সেমেস্টার ব্রেকের সময় নাইট ক্যান্টিন এ যেতাম-- শীতের রাত ১২ টায় গরম চা। ল্যাবের পরে ইচ্ছে মতন ঘুরে বেড়াতাম, ছুটিতে এক সঙ্গে বাড়ী আসার জন্য মুখিয়ে থাকতাম।
রাতের বেলা বিল্লুতে গিয়ে মশলা কোলা খেতাম আর এফ এম শুনতাম। খুব মন খারাপের দিনগুলোতে ২.২ তে হাঁটতে যেতাম।

এই ইররিপ্লেসিবল বন্ধুত্ত ছাড়া আই আই টি থাকার অন্য কারণগুলো আস্তে আস্তে আবছা হয়ে যাচ্ছিল। গুলিয়ে যাচ্ছিল প্রফেশনাল আর পারসনাল লাইফ । দিনগুলো ফেলে ছড়িয়ে নষ্ট করছিলাম---  আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলাম এখানের জন্য আমি নয়।

তাই এক বছরের মাথায় সবার আপত্তি অগ্রাহ্য করে কলকাতা ফিরে আসার ডিসিশনটা নিয়েই ফেললাম। তিনটে ব্যাগ নিয়ে বাবা- মা দিয়ে এসেছিল আই আই টি তে। পরের বছর সবাইকে টা টা করে সাতটা ব্যাগ নিয়ে একা একা ফিরে এলাম গাড়ী ধরে।

ফিরে এলাম--- কিন্তু জীবনে একা চলার খুব জরুরী শিক্ষাটা হাতে কলমে শিখে ফিরলাম।
আপাত দৃষ্টিতে বোঝা না গেলেও এক বছরের অভিজ্ঞতাটা আমাকে অনেক বড় করে দিল।







Tuesday, May 31, 2016

মাসিমা ব্যস্ত আছি

মাঝে মাঝে ই এটা বলতে ইচ্ছে করে। 

বাসে উঠলাম, জানলার ধারের দুর্লভ সিট ও পেলাম।এখন কাজ  কি কম---- জানলা দিয়ে রোজকার সেম রাস্তাঘাট দ্যাখা, হোর্ডিং পড়া--- বিজ্ঞাপনে নায়ক নায়িকার মুখের ছবি , গয়নার অ্যাডে চাকতির সাইজের হারের ডিজাইন দেখে রাখা--- তা ছাড়া ফুচকার দোকান, রোল কর্নার আরো বিভিন্ন খাবারের দোকান--- তাতে লোকের ভীড় এসব ও দর্শনীয়। এইসব করতে করতে বোর হয়ে গেলে ব্যাগের মধ্যে গল্পের বই আছে, সেটা পড়া যায়। তাতে ও খুশি না হলে, বাসের অন্যানরা কি বলছে, কার নিন্দা করছে--- গরমেন্টের নাকি সিপিয়েমের ৩৪ বছরের, নাকি নিজের বসের কিংবা বসের বৌয়ের, তা শোনো। মাঝে মাঝে ফোনে ঝগড়া করে কেউ কেউ, সেটা তো ভীষণ ইন্টারেস্টিং।  আর এই সব কিছুতে যদি মন না থাকে---- মাথা প্রচন্ড ভার কিংবা ভীষণ হাল্কা তাই কিছুই ঢুকবেনা কন্ডিশন তখন জানলা দিয়ে ব্ল্যাঙ্কলি বাইরে চেয়ে থাকো, দিব্যি আরাম।

কিন্ত ু সবার কি সব সুখ সহ্য হয় !! পাশে এসে বসলেন মধ্যবয়স্কা এক মাসিমা। মাত্র মিনিট পাঁচেক আগে এক জনের বাজারের থলি থেকে জ্যান্ত হাঁস বেড়িয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল, বাস সুদ্দ হৈ হৈ, হাঁসের মালকিন স্মার্ট মহিলা--হাঁসকে পাকড়াও করে এমন ভাবে ব্যাগে পুড়লেন তাতে বোঝা গেল রীতিমত এক্সপিরিয়েন্সয়ালা। বানিয়ে বলছি না, সত্যি নিজের চোখে দেখা কান্ড। এই সব দেখে মন ভাল হয়ে যেতে হ্যারি পটার খানা ব্যাগ থেকে বের করেছি, অমনি পাশে মাসিমার আসন গ্রহন। আগে সহযাত্রী লেখায় বলেছি আমার গোবেচারা মুখের প্রস অ্যান্ড কনস। এবার ও সেরকম কিছু হল হয়ত।

মাসিমা একা ছিলেন না, আরেক মাসিমা ছিল। তার সঙ্গে উচ্চস্বরে বাক্যলাপ চালিয়ে যখন বোরড হয়ে গেলেন আমার দিকে নজর পড়লো মাসিমার।

কোথায় নামবে??  বললাম। সেটাই হল কাল।
আমি ও তো ওখানে নামবো। সম্ভাব্য প্রতিবেশীর সঙ্গে বাসে আলাপ হয়ে উদ্ভাষিত মুখ।
কোথায় থাকো?? তাও বলতে হল। এবার মিলল না। মাসিমা একটু দূরে থাকেন কিন্ত ু আমার বাড়ির   পাশে মরনিং ওয়াক করেন---সুগার আছে কিনা।
চাকরি কর বুঝি। বই পড়তে ভালবাস... আমার বৌমা ও সারাদিন বই পড়ে।  খুব ভাল অভ্যাস। ----বলতে থাকলেন মাসিমা।

হ্যারি পটার হাতে ধরাই রইল, বই এর দিকে তাকিয়ে রইলাম, মাসিমা কিন্ত ু  কোনো হিন্ট নিলেন না।
বাস ও ছুটছে, মাসিমার মোনোলগও।

মনে মনে বহুবার বললাম --- মাসিমা ব্যস্ত আছি।
মুখে বলতে পারলাম না। কবে পারব কে জানে!!!

THEN---- about time

When you tossed and turned in the bed till the wee hours of the night,
and eventually felt dizzy in the morning

When your morning greeting is the boss's email -
-major revision of a paper you are totally hopeless about

When your hospital visit is coming closer so fast that you feel like travelling on a comet

When you are shit scared of everything around you
and call someone who refuses to come by today

When at that moment of desperation you want to go back to lab
but cannot because you  are not fit enough to travel alone

WHAT DO YOU DO!!!!

what do one do ????







Saturday, May 21, 2016

স্বপ্ন



স্বপ্ন ১)   সাইকেল এর চাকা ঘুরছে, চারটে চাকা। দু জোড়া প্যাডেলে দু জোড়া পা ওঠানামা করছে। ক্যাম্পাসের রাস্তায় হলুদ আলো। রাস্তার পাশে পরপর হোস্টেল, স্টাফ কোয়াটার্স, তারপর খেলার মাঠ, গেস্ট হাউস সরে সরে যাচ্ছে। সন্ধেবেলাটা বেশ ফাঁকা,  ইতিউতি দু একটা সাইকেল যাচ্ছে, আর আমরা দুজনে। কোথায় যাব জানা নেই, জাস্ট যাচ্ছি। মাঠের দিক থেকে খেলার শব্দ আসছে।ক্যাম্পাসের শেষে নাকি জঙগল আছে, তাতে যাওয়া যায়, কিংবা অন্য কোথাও। ম্যাটার করে না, বেরিয়ে পড়াটাই আসল। ল্যাব এর হাজার ঝামেলা থেকে হঠাৎ করে বিকেল বেলা পালিয়ে যাওয়াই আসল। 

ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে ফুচকা খেয়েছিলাম মনে আছে।
২০০৯ এর সন্ধে।

এই দিনটা পরে ফিরে এসেছে বার বার ---ঘুমের মধ্যে।


স্বপ্ন ২)   একটা সবুজ গ্রাউন্ড, তাতে নীল জলের দীঘি। স্বচ্ছ কাঁচের মত নীল জল, সাদা রংয়ের হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছুটা দূরে ঘোড়াদের থাকার জায়গা---সব কিছু একদম সিনেমার মতন।
গ্রাউন্ড এর শেষে বিশাল বিশাল গাছ। আর একটা সুন্দর একতলা বাড়ি, কাঁচের দরজা দেওয়া। 
আর বাড়ির মধ্যে একটা বিশাল লাইব্রেরী, ছাদ পর্যন্ত ঠাসা বই। জানলার পাশে জল।
চারপাশে অসীম শান্তি---স্বর্গ বুঝি একেই বলে।

খুব অস্থিরতার এক দিনে দেখেছিলাম এটা।



স্বপ্ন ৩)   ট্রেনে চেপে চলেছি। একা একা। কোথায় যাচ্ছি জানি না, ট্রেনে যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে  যাব। ঝাল মুড়ি খেলাম কিনে। ট্রেনটা একটা ফাঁকা প্রান্তর দিয়ে চলছিল। কোন গাছপালা নেই। শেষে একটা মাঠের মতন জায়গায় এসে থামল। সকাল হয়ে আছে, চারদিকে হলুদ আলোয় মাখামাখি, বুকের ভেতরটা খুশীতে ভরে উঠছে। কোন ব্যস্ততা নেই, হইচই নেই। ফাঁকা মাঠের মধ্যে থেকে ট্রেন বেড়িয়ে গেল---কু ঝিক ঝিক। দূরে শহর মতন দেখা যাচ্ছে, আমি আস্তে আস্তে সেদিকে গেলাম।

ক্লাস সেভেন এ দেখা।


“If you are happy in a dream, Ammu, does that count? Estha asked. "Does what count?" "The happiness does it count?". She knew exactly what he meant, her son with his spoiled puff. Because the truth is, that only what counts, counts....."If you eat fish in a dream, does it count?" Does it mean you've eaten fish?”-----------The God of Small Things

বৃষ্টিদিনগুলো বড্ড মন কেমন করা---স্বপ্নের মতন।




Saturday, May 7, 2016

শনিবারের সকাল

১) মেঘ মেঘ আকাশ----তুমি যে আমার।
২)মাথার মধ্যেও মেঘ---অবিশ্রাম বড়-বড় সুঁচে্র মতন বৃষ্টি।
৩) চোখ জুড়িয়ে আসা ঘুম----ব্লাড প্রেসার ৮০/৬০।

৪)  youtube এ গীতা দত্ত--- নিশিরাত বাঁকা চাঁদ আকাশে।

৫) সামনে rejected paper---এ জীবনে যতটুকু চেয়েছি, মন বলে আর বেশি পেয়েছি।

৬) চোখ বন্ধ করলে যেন ভেসে যাচ্ছি অন্য কোথাও---- যেখানে বাঁশি সেই সুরে আর ডাকবেনা।

গানের লিঙ্কঃ




Thursday, May 5, 2016

সহযাএী

সারাজীবন বাড়ির পাশে স্কুল কলেজ (ইউনিভা্রসিটির ২ বছর বাদ দিয়ে) করেছি। লাস্ট ইয়ার যখন বাড়িবদল হল তখন বাস এ  ল্যাবের দূরত্ব ৩০ মিনিটের। সেই বাস যাএা নিয়ে এবারের লেখা।

৩০ মিনিটের এর জার্নিতে কি আর ঘটবে, কিন্ত আমার ঘটত। বাস এ উঠে সবার মুখের দিকে চেয়ে বুঝতে চেষ্টা করতাম কে আগে নামবে। কার না কার দয়া হত, বেশির ভাগ সময় বয়স্ক লোকদের আর আমি সিট পেতাম। একবার এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা, তিনি আমাকে বললেন উনি নেবে গেলে ওনার সিটটায় আমি বসতে পাব, এদিকে আমার স্টপ তার একটু পরেই। ভীড় থেকে একটু দূরে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। ভদ্রমহিলা এর স্টপ আসতে আমাকে প্রায় ঘাড় ধরে সিটে বসিয়ে দিলেন, আমার সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে। সামনে দাড়িয়ে  থাকা মেয়েটি কে বসতে দিলেন না, আমাকে নাকি প্রমিস করেছেন। বাকিরা শুনে বলেছিল তাদের সঙ্গে এরকম হয় না। 

আমার এক বন্ধ ু বলল আমার মুখ দেখেই নাকি মনে হয় আমার সাহায্য দরকার---করুণা উদ্রেককারী যাকে বলে। জানিনা এরকম চশমা আঁটা গো্ল গোমড়া মুখ দেখে কি করে করুণা হয়, আমার তো হয় না।

