সারাক্ষণ মনটা চা চা করত। ল্যাব থেকে তিনবেলা ক্যান্টিনে চা খেতে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। সকাল ১১ টা, দুপুর ৩ টে আর বিকেল ৬টা । এই সবগুলোতে সব সময় পার্টিসিপেট করা যেত না, কারণ কাজের সময় সবার আলাদা আলাদা। ক্যান্টিনে চা এর টাইম ও বাঁধা, তাদের আরো রান্না-বান্না আছে। বাকি সময় চা খেতে হলে কিয়স্ক ভরসা। লেবু চা, লিকার বা নেস কফি। তার সঙ্গে কিয়স্কের ছেলেটার (যার নাম সোম) বকবকানি ফ্রি।
" কাজ করে কি হবে, সেই তো সাত বছর লাগবে।" ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর যখন ল্যাবে এত কাজ পড়েছে যে বেরনোর উপায় নেই, তখন ল্যাবেই আসত চা কিয়স্ক থেকে। তবে সেটা সহজ ব্যাপার নয়-- ফোনে অর্ডার দাও , তারপর অপেক্ষা কর--- এবং শেষে "নেহাত ক দিদির ল্যাব তাই দিয়ে গেলাম, নইলে আমি খুব বিজি।"
ক দিদি ক্যান্টিনে হামলা করেছে
ক্যান্টিনে চা এবং টা
কিয়স্কে আমরা---তখনো ছোটো ছিলাম (২০১০)
শনিবার ২টোর পরে ক্যান্টিন -কিয়স্ক দুটোই বন্ধ। তখন হয় পাশের ভি ই সি সি তে যাও অথবা খালপাড়। খালপাড়ে গেলে অবশ্য জিলিপি আর সিঙ্গারা খাওয়া যেত। অথবা রাস্তার মোমো বা ঝালমুড়ি। আর যখন বেরনোর একদম ইচ্ছে নেই কিন্তু চা না খেলে বাঁচব না, তখন ইলেকট্রিক কেটলি আর টী ব্যাগ ভরসা।
কিন্তু জীবনে কোনো সুখই চিরস্থায়ী নয়,এই কথাকে সত্যি প্রমান করে কেটলি ভেঙ্গে গেল একদিন আর কিয়স্কও উঠে গেল। তখন চা এর জন্য টাইম বেঁধে গেল। সেই টাইমের বাবু হয়ে চলছিল। বসের মুখে হাসিও ধরছিল না, কিয়স্ক উঠে গিয়ে নাকি আমাদের আড্ডা কমেছে, কাজের সময় বেড়েছে।
এরকম মাস খানেক চলার পরে এল সুখবর। ভি ই সি সি তে CCD র স্টল খুলছে। গদি আঁটা চেয়ারওলা, এ সি লাগানো, ৬০ টাকা কফি তে ২০ টাকা ট্যাক্স বসানো CCD নয়। একটা কাঠের বাক্সের মধ্যে টেবিল পেতে কফি বানানোর মেশিন রাখা। মেশিনের মাথায় গোল ট্রান্সপ্যারেণ্ট জার বসানো। জারের মধ্যে CCD লেখা প্যাকেট খুলে কফিবীন ঢেলে মেশিনের সুইচ টিপে কফি বানিয়ে CCD লেখা কাগজের কাপে করে দিচ্ছে-- ১০ টাকায় ছোট কাপ, ২০ টাকায় বড়।
শুধু তাই নয়, স্যুপও আর আসাম টীও বানিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে আরো কুকিস আর মসলা মুড়ি, কেক হেনতেন। কদিনের মধ্যে ফ্রিজের আমদানী হল, দই, লস্যি ইত্যাদি রাখা শুরু হয়ে গেল। এই স্টল সকাল থেকে বিকেলে ৬.৩০ অব্দি খোলা, মাঝে খালি ৩০ মিনিটের লাঞ্চ ব্রেক। আমরা হাতে চাঁদ পেলাম আবার। দুপুর ৩টেয় ক্যান্টীন কে ডিচ করে CCD যাওয়া নিয়ম হয়ে গেল। দল বেঁধে OC ল্যাব কফি ট্রিপ--বসও ইনক্ল ু ডেড ।
কফি-আসাম চা- স্যুপ
কিছুদিন পর ভি ই সি সি কর্তৃপক্ষের মনে হল এই CCD এর জন্য তাঁদের সুরক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি হচ্ছে। দুটো ইন্সটিট্যুটের মাঝের কমন রাস্তার পাহারা জোরদার হয়ে গেল-- আই কার্ড না দেখিয়ে ঢোকা বন্ধ।
সেই সময় আই কার্ড ভুলে গেলে বর্ডারে দাঁড়িয়ে কফি/চা য়ের অপেক্ষা ছাড়া গতি ছিলনা।
এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে--নাম লিখলেই আপাতত চলছে। জানিনা আবার কবে নিয়ম বদলে যায়।
বর্ডার এরিয়া ( ছবি ১ )
বর্ডার এরিয়া ( ছবি ২ )
আমাদের এই CCD প্রীতিতে সাহা ক্যান্টিনের লোকেরা শুরুতে বেজায় অভিমান করেছিল, সময়ের সাথে সাথে তার প্রশমন হয়েছে। আমরা আস্তে আস্তে একুল- ওকুল বজায় রাখতে শিখে গেলাম।
ভি ই সি সি তে CCD র ফ্লারিশড বিজনেজ দেখে আমাদের ক্যান্টিনে একটা মেশিন বসে গেল। ভি ই সি সি র ছেলেটি এসে নতুন লোককে কফি বানানোর ডেমনস্ট্রেশন দিয়ে গেল----- কিন্তু আমরা কফি খেয়ে মুখ বেঁকিয়ে বললাম-- হয়নি হয়নি ফেল। দুটো লোক বদল হল, তারপর একদিন বাক্স বন্দি হয়ে কফি মেশিন বাড়ী চলে গেল। এর কারণ অ্যানালিসিস করতে গিয়ে ভি ই সি সির ছেলেটির হাসিমুখ আর উদার হস্তে খুচরো দেবার ক্ষমতার জন্য ওকে অনেক বেশী নম্বর দেওয়া হয়েছিল।সাহা ক্যান্টিনের লোকটাকে কম নম্বরের কারণটা নিতান্তই শিশুসুলভ--- তাই এখানে আর বল্লাম না।
আমরা ভি ই সি সি গিয়ে রোজকার মতন গুলতানি করতে লাগলাম। ছেলেটি আজকে ম্যাডাম ( বস যেদিন আমাদের ছেড়ে গিয়ে একা কফি খায়) এইমাত্র এসেছিলেন বলে আমাদের গসিপের জোগান দিতে থাকল।
OC ল্যাব ইন CCD ( ছবিতে OC নেই )
ছবি দেখে খুব ভালো লাগল, প্রিয়াঙ্কা। দল বেঁধে চা খেতে যাওয়ার দিন এত আগে পেরিয়ে এসেছি, সে সব মনে পড়ে গেল।
ReplyDeletethanku thanku .amar o ei din sesh hote chollo..
Delete