রাতের সময়টা খুব ভাল লাগে মর্জিনার।
সারাদিন কাজ করে এখন সে একটু গা এলিয়ে বসে।
পাশে আলাদিনের আশ্চর্য্য প্রদীপ।
একটু একটু করে প্রদীপে তেল ঢালে মর্জিনা। পরম যত্নে দেশলাই জ্বালায়, প্রদীপের শিখা জ্বলে ওঠে--- সেই আলোতে আবদুল্লার ছবি ও প্রজ্জলিত হয়ে ওঠে। অল্প হাওয়ায় দোল খায়, মর্জিনার দিকে চেয়ে হাসে।
প্রদীপের কম্পমান শিখায় আবদুল্লার চোখের পাতা পড়ে--- কি যেন বলে ওঠে। মর্জিনা আরেকটু
ঝুঁকে বসে, ভাল করে শোনার জন্য। বাইরে টিভির শব্দ, তাতে মুখের কথা হারিয়ে যায়--- বাজতে থাকে গান--- রাতকলি এক খোয়াব মে আয়ি।
"ও মাঈ ভুখ লাগা হ্যাঁয়"।
ভুখ। ভুখ। সারাদিন আছে এই নিয়ে।
আবদুল্লার কাছ থেকে সরে যায় মর্জিনা। রুটি বেলতে হবে, খেতে দিতে হবে। সর্বগ্রাসী খিদে এই বাচ্চা দুটোর পেটে--- মাঝে মাঝে ভাবে মর্জিনা। যেমন ছিল ওদের বাবার--- যতো খিদে তত তেষ্টা। সেই তেষ্টার দাম দিতেই এখন ছবি হয়ে দোলে আবদুল্লা।
নেশার তেষ্টা। কম পয়সায় দামি নেশার দাম।
আর ভাবতে পারে না মর্জিনা। তার এখন রাতের অনেক বাকি। কালকের মধ্যে ব্লাউসগুলো সব রিফু করে দিতে হবে, নইলে টাকা কাটবে।
রুটি খেয়ে বাচ্চা দুটো ঘুমোয়। পাশাপাশি, জড়াজড়ি করে।
মর্জিনা কাজ নিয়ে বসে। হাজার সুতোর কাজ। কেরোসিনের আলোতে ঝিকমিক করে ওঠে চুমকি- জরি। চল্লিশ চোরের গুহাতে মণি মানিক্যের মাঝে বসে মর্জিনা সেলাই করে।
No comments:
Post a Comment