statcounter

Monday, May 9, 2016

দুমকা

ঝগড়ুর বাড়ি দুমকায়। গ্রামের নাম ফুলবনী। সেখানে পৌছানো সহজ নয়।

ট্রেন থেকে নেমে, যেতে হয় বাস স্ট্যান্ড।  দিনে মাত্র দুটো বাস । ধুলো উড়িয়ে বাস পৌছায় বাতাসিয়া; সেখান থেকে সাইকেল বা হেঁটে। ফুলবনী পৌছাতে দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা। 

ফুলবনী তে জলের বড় কষ্ট । গরমকাল শুকনো- খটখটে। তখন জল আনতে যেতে হয় তিন মাইল রাস্তা পেরিয়ে, জল আনতে যায় ঝগড়ুর মা আর বোন। বোনের নাম মতিয়া।

আর ঝগড়ু- নানকু যায় ছাগল চরাতে। গ্রাম ছাড়িয়ে পাহাড়, তাতে অনেক গাছ। সারাদিন 
ছাগলরা চরে বেড়ায়, ঝগড়ু- নানকু বসে থাকে গাছের নীচে। ছুরি দিয়ে গাছের ডাল কেটে মতিয়ার জন্য পুতুল বানায় নানকু। পাখি, ছাগল আর মানুষ। তাদের চোখ- মুখ অত পরিষ্কার নয়, তাও মতিয়া খুশি হয়।

ঝগড়ু খালি শুয়ে থাকে। আকাশে মেঘ ভেসে যায়, কখনো ঘোড়ার মতন, কখনো বা পাহাড়ের মতন।
মেঘদের সাথে ঝগড়ুর মনও ভেসে যায়। দুপুরে পোঁটলা খুলে দুজনে রুটি আর আচার খায়। পাহাড়ে ছোট নদী আছে, গরমকালে তাতে খুব কম জল। নদীতে নেবে আজঁলা ভরে জল খায় দুজনে।

মাঝে মাঝে অদ্ভুত লোকরা আসে পাহাড়ে। একবার এল রঙ চঙে জামা পরে দাড়িওলা বুড়ো। বলল খুব খিদে পেয়েছে, ঝগড়ুরা ওকে একটা রুটি  দিল, তাই খেয়েই বুড়ো খুব খুশী। বুড়ো বলল সে নাকি কোন এক অজানা দেশের গল্প। বুড়োর যখন নানকুর মত বয়স, জাহাজে করে গেছিল সেখানে।
দিনের পর দিন জাহাজ চলে, চার দিকে শুধু জল আর মাঝে মাঝে বড়-বড় সমুদ্রের পাখি ঊড়ে আসে।তারপর এল একটা দ্বীপ। সেই দ্বীপে ভরতি গাছ, ছোটো- ছোটো পাখি আর খরগোশ আর পুকুরে চিনির মত মিষ্টি জল। পাখি আর খরগোশ মেরে সবাই খেল, তারপর রাতে এল বৃষ্টি। মনে হহছিল দ্বীপটাই ডুবে যাবে সমুদ্রে। তখন সবাই পড়িমড়ি করে জাহাজে গিয়ে উঠল। 
ঝগড়ু শুনে বলে পরে আবার গেলে না কেন সেখানে। বুড়ো বলল পরে আর দ্বীপটা খুঁজে পাওয়া যায়নি কোনদিন।

বিকেল হলে যখন রোদ কমে আসে, বড়-বড় গাছের ছায়া পরে। তখন আর সেখানে থাকা যায় না।
গ্রামের লোকেরা বলে তখন নাকি অপদেবতা আসে, সে বড় ভয়ঙ্কর। ঝগড়ু- নানকু ও ভয় পায়।

রোদ কমে এলে পাখিরা বাসায় ফেরে, আকাশের রঙ নীল থেকে গোলাপী, গোলাপী থেকে বেগুনী হয়।  ততক্ষণে ঝগড়ুরা পাহাড় থেকে নেমে আসে; দূরে গাছেরা ঘন ঘন হয়ে থাকে। ঝগড়ু- নানকুর খিদে পায়, তাড়াতাড়ি পা চালায়।

বাড়িতে ফিরে ছাগল গুনে তুলে হাত মুখ ধোয় ওরা। ঝগড়ুর বাবা কাঠ কেটে আনে, সেই কাঠের জ্বালে রান্না করে ঝগড়ুর মা। খেয়ে দেয়ে চাটাই পেতে শুয়ে ঘুমোয় সবাই।ঝগড়ু ঘুমোয় না, শুয়ে শুয়ে শোনে বনের শব্দ।গাছের পাতায় হিস হিস,  কারা যেন অনেক দূরে হু হু করে ডাকে।ঝগড়ুর  মনে পরে দাড়িওলা বুড়োর দ্বীপের গল্প। চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে।

এ গল্প আজকের নয়।এ দুমকা আমার আপনার চোখে দেখা নয়; এ হল ঝগড়ুর মনের দুমকা। 






5 comments: