statcounter

Thursday, June 23, 2016

নাইট আউল এবং সাঁতারকান্ড

রাত জেগে থাকার আসল কারণ হচ্ছে ডেডলাইন। কিছুটা নিজের (সময়ের কাজ সময় থাকতে কি আর ভদ্রলোকে করে) আর বাকিটা ওষুধ দিতে না-জানা এবং জানা ডাক্তারবাবুদের ( স্ত্রী- পুরুষ লিঙ্গ ব্যবহার বাঞ্চনীয় নয়)।

কিন্ত রাত জেগে কাজ কতটা হচ্ছে বলা মুশকিল তবে মাথা কদিন ফাঁকা যাবার পরে ব্লগের আইডিয়া এল--সেটাই বা কম কি।  আর  এক সং্কট মুহূর্তে লাফিয়ে ঝাপিয়ে ১০ টা পোস্ট লিখে, রাজ্যশুদ্দু লোক কে মেসেজে, হোয়াটস অ্যাপে, ফেসবুকে দেখো আমি কেমন লিখতে জানি বলে বড়াই করেছি। এখন ১ মাস না যেতেই আইডিয়া নেই , ব্লগ বন্ধ বললে নিজের কাছেই নিজেই হাসির পাত্র হতে হয়।

তাই আইডিয়া আসাটাই সেলেব্রেশনের কারণ।

যাই হোক, ব্যাপার হল রাতজাগা নিয়ে। কিছু লোক রাতে জাগে আর দিনে ঘুমোয়। স্কুল- কলেজে আমি এই দলে পড়তাম না - যেই পড়াশুনা শেষ হল, অম্নি আমার রাত জাগা শুরু হল। এতে আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছিলনা, হচ্ছিল বাড়ির লোকের এবং হিতৈষী প্রতিবেশীর। মায়ের নাকি ঘুম হচ্ছে না, যদিও দুজনের ঘর আলাদা। মাঝে মধ্যে উলটো দিকের বাড়ির পন্দার ও মায়ের সমস্যা হচ্ছিল (পন্দার আসল নাম সামান্য আলাদা, তবে আমার সুরক্ষার খাতিরে এই নামটি ব্যবহার করা হচ্ছে। নামকরণকারীঃ সদ্য কথা বলতে শেখা আমার কাকাতুতো ভাই) , যদিও পন্দার ফ্ল্যাট আমার ঘর থেকে প্রায় ১৫ ফিট দূরে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে পন্দার মায়ের অসুবিধাটা আসলে কৌতুহলজাত---"রাত জেগে ল্যাপটপে কি করা হয় " গোত্রের। আমার মায়েরটা দুশ্চিন্তা করার মাতৃসুলভ অভ্যাস এবং দায়িত্ব পালন ছিল। তবে সবার অসুবিধা অগ্রাহ্য করে আমি রাতে জেগে থাকা এবং তার ফলে দেরীতে ল্যাব যাওয়া বজায় রাখছিলাম।
রাত জাগার সপক্ষে যুক্তি ছিল যাদের মুনসাইন হয় তারা নাকি "নাইট আউল"--আর নিজের জন্মের মাস তারিখ তো আমার হাতে ছিলনা। তাই দোষটা আর যারই হোক না কেন--আমার অন্তত নয়।

এভাবে ভালোই চলছিল--কিন্তু এসে গেল পি এইচ ডি র সাঙ্ঘাতিক থার্ড ইয়ার----আর দ্যাখা গেল প্রজেক্ট কিছুই দাঁড়ায়নি। তখন ল্যাবের অলিখিত প্রোটোকল মেনে সাঁতার শিখতে ভর্তি হয়ে গেলাম। সকাল ৮ টায়  ৩০ মিনিটের ক্লাস। স্কুলে থাকতে দুবার ভর্তি হয়ে সুইমার হতে পারিনি (নিজের সুইমার বন্ধ ু কে জলে প্রায় ডুবিয়ে দিচ্ছিলাম) ---এবার সব সুদেআসলে পুষিয়ে নেবো--এরকম একটা মারকাটারি মনোভাব নিয়ে সকাল সকাল উঠে পুল যাওয়া শুরু হল। সাঁতার ভালই হচ্ছিল, ১৫ মিনিট দেরিতে পৌঁছাছিলাম তবে বড় পুলে প্রোমোশন হয়েছিল। ফাঁকিবাজ বলে পরিচিতিও হয়েছিল , তার মানে নোটিশড হচ্ছিলাম। আড্ডাও ভালো চলছিল---  অ দিদি ছিল আর একটা চারবছর বয়সি বন্ধু হয়েছিল। ল্যাব থেকে অ এবং ন দিদিও  সাঁতার যেত--তারফলে কাজের মধ্যে ফাঁকা সময়গুলো রোজ কে কি ভুল করল, কতটা পারল, গভীরে গেল নাকি হাঁটুজলে হাবুডুবু খেল, পা নড়ল নাকি হাত, ডুবে গেল কিনা এই আড্ডা চলত সারাক্ষন। আর হত ইউটিউব দেখে প্রাইভেট টিউশন নেওয়া। এই সাঁতারের চক্করে রাতজাগা মাথায় উঠে গেল। বাড়ী ফিরে বেলা ১০.৩০ এর মধ্যে ল্যাব যাওয়া শুরু হল এবং কপিবুকের মতন এক্সপেরিমেন্টরা রেজাল্ট দিতে শুরু করল। শেষে বস ডেকে ঘোষনা করলেন রাত জাগে শুধু চোর, আর ভুতেরা (কপিরাইট- বসের বাড়ীর লোকের)---আমার যে সাঁতারকালীন উন্নতি ঘটেছে তাতে উনি বেজায় খুশী।

ঠিক তার ১৫ দিনের মাথায় ইনফেকশন হতে হাত ফুলে সাঁতার যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল সেবারের মতন। এই অসুখ খুব ভুগিয়েছিল, মাস খানেক ল্যাব কামাই হয়েছিল--তবে তা অন্যগল্প। 

আমি আবার আগের রুটিনে ফেরত চলে গেলাম--- ভুত আর চোরের সাথে রাত জাগতে থাকলাম।

বি দ্রঃ পোষ্টটা রাতে লেখা শুরু হয়েছিল, কিন্ত ু ডেডলাইন চক্করে  লেট হয়ে গেল।

সবাই ভালো থাকবেন, দিন কিংবা রাত যখন জেগে থাকতে ভালো লাগে সেটাই করবেন---পন্দার মায়ের অসুবিধার তোয়াক্কা করবেন না (নিজের মায়েরটা করতে পারেন )।







2 comments: