statcounter

Friday, June 3, 2016

সংকল্প

বায়োপ্সি রিপোর্টটা হাতে পেয়ে বিশ্বাস হচ্ছিল না তটিনীর। ডাক্তার আসতে এখনো ১ ঘন্টা দেরী। বাবা- মা হাঁ করে চেয়ে আছে-- কি বলল রিপোর্টে ।
আসুক ডাক্তার -- তখন জানবে।
রিপোর্টটা কেড়ে নিয়ে দেখলেন বীণা মল্লিক। ৪০ বছর হাসপাতালে চাকরি করেছেন-- মেডিক্যাল টার্ম বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।

তটিনী কিচ্ছু বুঝতে পারছিল না--আসলে চাইছিল না। এরকম হয় নাকি--- আর এক মাসের মধ্যে থিসিস জমা পড়বে-- চার মাস পরে ড্যাং ড্যাং করে দিল্লিবাসী হবার কথা।

লাস্ট ইয়ার ফেব্র ুয়ারী তে আলাপ--- জুলাই তে দুবাড়ীতে কথাবার্তা , পুজোর সময় ডেট ফিক্সড, বাড়ী ভাড়া সব ফাইনাল। এখন আবার এসব হয় নাকি--- বস্তা পচা ইমোশনাল সিনেমার পর্দায় ছাড়া। বায়োপ্সির সময় ডাক্তারের উৎকন্ঠা-ভরা ব্যবহার দ্যাখার পর থেকে এই সিনেমার প্লট নিয়ে বহু আলোচনা হয়ে গেছে দুজনের মধ্যে।

ডাক্তার এলেন।  রিপোর্ট কনফার্ম হল।
গাদা গাদা ফোন- বাড়ীতে, ল্যাবে। নতুন হাসপাতালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দেওয়া--- আর অনেক কিছু।

তটিনীর ভয় করছিল না। তটিনীর জাস্ট বিশ্বাস হচ্ছিল না।
বাড়ী ভরতি লোক। ফোনের পর ফোন-- বন্ধ ু দের, ল্যাবের। বাকিদের খুব ভয় করছিল। তটিনীর সামনে যদি ও সবাই খুব সাহসী ছিল। তবে বীণা দেবী সাহসী ছিলেন না। এমনিতেই তিনি সদা  উদগ্রীব একমাত্র মেয়েকে নিয়ে--- মেয়ে খেলোনা, ঠিক সময়ে ঘুমোলো না, পেপার ছাপাতে পারল না- সব কিছু নিয়েই তিনি উদগ্রীব। তাই তিনি কেঁদেছেন-- পরের দুমাস ধরে, নিজের কপালকে আর ঠাকুরকে দোষারোপ করেছেন।

এসব চলতে থাকছিল। তাই  নিয়ে আজকের গল্প নয়।
আজকের গল্প তটিনীর রেসোলিউশন নিয়ে-----নিজের কাছে  প্রমিস করা আর ভাঙ্গার গল্প।

তটিনী নতুন হাসপাতালে গেল। অসুখ হয়েছে কিনা এই অ্যান্টিসিপেসশনটা কেটে গেছে। শান্তি হয়েছে --- অদ্ভুত একটা অবিশ্বাস্য শান্তি--- অশান্ত এক ঝড়ের আগের শান্তি।

সেখানে ভাঙল প্রথম রেসোলিউশন--- " আই নো ইয়্যু হ্যভ বীন ভেরী স্ট্রং", ডাক্তারের কথায় কেঁদে ফেলল তটিনী-- পরের মুহূর্তে সামলে নিল যদিও নিজেকে।

পরের সপ্তাহ গেল ঝড়ের মতন। গাদা গাদা টেস্ট। অসুখ কদ্দুর ছড়িয়েছে, কত তাড়াতাড়ি দৌড়াচ্ছে  সব দেখতে হবে।

প্রফেসার বাবু চলে এলেন। রিপোর্ট এল---ভাল রিপোর্ট। লোকালাইজড। সেরে যাবে--- শুধু চুস করতে হবে এক্ষুনী--- কয়েকটা ভবিষ্যতের স্বপ্ন, যেটা তটিনী মাঝে মাঝে দেখছিল আর সুস্থতার মধ্যে। অপশন ছিল কয়েকটা--- না থাকার মতই। তটিনী ইমিডিয়েটলি কেমোথেরাপীতে ঢুকলো।

ভয় পাবো না--- এই  রেসোলিউশনটা ভেঙ্গে গেল দুই নং কেমোথেরাপীর পর। চেপে রাখা ডিপ্রেশনটা আকার নিতে শুরু করল।

দিনের পর দিন একা বেরোতে না পারার কষ্ট--- ল্যাব না যাবার ডিপ্রেশন। সবাই আছে সারাক্ষণ ঘিরে, একটা আর্জেন্ট ফোনে দৌড়ে আসছে সব কাজ ফেলে, যারা এতো দূরে আছে যে চাইলেও আসতে পারছে না, সর্বক্ষণ ফোন করছে-- খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে-- রোজ আপডেট যাচ্ছে মেইলে -- তাও কোথায় যেন একলা হয়ে যাচ্ছে তটিনী। সেই একলা হবার ভয় গিলে নিচ্ছে তটিনীকে মাঝে মাঝে-- আবার নো ফেস এর মতন বের করে দিচ্ছে সেন এর রিকোয়েস্টে (Ref: Spirited Away    http://www.imdb.com/title/tt0245429/ )।

ভয় কি একটা !! ভোরবেলা ওঠার ভয়, সারাদিন ওয়েট করার ভয়, ব্লাড রিপোর্টের ভয়, অল মোস্ট শুকিয়ে যাওয়া শিরাতে সূচ ফোটানোর ভয়, চ্যানেলে ব্যাক ফ্লো হবার ভয়।

হাসপাতালে অসংখ্য রুগী--- এদের সবার সেরে যাবে তো--- এই প্রশ্নের উত্তরের ভয়। ডে কেয়ারে দেড় বছরের বাচ্চার মায়ের সঙ্গে আলাপ হবার ভয়। আসমানী, বয়স সাত, বাংলাদেশে বাড়ী, তিনটে কেমো নিয়েছে, আরো ১২ টা বাকি---- হীম হয়ে যায় তটিনীর বুক। এত সহজে চোখে জল আসে কি করে মানুষের !!

আর আছে সব চেয়ে বড় একটা ভয় ---যেটা নিয়ে তটিনী কথা বলেনা, সামনে কাউকে বলতে দেয় না। সেই ভয়টাই সব চেয়ে নাছোড়বান্দা--- ঠিক তক্কে তক্কে থাকে-- কেমোর পর যখন ডিফেন্স কম-- হু হু করে মরতে থাকে ব্লাড সেল---ঝিম ঝিমে মাথা---তটিনী যখন থাকে না ঠিক নিজের মধ্যে তখন লাফিয়ে পড়ে ওর উপরে--- চান ঘরের দেওয়ালে ওত পেতে থাকে--- একা তটিনীর জন্য।

তবে একটা রেসোলিউশন  এখনো ভাঙেনি----
দোষারোপ করেনি তটিনী নিজেকে--- আনলাকি ও ভাবেনি নিজেকে।
হোয়াই মি!!! এই প্রশ্নটা তোমাকে দুর্বল করে দেবে---  ওয়েস্টার্ন ব্লটের প্রোটোকল থেকে রেজাল্ট অ্যানালিসিস যিনি হাতে ধরে শিখিয়ে ছিলেন-- তাঁর এই সাবধান বাণীটা ছিল তটিনীর তৃতীয় রেসোলিউশন।
এইটা তটিনী ভাঙেনি এখনো।

অজস্ব্র সাহায্য হাত, অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা--- অসং্খ্য চেনা- অচেনার শুভচিন্তা। তটিনীর পরীক্ষাটা কঠিন, প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষা করে আছে সারপ্রাইজ--তাও তটিনী জিতবে। এতো সহজে হারা যায় নাকি।  এত লোকের সাহায্য আর প্রেয়ার মিথ্যা হয় নাকি!!  এই শেষ রেসোলিউশনটা ও তটিনী ভাঙবেনা।



14 comments:

  1. অসাধারন…এগিয়ে চল !

    ReplyDelete
    Replies
    1. :) ভেবেছিলাম এসব নিয়ে পরে লিখব কিন্ত ু তীর্ণা বলল পরে ভুলে যেতে পারি। তাই শুরু করে দিলাম।

      Delete
    2. Bhalo korechhis! Choto choto bhalolaga gulo guchhiye rakha uchit :)

      Delete
    3. Bhalo korechhis! Choto choto bhalolaga gulo guchhiye rakha uchit :)

      Delete
    4. Mondo laga gulo oo bol 😃😃

      Delete
    5. Mondo laga gulo emniee mone thake...okhane khamokha effort dewar dorkar nei :) :P

      Delete
    6. This comment has been removed by the author.

      Delete
  2. anurag,lara, manisha, yuvi...u r next. so no chap

    ReplyDelete
  3. tui eka nos..resolution to amara roj banachi..r roj vanchi...vangar por vabchi..din chole jache..ekta kaj o..plan mto hoche na..mondo ki chlche to..

    ReplyDelete
  4. jibon bodh hoe tale evabei chole...

    ReplyDelete
  5. change is the only constant , whatever the change is ..... adapt ....

    ReplyDelete