statcounter

Monday, March 15, 2021

ছায়া

ঊষাকালে ঘুম থেকে উঠে বসলেন নিশিকান্ত। এ তাঁর বহুকালের অভ্যাস। ভোরের নিস্তব্ধতা বড্ডো প্রিয় তাঁর। উমাশশী সকালে উঠতে পছন্দ করেন না! তাঁর তীব্র অনিদ্রারোগ, সারারাত এপাশ-ওপাশ করে ভোরের বেলায় ঘুমোন তিনি। তাই ভোরের বেলা খুব সন্তপর্ণে চলাফেরা করেন নিশিকান্ত।  উমাশশীর ঘুমন্ত মুখখানি চেয়ে দেখেন। ভোরের নীলচে  আলো কেটে আস্তে আস্তে হলুদ হচ্ছে আকাশের রঙ.উমাশশীর মুখে এসে পড়ছে সেই আলোে। বড্ড  মায়াভরা, বালিকা সুলভ মুখ। অবিন্যস্ত চুল এসে পড়েছে কপালের ওপরে , চোখের নিচে অনিদ্রার ছায়া। এই মুখের দিকে চেয়ে থাকতে খুব ভালো লাগে নিশিকান্তর। মনে পড়ে পুরোনো সব দিনের কথা। ৫০ বছরের বিবাহিত জীবনে সব সময় সুখের ছিল না, অনটন ছিল, ছিল টানাপোড়েন, মান-অভিমান।  তবে আজকাল আর সেসব কিছুই মনে পড়েনা । শুধু মনে পড়ে  সুখের দিক গুলো। সন্তানের জন্ম, এক সাথে বেড়াতে যাওয়া, সমুদ্র দেখে উমাশশীর সে কি আনন্দ , বালিকার হাসি, ঢেউএর  সাথে খেলা-- এই স্মৃতিগুলো ঘুরে ফিরে আসে।

খুব জোরে শব্দ করে দরজাটা খুলে যায়। সকালের চা নিয়ে ঘরে ঢোকে কানাই। বিরক্ত হয়ে ওঠেন নিশিকান্ত, বিধান তোকে কতবার বলেছি সকালে শব্দ করবি না, উমার ঘুম ভেঙে যাবে, সারারাত পরে এই মাত্র ঘুমিয়েছে। হেসে ফেলে কানাই। কে ঘুমুচ্ছে  জিজ্ঞেস করতে গিয়ে নিজেকে সামলে নেয়  । দুদিন আগে ডাক্তারবাবু এসেছিলেন, বলে গেছেন নিশিকান্তর কোনো কন্ডিশনিংর দরকার নেই। ওনার স্মৃতির অতল থেকে ভেসে আসা অতীত নিয়ে খুশি থাকতে দেওয়া হোক। আস্তে আস্তে দরজা ভেজিয়ে বেরিয়ে যায় কানাই। খুব ধীরে ধীরে চায়ের কাপে চুমুক দেন  নিশিকান্ত, সন্তর্পনে নামিয়ে রাখেন প্লেটের উপরে কোনো শব্দ না করে।  জানলার ওপরে উমাশশীর ছবি হাওয়ায় দোলে। নিশিকান্ত তাকিয়ে দেখেন, পরে বিধান কে জিজ্ঞেস করতে হবে কার ছবি এটা। ঘুমের মধ্যে উমাশশী পাশ ফেরেন, নিশিকান্ত গায়ের চাদরটা  টেনে দেন।

   

No comments:

Post a Comment