সমুদ্রের ধারে শুয়ে ছিল সে। ভোরের সমুদ্র। চারদিকে ফাঁকা। ভোরের আলো ফোটার পরের আর সূর্য্য ওঠার আগের নরম ধূসর নীলচে আলোয় ভরে আছে চারপাশ। ঢেউ উঠছে, তীরের দিকে আসছে--- ভেঙ্গে পড়ছে তীরে। ঢেউ এর মাথায় সাদা ফেনা। ছড়িয়ে যাচ্ছে জলের মধ্যে। হাওয়া দিচ্ছে খুব জোরে, হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ আর ঢেউ এর শব্দ মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। হটাৎ বৃষ্টি এল খুব জোরে--একদম আচমকা বৃষ্টি। হাওয়া দমক বাড়লো।হাওয়ায় ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে সব কিছু--- তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে --বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি--ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছে তীরে-- সফেন সমুদ্রতীর--- সে শুয়ে আছে তীরে-- কিন্ত ু বৃষ্টির ফোঁটা তার গায়ে পড়ছে না। খুব ইচ্ছে করছে ভিজে যেতে, বৃষ্টির গন্ধ আসছে--- লোনা বাতাসের সঙ্গে মেশা মিষ্টি জলের অদ্ভ ুত একটা অপার্থিব গন্ধ ---- ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে--- সমুদ্র জলে মিশে যাচ্ছে--- সে শুয়ে আছে--- বৃষ্টি কে ডাকছে--- বৃষ্টি আসছে না কাছে---ভিজিয়ে দিচ্ছে না।
ব্যাথাটা আবার শুরু হল। সাত ঘন্টা থাকে ওসুধের এফেক্ট, তারপর ঢেউ এর মতন ফিরে আসে ব্যাথাটা। হাঁটু থেকে কোমর-- স্পাইনাল কর্ড বেয়ে উঠতে থাকে-- মাথায়। উত্তাল ঢেউ ---- বিরামহীন ভাবে তৈরী হচ্ছে---সমুদ্রতীরে ভেঙ্গে পড়ছে তীব্র আক্রোশে। মাথার মধ্যে ভেঙ্গে পড়ছে --- বার বার ফিরে আসছে-- ছড়িয়ে যাচ্ছে রন্ধ্রে- রন্ধ্রে। কিছুক্ষণ পরে আর তরঙ্গটা অনুভূত হয় না, খালি তীরে ভেঙ্গে পড়াটা বুঝতে পারে। জ্বর চলে আসছে-- কুল কুল করে--- যেন পাহাড়ী নদীতে বাণ এল---
কিন্ত ু বৃষ্টি এলনা। বরং আগুন জ্ব্লে উঠল শরীরে ---বেজে উঠল কারখানার ঘন্টি--- নোটিশ এসেছে প্রোডাকশন বাড়াতে হবে অনেক গুণ---সময় নেই হাতে ----- আজ রাতেই নামতে হবে কাজে। চুল্লীতে জ্ব্লে উঠল আগুন---ট্রলীতে যেতে লাগল সব মালপত্র--- সবাই ছুটছে, চেঁচাছে--- ঘরঘর শব্দে মেশিন শুরু করল কাজ। অস্থিমজ্জার মধ্যে দৌড়াচ্ছে মলিকুলগুলো--- তাদের আজকে ওভার টাইম---- বাইরে যুদ্ধ শুরু হয়েছে--- অনেক অস্ত্র দরকার--- হেরে যাবার হুকুম নেই যতই কষ্ট হোক না কেন। ওর্করা মার্চ করছে ---- তাদের পায়ে শব্দে কাঁপছে মাটি---কিন্ত ু জীয়ন অঙ্গুরীয় এখনো সুরক্ষিত আছে---- আগুন জ্ব্লছে---অস্ত্র তৈরী হচ্ছে---কোনো ভয় নেই--- যুদ্ধের শেষে বৃষ্টি নামবে--- শুধু সময়ের অপেক্ষা।
জ্বর আসছে যে--- মাথায় হাত দিয়ে কে বলল।
ওষুধ খেয়ে নে।
আরেকটু দেখি, যদি নিজে থেকে কমে।
তাহলে রেস্ট কর--ঘুমিয়ে নে।
চোখ বুজলে যদি ঘুম আসে---- ঘুমিয়ে নিলে যদি বৃষ্টি নামে।
সমুদ্রতীরে শুয়ে আছে সে, নীলচে সমুদ্রতীর। একটা বড় পোকার মতন লাগছে নিজেকে। চারপায়ে পড়ে আছে, এলোমেলো ভাবে ---মাথাটা বড়--হাত পা সরু-সরু, ভাঙ্গা ভাঙ্গা, অশক্ত। মাথাটা কে বয়ে নেবার জোর নেই। মাটিটা নিচের দিকে টানছে---চোখ বুজলে তলিয়ে যাচ্ছে নীচের দিকে--- আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে মাটি---চোরাবালির মত ----ডুবে যাচ্ছে অতলে।
ঘুমুতে পারব না---- নিজেকে অন্যরকম লাগছে।
গ্রেগর সামসার সমস্যাটা এত দিনে বুঝতে পারছিল। বন্ধ চোখেই কীট হয়ে যাওয়াটা এত কঠিন, খোলা চোখে কিরকম ভাবতে পারছিল না। আজকাল ভাবনাগুলো বড্ড আবছা মত--- ছায়া ছায়া- আলো আঁধারী।
ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছে-- বিরামহীন---থার্মোমিটারের পারা চড়ছে -----ওষুধ খেয়ে নাও সোনা --- অনেকক্ষণ হল--- নিজে থেকে কমবে না আর।
বৃষ্টি এসে গেছে। ঝমঝম করে পড়ছে। ভিজে যাচ্ছে সে। বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি, আকাশ কালো করে নেমেছে---- আগুন নেভানো বড় ভালো বৃষ্টি।
হাবিজাবি কোথায়, চমৎকার তো, প্রিয়াঙ্কা।
ReplyDeleteতোমার ভালো লেগেছে... :)
Deleteথ্যাঙ্ক ু থ্যাঙ্ক ু।
Tui tor kosto gulo niye erokom bhabe bhabte parchis, erokom bhabe likhte parchis .. eta itself khub sahosh r sahishnutar porichoy ..
ReplyDeleteMay these words give you the comfort that medicine can't ...