statcounter

Sunday, May 8, 2016

ভুলু

রুমুর খুব মন খারাপ। ভুলু আজকে আবার বাড়ি আসেনি। আগের বছরে দশ দিনের জন্য গায়েব থাকার পর অনেক দিন দুষ্টমি বন্ধ ছিল। সেবারে তো বাড়ি ফেরা সহজ ছিলনা, কিভাবে ফিরেছিল তা রুমু আর বোগি ছাড়া জানে খুব কমজন। বড়রা তো জানেই না, আর জানলে ও বিশ্বাস করবে না।

এর উপরে বোগি গেছে স্কুল থেকে বেড়াতে, দুদিন পরে আসবে। এখন ভুলু কে খুঁজতে যাবার কেও নেই। সারাবিকেল গুনমণির সামনে বসে থেকে ভুলুর অপেক্ষা করেছে রুমু।

 এখন অনেক রাতও হয়েছে, দিদিমা গজগজ করছে---রুমু ভাল করে রাতের খাবার খায়নি বলে।
বারান্দার রেলিং এর পাশে ভুলুর থালা, তাতে রাতের খাবার রাখা। আজ মনে হয় ভুলুর রাত হবে ফিরতে।

সকাল হল।গুনমণির গাছে অনেক কটা নতুন ফুল ধরেছে। আগের সপ্তাহে যেদিন খুব ঝড়-বৃষ্টি
হল তার পর গুনমণির আবার একটা নতুন ছোট্ট চারা বেড়িয়েছিল, সেটা একটু বড় হয়েছে, তাতেও কুঁড়ি ধরেছে। দেওয়াল এর পাশে আমলকীর গাছে ফুল হয়েছে। এসব দেখতে দেখতে স্কুল যাবার সময় হয়ে গেল। সারা রাস্তা রুমু দেখতে দেখতে গেল ভুলু কোথায় আছে কিনা, নেই। দাদুকে একটু বলতে গেছিল মেলার মাঠে খুঁজতে নিয়ে যেতে, দাদু রাজী হল না। রুমুর সারারাত পা ব্যথা করছিল, দিদিমা অঘোরে ঘুমোচ্ছিল। ঝগড়ু ও নেই, নানকুর বিয়েতে দেশে গেছে, রুমুর কান্না পাচ্ছিল।

পরদিন বোগি ফিরে এল excursion থেকে, সারাদিন পাহাড়ের গল্প শুনল বাড়ির সবাই। পোস্টম্যান এসেছিল বাবা-মার চিঠি নিয়ে, সেটা পড়া হল।বাবা কিছুদিন পর কলকাতায় বদলী হয়ে আসবে, দাদু দিদিমা খুব খুশি, শুধু রুমু খুশি নয়।ভুলু আজকেও ফেরেনি, বিকেলে বোগি গিয়ে মেলার মাঠে আর স্টেশনের দিকে দেখে এসেছে।কোথাও ভুলুর টিকিটাও নেই। দাদুর সঙ্গে ডাক্তারবাবুর বাড়িতে গেছিল রুমু, ওদের মিনিকুকুর রুমু কে দেখে গা চেটে একাকার করেছে। ডাক্তারবাবু ভুলু হারিয়ে গেছে শুনে বলেছে মিনির ছানা হলে এবার ওদেরকে দেবে একটা। বোগি শুনে বলেছে এবার তাই ভুলু আসলে সত্যি তাড়িয়ে দেবে। বাড়িতে সবাই নিশ্চিন্ত আছে, যেন কিছু হয়নি, শুধু রাতে ভুলুর থালাতে রুটি গায়ে পিপঁড়ে দেখে রুমুর গলাটা ব্যাথা করে।

