statcounter

Tuesday, February 4, 2020

হিসাব

এটা কোনো গল্প নয়, আবার এটা একদম ই সত্যি নয়।
খুব ভোরের দিকে ঘুমটা ভেংগে গেল সেই একই স্বপ্ন দেখে। একটা বড়ো সাদা স্কুলবাড়ি, তার পাশে একটা বড়ো পুকুর। স্কুলে কেও নেই , ক্লাসরুম ফাঁকা, বোর্ডে একটা আঁচড় নেই। তার মধ্যে কি যেন খুঁজে চলেছে একটা ছোটো মেয়ে। দূরে একটা আবছা মতো পাখি ডেকে উঠলো। আর হটাৎ করে ঠিক কানের পাশে একটা বেড়ালর তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো । ঘুম ভেংগে বসে ভাবছি কোনটা সত্যিই আর কোনটা স্বপ্ন, গুলিয়ে যাচ্ছে।
সত্যিই পাশের গলি তে বেড়াল দুটো হইচই বাধিয়েছে । কিসের ওদের এত ফুর্তি কে জানে। 
আমার জানলা থেকে একটা নীল রঙের বাড়ি দেখা যায়। সবাই বলে ওটা রঙের কারখানা। সকাল সন্ধ্যা কারখানাতে লোকেরা আসে আর বাড়ি ফেরে, ওদের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ, গায়ে রঙের গন্ধ । এগুলো আমি কিছু দেখিনি, মনে মনে ভেবেছি মাত্র।
আরো একটু দূরে হেঁটে গেলে কাশফুলের জঙ্গল সোজা নেবে গেছে পুকুরে। ওখানে কেও যায় না সাপের ভয়ে।
তার চেয়ে চলে যাওয়া যায় ঠিক উল্টো দিকের রাস্তা ধরে সোজা, একটা ভাঙ্গা ডিসপেনসারির পাশ দিয়ে, অনেক দূর অব্দি খোলা মাঠ আর ইউক্যালিপটাসের পাশ কাটিয়ে । আরো আছে নাম না জানা বড়ো বড়ো গাছ, তাতে শীতের  আগে সব পাতা ঝড়ে ভরে গেছিলো ছোপছোপ হালকা গোলাপি ফুলে । ইউক্যালিপটাসের পেছনে সূর্য ডোবে ঠিক বিকেল ৬ টায়। তার আগে আকাশের রং বদলায়, নীল থেকে গোলাপি থেকে বেগুনী । বদলায় হাওয়ার চলাচল।

 সূর্য ডোবার আগে আরেকটু এগুলে দেখতে পাবে একটা ভাঙ্গা বাড়ি, তার চারপাশে কিছু নেই, কিছু পুরনো রেলিং ছাড়া।
দিন শেষ হয়। পাখিরা দল বেঁধে কোথায় যেন যায়, বেড়াল দুটো সারাদিন রোদে বসে আরাম করেছে  এখনো তাই করে।
একটা ছোটো মেয়ে একটা ফাঁকা সাদা স্কুল বাড়িতে কি যেন খুঁজে বেড়ায়। সময়ের জমা হিসাব,  তা কি আর অত সহজে মেলানো যায়।

Friday, January 31, 2020

রোজকার

কিছুই থাকে না পড়ে,
এই ধুলো মাটি, সকালের রোদ দুপুরের তাপ 
মিশে যায় সন্ধ্যার রঙে।
কিছুই থাকে না শেষে ,সব পরিযায়ী পাখিরা ঘরে ফেরে,
ফাঁকা করে সব নদী জল।
সকালে শালিক নেচে নেচে গেছিলো বারান্দায়, বিকেলবেলা আর তাকে দেখিনা ।
তাও ভালোবাসি, যত্ন করে তুলে রাখি মনের আলমারিতে , নরম কাপড়ে মোড়ানো ভঙ্গুর স্মৃতিরা,
মাঝে মাঝে ধুলো ঝেড়ে দেখি। 
কিছুই থাকে না আজীবন ,তাই রোজ রোজ বাঁচি , রোজ ভালোবাসি নতুন নতুন করে।