তবে একবার বড্ড ঝামেলায় পড়েছিলাম। বাস এ বসে online এ জিনিস অর্ডার দিচ্ছি, পাশের জন জানতে চাইল কি করে online শপিং করে। বুঝিয়ে বললাম। তারপর তিনি আমি কি করি জিজ্ঞেস করার ভদ্রতটা করেই নিজের গল্পে চলে গেলেন। আমার অসুবিধা ছিলনা শুনতে কিন্তু গল্পটা হল ওনার বাগদত্তা বিদেশ চলে যেতে চাইছে P.hD করতে যেটায় ওনার আপওি। শুনে গা জ্বলে গেল, এরকম পেটখোলা লোকের বাগদত্তার কি হাল ভেবে হাসি ও পেল। বাকি রাস্তাটা কখন পোঁছাবো ভেবে কানটা বন্ধ করে কাটালাম। এটা কিসের ফল কে জানে। 





Wednesday, May 4, 2016

ছোটবেলার বই

প্রচন্ড চঞ্চল ছিলাম নাকি, মানে অন্যরা বলত। নিজে বুঝতাম না, বোঝার কথাও নয়। Nursery তে বাবা কে ডেকে পাঠাল।ক্লাসে আমার পড়া শেষ হয়ে যাচ্ছে আর তারপর  নাকি এত কথা বলছি বাকিরা পড়তে পারছে না। গল্পের বই কিনে দেওয়া হল যাতে শান্ত হয়ে থাকি। সেটাই শুরু। প্রথম কি বই পেয়েছিলাম মনে নেই। যেগুলো মনে আছে সেগুলো হল ছবিতে রামায়ণ আর মহাভারত। এসব ছাড়াও ছিল ছবি অলা অনেক কটা ; তার মধ্যে শুধু মনে আছে একটায় ইল্বল-বাতাপি এর গল্প ছিল।
পেটের ভিতর থেকে রাক্ষস বেরিয়ে আসছে সেটা মনে হয় খুব impressive লেগেছিল চার বছর বয়সে।

Nursery শেষ হতে স্কুল থেকে প্রাইজ দিয়েছিল-একটা ঈশপ এর গল্প আর অন্যটার নাম "পুতুলের চিঠি"। পরের বই টা কিছু বুঝিনি ---তাই মনে হয় কম অত্যাচার হয়েছিল ওর উপরে। বইটা আজও  আছে--ঈশপ এর গল্প  কবে উধাও হয়েছে।

সবচেয়ে পছন্দে্র বই কেনা হল ক্লাস ২ তে, স্কুল এর exhibition থেকে। বইএর নাম "সোনার চাবি কিংবা বুরাতিনোর কান্ডকারখানা"। রাশিয়ান গল্পের অনুবাদ। Aleksey Nikolayevich Tolstoy এর লেখা।কিভাবে কাঠের পুতুল বুরাতিনো পুতুলনাচের দলের মালিক অত্যাচারী কারাবাস বারাবাস কে জব্দ করবে আর সব পুতুলদের মুক্ত করে নিজেরা পুতুল নাচের দল খুলবে সেই নিয়ে গল্প।  আর বই ভরতি ভাল ভাল ছবি।

পরের বছর exhibition থেকে কেনা হল মণির পাহাড়- সোভিয়েত দেশের রুপকথা। সেটাও গল্প আর ছবিতে ভরতি। মলাট টা এত সুন্দর ছিল; সেটা যাতে হারিয়ে যাতে না যায় তার জন্য আলাদা করে গুছিয়ে রেখেছিলাম। ফলস্বরপ বইটা আছে, মলাট টা আর নেই।
এই বই দুটো খুব special কারণ এগুলো নিজে পছন্দ করে কিনেছিলাম। আর সেই পছন্দ এখন বদলায়নি। জীবনে অনেক বই পড়ে মনে হয়েছে সময় টা নষ্ট করলাম; কিন্ত এই দুটো বই এখনো খুব ভাল লাগে।

জন্মদিনে সবাই বই দিত, রুপকথা আর ভুতের গল্পই বেশি পেতাম। ক্লাস ফোর এর জন্মদিনে পেলাম দশ দিগন্ত---লীলা মজুমদার এর দশটি ছোটদের উপন্যাস। এক আশ্চর্য জগত খুলে গেল যেন, তখনো অভিভুত হয়েছিলাম---এখনো হয়ে চলেছি।

এর পর ফাইভে উঠে বড়ো ভাবতে শুরু করলাম নিজেকে---লুকিয়ে সুনীল গাঙ্গুলির বই পড়েছিলাম, সেগুলো আর ছোটবেলার বই নয়।

নিচে বুরাতিনোর ছবি, বইয়ের মলাট থেকে নেওয়া।





অত্যাচারী কারাবাস বারাবাস।