শুক্রবারের দুপুর। ৩ টেয় বেরতে হবে, ৪ টেয় ট্রেন। খড়্গপুর থেকে কলকাতা। একদম বেরনোর মুখে ঝম ঝম করে বৃষ্টি। আমি আর বি হাঁ করে বসে ছিলাম বৃষ্টি থামার জন্য, তিনি নিজের খুশিতে পড়তে লাগলেন বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। আজকে আর বাড়ী যাওয়া হল না----- এই ঘ্যানঘ্যানটা যখন তুঙ্গে, বি বলল সাড়ে ৬ টায় ধৌলীতে চেষ্টা করে দেখি। বাড়ী ফেরাটা তখন এতটাই অ্যাট্রাক্টীভ, লাফিয়ে উঠলাম। ব্যাগ নিয়ে, দরজা আটকে, রিক্সা ধরে স্টেশন। পৌঁছে জানা গেল ট্রেন লেট, দাঁড়িয়ে রইলাম ওভার ব্রিজের মাথায়--- আড়াই ঘন্টা। সাড়ে ৬ টার ট্রেন ঢুকলো সাড়ে ৮ টায়। আমরা চড়ে বসলাম। সাড়ে ১০ টায় হাওড়া, সেখানে থেকে দুজনে দুদিকে যাবো--- ব্যাগ নিয়ে আবার ছুট---আরো ১ ঘন্টা পরে বাড়ী। দুবাড়ীতে ততক্ষণে হাওমাও শুরু হয়ে গেছে --- কিন্ত ু আমাদের কোনো হেলদোল নেই-- দেরী হয়েছে তো কি, বাড়ীতে তো এসে গেছি।
এই দেরীটায় আমার কোনো হাত
ছিল না। তার মানে এই নয় যে আমার সময়জ্ঞান তুখোড়, বরং উলটোটাই সর্বজনগ্রাহ্যভাবে সত্যি।
সাহা ইন্সটিটুইট এ জয়েন করতে হবে, সকাল ১১ টায় রিপোরটিং। আমি যথারীতি লেট, বাস
ট্রামের দেরী নয়, কারণ দুরত্বটা আমার বাড়ী থেকে ঢিল ছোঁড়া। ন ছোটোবেলার অভ্যাসবশত দাঁড়িয়ে
ছিল রাস্তায় আমার জন্য, ফলত দুজনেই লেট। ইন্সটিটুইট এ সেই দিনটা বিশেষ
দিন। গেট এর সিকউরিটি ও তাই কড়া, নাম মিলিয়ে নতুন স্ট ুডেন্টদের ঢোকাচ্ছে, সেই কাগজ
ফেরত চলে গেছে ১১ বাজতেই। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম, ফোন করা হল, বেশ কিছুক্ষণ পরে
কাগজ এল, অ্যাডমিশন পেলাম এস আই এন পি তে।
আমার এই দেরী নিয়ে তেমন
লজ্জাবোধ কখনো করিনি।একটা পোস্ট পড়েছিলাম তাতে লেখা ছিল যারা দেরীতে আসে তারা আসলে নাকি খুব অপ্টিমিস্টিক--- এতো সহজে
আশাবাদী হতে পেরে বরং আনন্দ হয়েছিল।
ত্রিশ বছর কাটিয়ে এটা রিয়ালাইজ করেছি যে মানুষের জীবনটা আসলে একটা
প্যাটার্নে চলে, সেটা আবার প্রত্যেক মানুষের আলাদা আলাদা।
এই প্যাটার্নটা কখন মানুষটা নিজে বানায়, আবার কখন প্যাটার্নটাই মানুষটা কে বানায়-- ডিম মুরগীর সমস্যার মতন।
আমার প্যাটার্ন হচ্ছে দেরী হয়ে যাওয়া--- ইচ্ছেয় অথবা অনিচ্ছেয়।
স্কুল শেষ হতে বাড়ীর কাছে কলেজে ফর্ম না তুলে অনেক দূরে একটা কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। ২ মাস পরে কাছের কলেজে আসতে হল, তখন বায়োকেমিস্ট্রির সব চেয়ে দরকারি চ্যাপ্টার পড়ানো শেষ হয়ে গেছে--- আমার জাস্ট দেরী হয়ে গেল।
এম এস সির সময়; এরপরে পি এইচ ডি তে চেষ্টা করব কিনা এই ডিসিশনটা নিতে পারিনি, তাই কোনো পরীক্ষা মন দিয়ে দিইনি। এক বছর বাড়ীতে বসে পড়ে পরীক্ষা দিলাম---আই আই টি তে গিয়ে ফিরে ও আসলাম--- বাইরে থেকে দেখলে এতেও লেট করে ফেললাম।
২০১৪ তে যখন পেপার পাঠালাম তখন ভেবেছিলাম বছরের শেষের দিকে অ্যাক্সেপ্টেড হয়ে গেলে পরের বছর ফেলোশিপ থাকতে থাকতে থিসিস জমা দেব। ১০ মাসে তিনটে রিভিসনের পরে রিজেক্টেড পেপারটা যখন অন্য জার্নালে পাবলিস হলো তখন ফেলোশিপ শেষ--- কাজ অনেক বাকী।
এই লেট হবার ট্র্যাডিশন রাখতেই মনে হয়, জুন মাস চলে এল। যা যা করার ছিল কিছুই করা গেল না।
আনন্দ সংবাদঃ
পুরোটা পড়লেই বোঝা যাচ্ছে যতই লেটলতিফ হই না কেন--- কেঁদে-কঁকিয়ে, হাঁপাতে-হাঁপাতে শেষমেষ এন্ডপয়েণ্টটা টাচ করেই ফেলেছি। প্রত্যেকবার একই ঘটনা। তাই ওটাও আমার জীবনের অন্য একটা প্যাটার্ন। সেই ভরসায় বসে আছি--- বছরখানেক লেট হচ্ছি হয়ত, কিন্ত ু ডেস্টিনেশনে ঠিক পৌঁছে যাব ।
যাই হোক না কেন গুণীজনেরা তো বলেই গেছেন ---" লাইফ টেকস টাইম"।
Life actually takes time dear.. Dhoirjo dhor.. Things must be good :)
ReplyDeleteOsadharon
ReplyDeleteঃ)থ্যাংকু থ্যাংকু
DeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteOsadharon
ReplyDelete☺
ReplyDelete:D
DeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeletesometimes (probably always for you :P ) the best things in life take a little longer time :D keep up the lyad factor on :D
ReplyDeletesotti :P
DeleteHeavvyy..oii optimistic er theory ta to daruun..
ReplyDeleteAmar o tai legechilo :)
Deletedestination e pouchei jabi..no chap....ei j atto valo likhete parli..just deri korli bolei to !!
ReplyDelete:) bolchis !!!
Delete