Sunday, January 26, 2020

সাময়িক

হিসাব থাকে না ঘণ্টা মিনিটের।
বড্ড লম্বা এক একটা দিন,
কখনো খুব ক্লান্ত, কখনো বড় উজ্জ্বল।
হিসাব থাকে না সপ্তাহ মাসের,
এই হাতে জড়িয়ে ধরি,আঙ্গুলে লেপ্টে থাকে আর পর মুহূর্তে ঝুরঝুর করে যায় হালকা মাটির মতো।
শুধু মাটির গন্ধ লেগে থাকে হাতে, নাকি মনে! কে বা তাই জানে।

Tuesday, October 22, 2019

Day break

The sound of  the wall clock ticking
The buzz of the bird nested in the veranda
Whistle in the kitchen
The bell in the elevator
The fan circles
Window rattle
This is how finely crafted my solitude is
Am I not supposed to savour it .

Sunday, July 28, 2019

We will talk about it




We should talk about the darkness in us.
When we can not get up from bed;
when the light fails to touch us
when we can not even breath, let alone laugh and love.
We should talk about it; because if you don't; the darkness will consume you from within.

Shh!! don't make yourself so vulnerable, they said.
If you close your eyes and don't think; your sorrow will vanish.
If you close your mouth and let the bad day passes by, it will be away; and you will be the same.

They said. Because they know nothing about it or just choose to stay away.

They have never walked my path, never faced the fear as I did.
Never faced the weightiness of expectation tearing you down.

So, I will talk about it. Today.
In my day of happiness, laughter and sunshine.

To fight the demon within me.

They said words cant kill but it can definitely heal. So lets speak out.

Because somedays are  just like sunshine..happy and bright.
Few are like never ending tunnels.
It's fine though, as long as you can remember the sunshine
waiting for you in the end of the tunnels.




Thursday, May 23, 2019

The flight

The door was ajar. The last person left must have forgotten to close it properly. Or did not bother to close it. There was nothing inside the room. Only some old piles of newspapers. It smelt stale. There was an old curtain hanging on one window. The curtain was old too, discolored and torn. There was also an old bottle with a money plant. The money plant was the only living thing in the room. Bright green leaves with a tinge of yellow. It moved in the warm breeze, greeting the stranger.

The utensils in the kitchen were once washed nicely but they were dusty now. There was a bedroom inside. The once white walls were now covered with paintings of a young untrained hand. House, tree, animals were drawn using pastel colors. There were more piles of paper, a drawing book, and a broken toy. The drawing book had the name of the owner. I tried to imagine her face: small, roundish with big bright eyes. Big frightened eyes, unable to make out why they had to leave. Unable to understand why mother cried when the truck started, and father's face darkened. They had to leave in a hurry. They were told that this house, this place was not safe anymore. The rebellion had been ended and the others were coming to take over.  People with big boots, olive green shirts were coming to take over whatever was left of the old, weary, hungry people. So they fled.

The war had ended. Peace reigned. Only a small girl with her big bright eyes could not understand why she could not take her drawing book with her to the place she was going to. There would be no school, nobody told her that. Probably no walls for her to paint on. Nobody told her anything.
Because they knew nothing.







Thursday, July 26, 2018

Rain

It rained all night and is still drizzling. Outside of my window , a pigeon rests, drenched and tired. They generally choose the verandah to sleep, and some of them specially prefer to perch on the dish antenna, which we call the ‘hot seat’. The antenna is inclined at an angle of 45 degrees which makes perching on it a perilous balancing act: probably that is what makes it thrilling to the birds.

My little verandah garden looks very green and happy. The morning glory is in full bloom, and their bright yellow glow drenches one in their splendor, making one feel alive. All I want to do is to relax on the bed and look outside at the spotlessly washed roads and lush green trees waving in the moist air. I watch the rain coming to us from a distance ; first the sound ,then the drops and then everything blanked in a sheet of white haze. But I have a lab to go to.