স্কুলের সামনে একটা লোক আচার বিক্রি করে, আজকে তার পাশে চট পেতে একজন ম্যাজিক দেখাচ্ছিল,সাথে একটা ছোট ছেলে, খয়েরী রঙ এর চোখের মণি আর ছুঁঁচলো কান। ম্যাজিক দেখতে খুব ভিড় হয়েছিল, ছেলেটা এক টাকা করে নিচ্ছিল সবার কাছ থেকে। রুমু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছেলেটাকে দেখল। রুমুর খুব ভয় করছিল। ফেরার সময় নাথুরামের সঙ্গে দেখা হল। নাথুরামের কোলে ছোট মেয়ে আর সঙ্গে ফুল ছাপা শাড়ী পড়া নাথুরামের বৌ। রুমু হাত বাড়াতে বাচ্চাটা খিলখিল করে হেসে চলে এল ওর কোলে।ওরা রুমু কে বাড়ি দিয়ে টাউনে  গেল, মেয়ের জন্মদিনের জামা কিনতে।

আজকে রাতে ভুলুর থালা তুলে রাখল দিদিমা। সাইকেল থেকে পড়ে বোগির পা কেটেছে, রুমু তাতে মলম লাগিয়ে দিল।ম্যাজিকওলার সাথে ছোট ছেলের কথা শুনে বোগি অনেকক্ষণ চুপ করে রইল, পরে অঙ্ক করতে বসল, ওর সামনে পরীক্ষা। রাতের বেলা খাবার ঘরে একটা মাকড়ষা এসেছিল, তার আটটা ঠ্যাং, রুমু কাছে যেতেই সেটা উর্ধশ্বাসে পালাল।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে ঝগড়ু ফিরে এসেছে, দিদিমার সঙ্গে রান্নাঘরে বসে বাড়ির গল্প করছে।
পরে বোগির কাছে এসে চুপিচুপি এক কৌটো কি দিয়ে গেল, রুমু খুলে দেখে কাঁচের গুড়ো।বোগি বলল জাদুকরী মান্জা নাকি। দেশ থেকে ফিরে ঝগড়ু খুব খুশী, ভুলু কে খুঁজতে যাবে বলেছে। দুপুরে খুব বৃষ্টি,  স্কুল থেকে আসার সময় রুমু ভিজে কাক হয়ে গেছে, জ্বর আসবে মনে হচ্ছে। ঝগড়ু গেছিল 
নাথুরামের সঙ্গে স্টেশন পেড়িয়ে, কিন্ত ু ভুলু কে দেখেনি।

রাতে রুমুর জ্বর এসে গেল, তাই দিদিমা খাইয়ে দিল রুমুকে। 

তিন দিন পর জ্বর সেরে গেছে। ছোট গুনমণি অনেক বড়ও হয়ে গেছে এই কদিনে, ফুল ফুটেছে তাতে বেগুনী রঙের অনেকগুলো। বিকেল বেলা বোগি সাইকেল নিয়ে গেল ঝগড়ুর সঙ্গে, রুমু যায়নি। রুমু দাদুর সঙ্গে মিনিকুকুরের ছানা দেখাতে যাবে।

সন্ধ্যে সাতটা।  বোগি আর ঝগড়ু এখন ফেরেনি, রুমু ডাক্তারবাবুর বাড়ি থেকে ফিরে দেখে দিদিমা রাগ করছে। একটু পরে সাইকেলের শব্দ আর সঙ্গে খুব ঘেউঘেউ। রুমু বেরিয়ে দেখে বোগির কোলে ভুলু।খোয়াই যাওয়ার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল।বিকেলে বোগিরা গিয়ে দেখতে পেয়েছে।রাস্তা ভুলে আর বাড়ি ফিরতে পারছিল না মনে হয়। ওদের দেখে দৌড়ে-দৌড়ে এসেছে। রোগা হয়ে গেছে এই কদিনে, লোম উঠে গেছে। রুমুকে দেখে কোল থেকে নেমে মুখ চেটে একাকার করল। রাতের বেলা রুমু ভুলু কে নিয়ে বিছানায় শুল, অনেক দিন পরে নিশ্চিন্তে ঘুম।

রেফারেন্স   http://www.goodreads.com/book/show/18517295

প্রাসঙ্গিক গান হতে পারে এটা https://youtu.be/RzuXZfKg2YM?list=RDRzuXZfKg2YM


5 comments: