"আজ জানে কি জিদ্ না করো"---- পুরোনো লং প্লেয়ারে বাজছিল। ফরিদা খানুমের গলার মখমলি স্বর। সাথে শুধু তবলার সংগত।
হায় মর জায়েঙ্গে---- ভাবছিলেন তালুকদার ইজিচেয়ারে বসে । মরেই তো আছেন তিনি, সেই যবে থেকে শুনেছেন এই গলা।
"ওয়ক্ত কি কয়েদ মে জিন্দগী হ্যায় মগর
চন্দ ঘড়িয়া ইয়হি হ্যায় যো আজাদ হ্যায়"
সুরেই বন্ধন--- সপ্ত সুরের জালেই মুক্তি---- তালুকদার ভাবলেন।
ঘটাং ঘটাং করে ফ্যানটা বন্ধ হয়ে গেল। সারা বছর লেগেই আছে লোডশেডিং। তাও কাল রাত থেকে দু-চার পশলা ঝরছে-- তাই শান্তি। কিন্ত ু গানটা বন্ধ হয়ে গেল--- দুচ্ছাই বলে উঠে জানলার দিকে এগিয়ে গেলেন তালুকদার। জানলার নীচে হয়ে আছে নয়নতারার ঝাড়-- তাতে ফুল ধরেছে গোটা পাঁচেক।
সাড়ে ৭ টা বাজে, চা দিয়ে গেল না এখনো --- বিন্তিটার কোনো আক্কেল আছে! রাগটা জমছিল, কিন্ত ু এই বয়সে রাগও শরীরে সয়না--- ব্লাড প্রেসারটা এমনিতেই ওঠানামা করে। এই ভেবে তালুকদার রান্না ঘরের দিকে গেলেন।
গিয়ে অবাক। রান্নাঘর ফাঁকা, কড়াই থেকে সুঘ্রাণ আসছে ---- তুলে দেখলেন খিচুড়ি ফুটছে টগ বগ করে। কলতলা, বারান্দা কোথাও বিন্তির টিকিটাও নেই। এত সকালে রান্না বসিয়ে গেল কই-- ভাবতে ভাবতে আবার রান্নাঘরে ঢুকতে যাবেন, সামনে দেখেন লোকটাকে।
এইয়ো !!! চোর নাকি। ভয়ে তালুকদারের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। কিন্ত ু চেঁচানো কর্তব্য তাই বলে উঠলেন--- কে তুই ব্যাটা; চোর---- ওরে বিন্তি রে চোর এসেছে রে--- পুরোটা বেরলো না-- যেটুকু চিঁ চিঁ করে বেরলো সেটা শুনে তালুকদার নিজেই অবাক। এবার অজ্ঞান হয়ে যাবেন নাকি দৌড়ে পাড়ার লোক ডাকবেন সেটা ঠিক করছেন, দেখলেন লোকটা কেমন থতমত খেয়ে মাটিতে বসে পড়ল, চোখ বুজে ফেলেছে, গায়ের রঙ হলদে- সবুজ হয়ে যাচ্ছে। ওমা শরীর খারাপ করছে নাকি, প্রেসার কমে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে হয়ত! চোখে মুখে জলের ছিটে দিতে লোকটা মিট মিট করে চাইল-- গায়ের রঙ বেরং টাও অনেকটা ঠিক লাগছে। " শুয়ে থাক ব্যাটা" এই বলে তালুকদার প্রেসার মাপার যন্ত্রটা এনে প্রেসার দেখলেন।
"নাহ ঠিকই আছে। চুরি করতে এসেছিস??"
উত্তরে লোকটা প্রথমে গব গব কিসব বলল--- তারপর বোঝা গেল বলছে না না চুরি নয়। তবে কথাগুলো জড়ানো মত। মিট মিট করে তাকাচ্ছে, মাথার উপরে মাত্র ৫ টা চুল খাড়া হয়ে আছে, একটু তোতলাচ্ছে। সব দেখে কেমন মায়া হল তালুকদারের।
"চা খাবে নাকি? বিন্তি থাকলে বানিয়ে দিত। সকালের চা হয়নি এখনো"-- শুনে তড়াক করে উঠে লোকটা জল গরম বসিয়ে দিল। মেপে মেপে দুধ, চিনি, চা দিয়ে পাঁচ মিনিটে বানিয়ে দুটো কাপে ঢেলে একটা নিজে নিল, অন্যটা তালুকদার কে দিল।
আঃ। গলাটা জুড়িয়ে গেল-- বর্ষার সকালে চা খেয়ে। নাহ লোকটা হয়ত চোর কিন্ত ু চা ভালই বানায়।
ওমা এক নিঃশ্বাসে কাপ ফাঁকা করে লোকটা খিচুড়ির হাঁড়ি ঘাটতে শুরু করেছে।
পেঁয়াজ আর বেগুন কেটে ফেলল-- তার পর তালুকদার এর হাতে ধরিয়ে আগে গবগব জবজব করে আর তারপর তুতলে তুতলে যেটা বলল তার মানে দাঁড়ায়, পেঁয়াজী - বেগুনী খেতে চায় -- বানাতে জানে না।
তালুকদার একটু অবাক হয়ে তাকাতে লোকটা আবার হলুদ- সবুজ হতে শুরু করছে দেখে নিজেকে সামলে নিলেন। আবার না অজ্ঞান হয়ে যায়।
দুটো বাটিতে নুন লঙ্কাগুড়ো দিয়ে বেসন গুলে, একটায় পেঁয়াজ মাখলেন। অন্যটায় বেগুন ডোবালেন। লোকটা কড়াই চাপিয়ে দিয়েছিল উনুনে-- তাতে তেল গরম হতে পেঁয়াজী ছাড়লেন--- একটা ভেজে নামাতেই লোকটা খেয়ে ফেলল সেটা। কিছুক্ষণ চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইল, গায়ের রঙ গোলাপী- নীল হয়ে যাচ্ছিল। তালুকদার আর অবাক হচ্ছিলেন না। সকালটা আজকের অন্যরকম-- আগেই বোঝা উচিত ছিল। নইলে অন্যদিন শান্তারাম এসে না ধরলে বিছানা থেকে নাবতে পারেন না, আজকে রান্না ঘরে এসে রান্না করছেন। বিন্তিটা যে নেই ভালো ই হয়েছে একদিকে।
বেগুনী ভাজতে শুরু করলেন তালুকদার। এক প্রস্থ ভাজা হতে, বাকিটা লোকটা ভাজল। দুজনে মিলে খিচুড়ি দিয়ে খেলেন। বাইরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছিল।
খাওয়া হতে হাত ধুয়ে লোকটা তালুকদারের ঘরে গিয়ে লং প্লেয়ারের দিকে দ্যাখাল।
" ও তে গান হয়। গান শুনবে?"
বাজালেন আরেক বার ফরিদা খানুম। কেমন আবছা হয়ে গেল লোকটা।
ভালো লেগেছে!! নেবে নাকি। আমার কাছে দুটো আছে।
শুনে চক চক করে উঠল চোখ। খুশি হয়ে নিল--- তালুকদারের পিঠে হাত বুলিয়ে দিল একটু-- আরাম হল খুব।
ঘড়িতে আটটা। বিন্তি বাজার থেকে ফিরে এসেছে , শান্তারামের সঙ্গে। রান্নাঘরে বাসনের শব্দ।
তালুকদার লোকটা কে জিজ্ঞেস করলেন বাড়ী টাড়ি আছে নাকি এখানেই থাকবে।
লোকটা নয়নতারার ঝাড়ের নীচ থেকে একটা ছাতা মতন বের করে দেখাল--- সুইচ টিপলে ছাতা খোলে-- বেশ রামধনুর রঙের। তার পর এক বার হ্যান্ডশেক করে ছাতা মাথায় দিয়ে উড়ে গেল।
তালুকদার লং প্লেয়ার টা চালিয়ে দিলেন--- এবার বেগম আখতার
"ও যো হাম মে তুম মে করার থা তুমহে ইয়াদ হো কে না হো"।
আকাশে তখন রামধনু।
পেঁয়াজীর ছবি
Tor pk beguni khete valobase, jabbor legeche etaa..
ReplyDeleteখিচুড়ির সাথে পেঁয়াজী- বেগুনী ।
Delete:)
Sokal 7 ta te khichri beguni....bhojho kando
ReplyDeleteEkhane sokal.lok tar to noe. R onek due jabe to.
Deletebeguni khete icha korche to..
ReplyDeleteHe he..kheye fel..ei sob ichche opurno rakhte nei.
Delete