The roads are waterlogged. In Kolkata, this amount of rain is nothing . But this is a draught state.  

The paddy fields are looking vibrant. The clouds can magically transform the mundane village alleys to a strange and beautiful place. The university campus is completely transformed as well. A sea of green as far as your eyes can see, this is what the campus is offering today. And there are white ducks, flying over the water body with all their grace. The frangipani are in full bloom and have made a carpet of red and white flowers. So have the long stretched bushes of bougainvillea. The rain has cleansed everything, and made it new and fresh.  It is just an allegory to our life. 

All I want to experience is seeing the day pass by slowly and silently, and make an everlasting memory of it. A memory of  happiness and serenity, a memory which will insinuate that we can always wash away what is old and gloomy and start afresh. This is what life is all about.

Wednesday, June 20, 2018

ডিপ্রেশনের ডাইরি

আজকে আবার এসেছিল সে। আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, হাত বোলায় আমার ঘুমন্ত চোখে,কপাল থেকে চোখ হয়ে নাকের পাশ দিয়ে নেবে যায় তার আঙ্গুল; স্পর্শ করে আমার ঠোট। মাথার চুলে  ইলিবিলি কাটে, কানের কাছে মুখ নিয়ে আসে ; হিস হিস করে বলে ওঠে সাপের মন্ত্র।
আমার ঘুম ভাঙ্গে অনেক পরে, ততক্ষণে চলে গেছে সে। রেখে গেছে তার স্পর্শ; চারপাশে থেমে গেছে সবকিছু ; আছে শুধু ঝড়ের আগের স্তব্ধতা। আর এক অবোধ্য শূণ্যতা; যা ভরাট করতে কেটে যায় সমস্ত দিন।

এক মাস পরে ।।

আমার খুব ভয় করছে। কেন করছে জানি না। জাস্ট করছে।
সবাই বলে ভাবিস না, ভয় ভাবিস না, ওরা তো জানে না আর মানতে ও চায় না যে আমি কিছু ভাবছি না। এখন এই মুহূর্তে আমার মনের ভিতরটা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার আর স্তব্ধ। যেন একটা গভীর গর্ত এর মধ্যে পড়ে গেছি আমি। উপরে অনেক  শব্দ , আলো, কিছুই স্পর্শ করতে পারছেনা আমাকে। খুব কাছের এসে গেলেও না। আমি আছি; কিন্তু থেকেও নেই। আমার আর সামনের ঘটমান জীবনের মাঝখানে একটা কাঁচের দেওয়াল। সব শক্তি দিয়ে ভাঙতে পারছি না সেই দেওয়ালটা।  মনে হচ্ছে আমি চেষ্টা করছি না, কিন্তু আমি আসলে পারছি না; অতো জোর নেই আমার । এখন আমার অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি জানি দেওয়ালটা নিজে নিজে সরে যাবে;  আমি বাইরে বেরতে পারব। কিন্তু দেওয়ালটা আবার আসবে। আমাকে নিয়ে যাবে একটা অন্ধকূপের মধ্যে, যেখানে শুধু  কষ্ট আছে; পাহাড় প্রমাণ।


Monday, November 27, 2017

শীতকাল


কলকাতায় নাকি কালকে ১৫ ডিগ্রি ছিল ; শীতকাল এসে গেল।

শীতকাল মানে আলমারি থেকে বের হওয়া উলের সোয়েটার আর গরম মোজা; বাবার মাফলার আর মায়ের শাল। ট্রাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসা রোদে দেওয়া লাল মলাটের লেপ; কমলালেবু আর নতুন গুড়ের পিঠে; বড়দিনের কেক। শীতকাল মানে দুপুর বেলা খাবার পর ছাদে বসে রোদ পোহানো; পর পর মেলার  কাউন্ট ডাউন; পিকনিকের প্রস্তুতি। সকালবেলা কাঁপতে কাঁপতে লেপ ছেড়ে ওঠা; আবছা কুয়াশার মধ্যে চায়ের দোকানের ধোঁয়া মিলিয়ে যেতে দেখা। সন্ধ্যেবেলা হুডির ওপরে চাদর জড়িয়ে ল্যাব থেকে বেরনো; খালের ধারে দাঁড়িয়ে চা খাওয়া; খবরে দমদমে আজকে ১০ ডিগ্রি শুনে "ওরে বাবা তাহলে এখানে ত ৭" বলে একটা এক্সট্রা চাদর জড়িয়ে নেওয়া।

এটাই আমাদের শীতকাল; দিল্লীর স্মগ বা নিউ ইয়ার্ক; সুইডেনের বরফে ঢাকা চারপাশ ; প্যাঁচ কেটে  যাওয়া কল থেকে টপটপ করে পড়া অবিশ্রাম জলের ফোঁটাতে গজানো স্যাঁতস্যাঁতে শ্যাওলার মত গায়ে লেপ্টে থাকা ঠান্ডা আমাদের নয়। আমাদের আসল শীতকাল আসে এখানে; ময়দানের মাঠে রঙীন বেলুনের উড়ানে; পার্ক স্ট্রীটের রাস্তায়; চিড়িয়াখানার ভীড়ে; শীতকাল আসে সকালের কুয়াশা কাটিয়ে ঝকমকে রোদের হাত ধরে; সন্ধ্যের হলুদ আলোর মায়াবী বিষণ্ণতায়; রাতের নিঝুমতায়;  ফোনে মায়ের কথায়। শীতকাল আসে কোলকাতায় আর আমরা যারা পড়ে আছি বেশ কিছুটা দূরে ; পঁচিশ-ত্রিশ বছরের মায়া কাটিয়ে উঠছি প্রতিনিয়ত; শুধু নতুন করে পুরোনো মায়াতে জড়াবো বলে; লেপের গরম ওমের  ভালবাসা নিয়ে শীতকাল আসে আমাদের বুকের মধ্যে।





  .



Saturday, August 19, 2017

মধুচন্দ্রিমা- পর্ব ২-কাইস মনাসট্রি-জনা ফলস- রোটাং পাস -নগর

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হল বারান্দাতে বেরিয়ে বাইরের পাহাড়গুলো দেখা। রোজ তাদের রূপ বদলায়; একই দৃশ্য তাও যেন নতুনের মতো লাগে। সারারাত বৃষ্টি হয়ে সকালে আকাশ পরিস্কার হয়েছে; সূর্যের আলো পড়েছে পাহাড়চূড়ায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তেজ পাল্টায় , আস্তে আস্তে মেঘ এসে জমা হয় পাহাড়ের মাথায়, নামতে থাকে নীচের দিকে। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় চারপাশ; তাতে খুব ভীড়ের মধ্যেও একা লাগে নিজেকে।

আজকে আমাদের যাবার কথা কাইস মনাসট্রি আর জনা ফলস দেখতে। নগর থেকে কুলুর দিকে ১২ কি মি দূরে ছোট্ট কাইস মনাসট্রি। সামনে সবুজে ঘেরা পাহাড়ের সারি দিগন্ত ছুয়ে আছে।লামা কোয়াটারসের পাশ দিয়ে; বাগান পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে উপাসনা গৃহ। বিশাল কাঠের দরজা আর লাল পরদা দেওয়া জানলাওলা ঘরে হাজার রকম তিব্বতী দেবতা আর বুদ্ধের অবতারের ছবি এবং মূর্তির সমারোহ। তার মাঝে স্মিত মুখে তথাগত বসে আছেন। সামনে দলাই লামার হাসি মুখ। আমরা এসেছি পুজোর সময় পেরিয়ে, তাই এখন ফাঁকা। বেরনোর সময় বোঝা গেল এটা আসলে লাঞ্চ টাইম-- কিচেনের সামনে সবাই ভীড় করে আছে; হাসি হাসি মুখে ম্যাগি ভরতি বাটি নিয়ে ফেরত যাচ্ছে বাচ্চা লামারা। দেখা হল নানা সাইজের পোষ্যদের সঙ্গে; তারা ল্যাজ নেড়ে নেড়ে চলেছে লামার পেছন পেছন; অথবা শুয়ে আরাম করছে।





এবার যাত্রা শুরু জনা ফলসের দিকে। কাইস থেকে নগর পার হয়ে আরো ওপরের দিকে জনা ফলস। লোকালয় পার হয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গাড়ী চলল। জায়গায় জায়গায় রাস্তা ভাঙ্গা, ভিজে মাটি; গাছের পাতায় ঢাকা। গাছেরা একে অন্যের গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঝুপ্সি হয়ে আছে মাথার ওপরে। বৃষ্টি পড়ছে ঝিমঝিমিয়ে; গাছের মাথার ওপরে জমে আছে তুলো তুলো মেঘ; নিজের ইচ্ছে মতো ভেসে যাচ্ছে এদিকে থেকে ওদিকে; এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। এরকম ভাবে ১ ঘন্টা মতো চলার পর আমরা পৌছালাম জনা ফলসে। রাস্তার দুদিক দিয়ে ধাপে ধাপে নেমে গেছে সরু ঝর্ণা নেমেছে; স্রু কিন্তু বর্ষায় বেগবান। 




জনা ফলসের আকর্ষণ দুরকম ; অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের জন্য ভ্যালী ক্রসিং আর সবার জন্য হিমাচলী খাবার। চার পাঁচটা ছোট ছোট ঝুপড়ি; তাতে কাঠের জ্বালে রান্না হচ্ছে। আমরা দৌড়ে গিয়ে সব চেয়ে শেষের খাবারের দোকানেটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। রাস্তা থেকে কিছুটা উঠে গিয়ে একদম  ঝর্ণার সামনে একটা বড় পাথরের উপরে খেতে বসার জায়গা। এখানে না বসতে চাইলে একটু নীচে নেমে আরো একটা পাথরের চাতাল; তার মধ্যে দিয়ে জল যাচ্ছে--- সেখানেও চেয়ার-টেবিল পাতা। বৃষ্টি না থাকলে ওখানে বসে থাকা যায় জলে পা ডুবিয়ে। আমরা ওপরের বসলাম;  হিমাচলী থালিতে এল;   লাল চালের ভাত; মকাইএর রুটি, সিদ্ধু (এপ্রিকটের পুর দেওয়া ঝাল পিঠের মতো) ঘি, বেসনের কাঢ়ী, রাজমার ডাল,  লিংরি নামের ফিড্লহেড ফার্নের তরকারি;  ঝাল আচার আর গুড়। বৃষ্টিতে লোকের ভীড় নেই বললেই চলে; জল পড়ার  শব্দ আর পাখির ডাক ছাড়া আশেপাশে কোন শব্দ নেই ; সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল সময় যেন থেমে গেছে ।ওখানে ঘন্টা দুয়েক কাটিয়ে আমরা ফিরে আসলাম হোটেলে।




পরের দিন যাবার কথা 50 কি মি দূরে রোটাং পাস দেখতে (উচ্চতা  3978 মিটার; মানালীর প্রায় দ্বিগুণ)। মানালী থেকে সব্বাই যাচ্ছে রোটাং এ আর তাই নাকি সাঙ্ঘাতিক জ্যাম রাস্তাতে। জ্যামের ভয়ে আলো ফোটার আগেই বেরনো হল হোটেল থেকে। গাড়ী চলেছে ঘুমন্ত শহরের মধ্যে দিয়ে। আকাশের রং আস্তে গাঢ় নীল থেকে হাল্কা নীল হল; তাতে ফুটে উঠল লালের ছোঁয়া, ভোর হল। নেহেরু কুন্ড পেরিয়ে; সোলাং ভ্যালীকে বাঁ পাশে রেখে আমরা চললাম। মাঝে গুলাবাতে চেক পয়েন্টে দাঁড়াতে হল; লম্বা লাইনের পেছনে। রাস্তা দিয়ে নানা সাইজের গাড়ি ছাড়া চলছে হিমাচল ট্যুরিজমের বাস; বাইক যাচ্ছে রোটাং পেড়িয়ে কেলং বা লেহতে। গুলাবার পরে আর কোন স্টপেজ নেই--- হু হু করে পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে গাড়ি উঠছে, পাশে দৃশ্যের পর দৃশ্য পরিবর্তন হচ্ছে। শুরুতে বড় বড় গাছ, সবুজ পাহাড়; তার বুক চিরে তিরতির করে নেমেছে নাম না জানা ঝর্ণা, বয়ে চলেছে গিরিখাতের দিকে। যত ওপরের দিকে উঠছি গাছের সংখ্যা কমে আসছে, পাথরের গায়ে সবুজ কার্পেটের বিছানা; আরো ওপরে একদম ন্যাড়া পাহাড় । সকালে যখন বেড়িয়ে ছিলাম তখন বুঝিনি, গুলাবা পার হয়ে কিছুদুর পরে আমাদের সঙ্গ নিল মেঘ আর বৃষ্টি। চারপাশ ঢেকে গেছে ধোঁয়াধোঁয়া মেঘে; দৃশ্যমানতা একদম কম; তার মধ্যে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ী চালাতে হচ্ছে;আমরা কাঠ হয়ে বসে আছি।  এরকম ভাবে মেঘ জমা আর মেঘ কাটার মধ্যে দিয়ে আমরা পৌছালাম জীরো পয়েন্টে । সেখানে তখন বৃষ্টি নেমেছে; পাঁচ লেয়ার গরম জামা ভেদ করে হিম করে দিচ্ছে হাওয়াতে।   সবাই এর মধ্যেই বরফের ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে; অনেকে এতো ওপরের  দিকে উঠে গেছে যে রাস্তা থেকে দেখাই যাচ্ছে না। ঠান্ডাতে আর হাইট সিকনেসে আমার তখন ছেড়ে দে মা অবস্থা। তাই বিয়াস কুন্ড না দেখেই আমরা নেবে এলাম; রোটাং এ আমাদের কোন ছবি তোলা হল না। ফেরার সময় দেখা পেলাম রোটাং এর বিখ্যাত জ্যামের---পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে  কয়েক কি মি ধরে গাড়ীর লাইন; একচুল করে নড়ছে। আমরা হোটেলে ফিরলাম দুপুর দুটোতে।

                                      






                                   
জীরো পয়েন্ট


ফিরে এসে ট্রাউট ফিশ দিয়ে লাঞ্চ

নগর ক্যাসেলের পাশেই আছে রাগিণী ক্যাফে; তারই অংশ লাভাজা। রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা ওপেন ক্যাফে। হানি-জিঞ্জার-লেমন টী আর এপ্রিকট কেক দিয়ে বিকেলের খাবার হল। একগাদা আদা ভেজান গরম জলের মধ্যে লেমন টী এর ব্যাগ ডুবিয়ে চা তৈরী হয়ে গেলে মেশাতে হবে আপেলের ফুলের মধু। আমার সকাল  সন্ধে চা লাগে--- আমার কাছে তো এই বস্তু অমৃত সমান। আর আমার সঙ্গী যিনি মাসে দুবার চা খান কিনা সন্দেহ সেও খেল--দুবার অর্ডার দিয়ে।
হানি-জিঞ্জার-লেমন টী

রাতের খাবার

অন্যদিনের মতো আজও রাতে ক্যাসেল নিস্তব্ধ। সামনে পাহাড়ে জোনাকীর আলো; চারদিক ভরে আছে শব্দহীন নিশ্চিন্ততায়, দিন আসে--দিন যায়;   কিন্তু এই  দৃশ্য বদলায় না; বিয়াসের পাশে গড়ে ওঠে ঘরবাড়ি; আপেল বাগান কেটে হোটেল ওঠে--- তার মধ্যে সামনের পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকে---অনন্তকাল ধরে।
পরদিন যাবার কথা সোলাং ভ্যালীতে (চলবে)।